ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে গত ২২ এপ্রিল ঐশান্যা দ্বিবেদীর চোখের সামনেই তার স্বামীকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনার কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি। কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ধরে আসছিল তার।

বাড়িভর্তি মানুষের মধ্যে এক কোণে চুপচাপ বসে ছিলেন ঐশান্যা। তার মতোই অবস্থা পরিবারের অন্য সদস্যদের। একমাত্র ছেলে শুভম দ্বিবেদীকে হারিয়েছে এই পরিবার। তারা উত্তর প্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা।

শুভমের স্ত্রী ২৯ বছর বয়সি ঐশান্যা বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলছিলেন, আমাদের দেশ, আমাদের সরকার আমাদের ওখানে (পহেলগাঁওয়ে) অনাথের মতো ছেড়ে দিয়েছিল। যাদের ওপর ভরসা করে আমরা ওখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম, তারা সেই সময় ওখানে উপস্থিত ছিল না। 

হামলার সময়কার নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ঐশান্যা বলেন, কোনো নিরাপত্তারক্ষী ছিল না, কোনো জওয়ান ছিল না। ঘরের ভেতরে বাবা-মা আমাদের রক্ষা করতে পারেন। কিন্তু ঘরের বাইরে আমাদের রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের।

সেলফের ওপর রাখা প্রয়াত স্বামীর ছবির দিকে তাকিয়ে ঐশান্যার গলা ধরে আসে। তিনি বলছিলেন, আমার নিজের চোখের সামনে আমার ভালোবাসা, আমার স্বামী, আমার পৃথিবীকে শেষ হয়ে যেতে দেখেছি। কাউকে যেন এমন দিন না দেখতে হয়।

তারপর সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে ঐশান্যা দ্বিবেদী বলেন, এই দেশের ভুলের কারণে, সরকারের ব্যর্থতার জন্য আমার স্বামী শহিদ হয়েছেন। তাই শুভমকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হোক।

ঐশান্যা বলতে থাকেন, আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, প্রথম গুলিটা শুভমের লেগেছিল। তাই সেই সময় উপস্থিত অনেকে ওখান থেকে পালানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। যারা সেখান থেকে নিরাপদে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন, যারা বলতে পারছেন আমরা বেঁচে গেছি, সেটা একমাত্র শুভমের জন্যই সম্ভব হয়েছে।

দেশের সব নাগরিকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ঐশান্যা, যাতে তার প্রয়াত স্বামীকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কথায়, শুভমের জন্য অনেক জীবন রক্ষা পেয়েছে। তাই তাকে শহিদের মর্যাদা দেওয়ার এই দাবিতে সবাই যাতে আমাদের পাশে দাঁড়ান, সেই অনুরোধ জানাচ্ছি। শুভম শহিদের মর্যাদা না পেলে ওকে কিছুদিনের মধ্যেই সবাই ভুলে যাবে।

শুভমের বাবা সঞ্জয় কুমার দ্বিবেদী বিবিসিকে বলেন, আমাদের ছেলে ঘুরতে খুব ভালোবাসত। বিশ্বের বহু দেশ ঘুরেছে। সব জায়গা থেকেই নিরাপদে ঘরে ফিরে এসেছে। এটা তো আমাদের দেশ ছিল। নিজের দেশেই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।

দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন সঞ্জয় কুমার।

শুভম দ্বিবেদীর মা অন্য একটা ঘরে একা বসেছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি।

ছেলের মৃত্যুর পর থেকে সঞ্জয় কুমার দ্বিবেদীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। কারও সঙ্গেই খুব একটা কথা বলেন না তিনি।

তিন–চার বছর আগে বাবার সিমেন্টের ব্যবসার পুরো দায়িত্ব নিয়েছিলেন শুভম। তিনি এমবিএ করেছেন। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিয়েও করেছিলেন ঐশান্যাকে। মধ্যপ্রদেশের ওরছায় ‘ডেসটিনেশন ওয়েডিং’ করেন তারা।

একটা ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটে শুভমের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ঐশান্যার। প্রথম দেখা হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর।

সেই দিনের কথা স্মরণ করে ঐশান্যা দ্বিবেদী বলেন, গত ছয়-সাত মাসে শুভম আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে। সেই সব স্মৃতি আঁকড়ে আমি আমার বাকি জীবনটা এই বাড়িতেই কাটিয়ে দেব।

ঐশান্যা জানান, শুভম দ্বিবেদীর পছন্দের খাবারের তালিকায় ছিল ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’।

গত ১৭ এপ্রিল প্রথম পুরো পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফেরার কথা ছিল ২৩ এপ্রিল।

ফিরে আসার আগের দিন, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে ঘুরতে যান তারা। যেদিন শুভম দ্বিবেদীকে হত্যা করা হয়, সেদিনই ছিল কাশ্মীরে দ্বিবেদী পরিবারের শেষ দিন।

ভ্রমণের প্রস্তুতির কথা মনে করে তার স্ত্রী বলেছেন, বিয়ের পর শুভম এক বছরে দুটি ফ্যামিলি ট্রিপ (পারিবারিক ভ্রমণের) পরিকল্পনা করেছিল। এটাই ছিল আমাদের প্রথম পারিবারিক ভ্রমণ।

ঐশান্যা বলেন, কোথায় বেড়াতে যাওয়া হবে, সেটা ঠিক করতে সবার ভোট নেওয়া হয়েছিল। সবাই মিলে কাশ্মীরকে বেছে নিয়েছিলাম। আমরা জানতাম না, কাশ্মীর আমাদের জন্য এতটা ভয়ংকর হয়ে উঠবে।

নিহত শুভমের স্ত্রী বলেন, সরকার তো বলে কাশ্মীর এখন নিরাপদ। সেখানে ৩৭০ ধারা বিলোপ করা হয়েছে। কোনোরকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই আমরা সেখানে গিয়েছিলাম। জানতাম না যে আমাদের পৃথিবী সেখানে শেষ হয়ে যাবে। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews