অনেক দিন পর দেশের ফুটবলে আলোর উঁকি-ঝুকি। ভুটান ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ ঘিরে ফুটবলামোদীর উম্মাদনা, টিকিট নিয়ে হাহাকার, ম্যাচের ৫ ঘন্টা আগে দর্শকে গ্যালারি ভরে যাওয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই খেলা নিয়ে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। লম্বা একটা সময় পর (৫৫ মাস) ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ফুটবল ফেরার মুহূর্ত আরো স্মরণীয় হতে পারতো যদি সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি জিততে পারতো হামজা-শামিতের বাংলাদেশ।

ভুটানের বিপক্ষে সহজে জিতলেও বাংলাদেশ লড়াই করে হেরেছে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী সিঙ্গাপুরের কাছে। এই ম্যাচটি জিতলে বাংলাদেশ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকতো। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের পর কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার মুন্ডুপাত শুরু হয়েছে। সাবেক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচ, ফুটবলবোদ্ধাররা ক্যাবরেরাকে আর না রাখার পক্ষে। শনিবার তো বাফুফের সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহিন ভরা মজলিসে কোচের পদত্যাগ দাবি করেছেন।

তবে কোচের বিপক্ষে এভাবে বলাটা ঠিক মনে করছেন না জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার শেখ মোহাম্মদ আসলাম। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘কোচের বিপক্ষে সরাসরি অভিযোগ তোলা ঠিক হয়নি। তিনি কিন্তু দীর্ঘদিন সার্ভিস দিচ্ছেন। একটা বিষয় বুঝতে হবে, দলে কিছু নতুন ফুটবলার যোগ হয়েছেন। হামজা-শামিতদের সাথে অন্যদের বোঝাপড়ার বিষয় আছে। আরো সময় দিতে হবে।'

জিততে না পারার অন্যতম কারণ হচ্ছে গোল করতে না পারা। আর গোল করতে হলে স্ট্রাইকার লাগবে। সেই জায়গায় বড় ঘাটতি বাংলাদেশ দলে। শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, '১৬ বছর ধরে আমরা দেখছি ক্লাবগুলো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য বিদেশি স্ট্রাইকার আনে। আমাদের স্ট্রাইকাররা খেলার সুযোগই পান না। আমাদের সময় একটা ক্লাব তিনজন বিদেশি নিতো পারতো, খেলতে পারতেন ২ জন। এখন কোটা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এসব নিয়ে গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে।'

ঢাকা স্টেডিয়ামে ভরা গ্যালারি দেখে বেজায় খুশি শেখ মোহাম্মদ আসলাম। তবে খেলা দেখার জন্য বাফুফে থেকে কোনো সমাদর না পাওয়ায় হতাশ বাফুফেরই এক সময়ের এই সদস্য। তিনি নিজ জেলা খুলনায় গিয়ে টিভিতে খেলা দেখেছেন।

'আমরা এমন ভরা গ্যালারির সামনে খেলতাম। আমরা যখন ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করে কিংবা জাতীয় দলকে জিতিয়ে জেলায় গেলে ব্যাপক সংবর্ধনা পেতাম। এবার যে ম্যাচ ঘিরে উম্মাদনা তৈরি হয়েছিল তার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল প্রচার -প্রচারণায় এগিয়ে থাকা। হামজা ও শামিতের মতো ফুটবলার আসার জন্যই প্রচারণাটা বেড়েছিল। বাংলাদেশি ফুটবল আলট্রাসও গ্যালারি জমিয়ে রেখেছিল'- বলেছেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম।

মাঝে দেশের ফুটবল ঝিমিয়ে পড়েছিল। দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। এই দুই ম্যাচ ঘিরে যে উম্মাচনা ফিরে এলো সেটাকে তো পূঁজি করা উচিত বাফুফের। কি করলে দর্শকদের এই উম্মাদনা ধরে রাখা সম্ভব। খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা, সংগঠক হিসেবে অভিজ্ঞতার আলোকে আপনি কি সুপারিশ করবেন?

'আমি প্রথমেই বলবো এই উম্মাদনা ধরে রাখতে হবে। এখানে উম্মাদনার বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে অন্য দেশে খেলা আমাদের দেশের ফুটবলাররা খেলেছেন বলে। হামজা-শামিতের জেলা এবং গ্রাম থেকেও এই ম্যাচ দেখতে এসেছেন। যদি এমন তারকা বিভিন্ন জেলার থাকেন তাহলে সেখান থেকে কিন্তু ম্যাচ দেখতে আসবে। তাই জেলায় তারকা তৈরি করতে হবে'- বলেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম।

ফুটবলে জোয়ার ধরে রাখতে যে কাজগুলো করা উচিত বলে মনে করেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। 'আমি জেলার ফুটবল থেকে উঠে এসেছি। রুমী রিজভী করীম, মামুন জোয়ারদার, আশীষ ভদ্রসহ অনেক তারকা ফুটবলার উঠে এসেছিলেন জেলা থেকে। তাই প্রথমত জেলার ফুটবলে গুরুত্ব দিতে হবে। জরুরিভিত্তিতে জেলা লিগ আয়োজন করতে হবে। শের-ই বাংলা কাপ, সোহরাওয়ার্দী কাপ যখন হতো তখন খেলোয়াড় নিয়ে টানাটানি হতো। এক কথায় যুদ্ধ লেগে যেতো। জেলায় জেলায় তারকা ফুটবলার থাকলে তাকে নিয়ে নিজ জেলায় উম্মাদনা তৈরি হবে। দেখুন জেলায় জেলায় ফুটবলের উম্মাদনা তৈরি হলে সেই উম্মাদনার ঢেউ লাগবে কেন্দ্রে গিয়ে। তখন বাংলাদেশ লিগ এবং জাতীয় দলের ম্যাচে দর্শক বাড়বেই। গ্যালারিতে জায়গা দিতে পারবে না'- বলেছেন আসলাম।

আপনাদের সময়তো এক খেলোয়াড় দুই লিগেও খেলতে পারতেন। পেশাদার যুগ শুরুর পরে সেই নিয়ম নেই। তাতে কি আকর্ষণ কমেছে বলে মনে করেন? শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, 'আগে আপনি জেলার লিগ চালু করেন। জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ চালু করেন। তখন যে ভালো মানের ফুটবলার বেরিয়ে আসবে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন কোন লিগে খেলবেন। খেলার ক্ষেত্র যত বাড়বে খেলোয়াড় ততো বাড়বে। আর খেলোয়াড় বাড়লে মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ও বেশি পাবেন। যদি ১০ জেলা থেকে ১০ ফুটবলার উঠে এসে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারেন ওই ফুটবলার যেখানেই খেলুক তার জেলা থেকে দর্শক আসবে মাঠে।'

ফুটবলের উম্মাদনা আবার আগের জায়গায় নিতে হলে আগের মতো ফুটবল জেলায় ছড়িয়ে দিতে হবে। রাজধানীতে বন্দী করে ফুটবলের উম্মাদনা ধরে রাখা যাবে না। আসলাম তাই ফুটবলের বিকেন্দ্রীয়করণেই বেশি জোর দিয়েছেন।

আরআই/আইএইচএস



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews