সবশেষ তিন মাস ধরে বেতন পান না তারা। দীর্ঘদিন চাকরি করলে পায়নি স্থায়ী কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা। অনিশ্চয়তা আর অবহেলার মাঝে দিন পার করছেন তারা। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানা কোম্পানি লিমিটেডের (এএফসিসিএল) ৭৩ চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীর কথা।
অনিশ্চয়তা থাকা এসব শ্রমিকদের অনেকেই দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কারখানাটিতে কাজ করছেন। কিন্তু, সামান্য স্বীকৃতি পাননি তারা। আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও বেতন-ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব শ্রমিকেরা।
জানা গেছে, কারখানার বিভিন্ন বিভাগে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২৬৩ জন শ্রমিক। এদের মধ্যে ৭৩ জন শ্রমিক আদালতের মাধ্যমে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানিয়ে ২০২২ সালে শ্রম আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চলতি শুনানিকালীন সময় তাদের চাকরির ‘স্থিতাবস্থা’ বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। পরবর্তীতে হাইকোর্টও শ্রমিকদের পক্ষে রায় দিয়ে তাদের চাকরি ও পূর্ববর্তী সুবিধাগুলো বহাল রাখার নির্দেশ দেয়।
তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, আদালতের এ নির্দেশনা বোর্ড অব ডিরেক্টরসকে না জানিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগের চেষ্টা চালায়। তবে, বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে কারখানার বোর্ড।
২০২৪ সালের ১ মার্চে দেওয়া কার্যাদেশে উল্লেখ ছিল, শ্রমিকদের বেতন কোম্পানি সরাসরি পরিশোধ করবে, ঠিকাদার কেবল কমিশন পাবে। কিন্তু, অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন আদেশে ঠিকাদারকেই পুরো বেতন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ঠিকাদারের মাধ্যমে বেতন নিতে অস্বীকৃতি জানান শ্রমিকরা। এর ফলে তারা তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এসব শ্রমিকের অনেকে প্রতিবছর কুরবানি দিলেও সবশেষ ঈদুল আজহায় দিতে পারেননি। ঈদেও আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত ছিল।
কারখানা কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা বোর্ড অব ডিরেক্টরসকে না জানানোর জন্য তৎকালীন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছে। কার্যাদেশের শর্ত পরিবর্তনের বিষয়টিকে ছাপার ভুল বলে জানায় কারখানার প্রশাসন বিভাগ। কারখানা কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, মাঝখানে কয়েক বছর এসব কর্মীদেও বেতন ভাতা স্ব স্ব হিসাবে কর্তৃপক্ষ প্রদান করলেও শুরু থেকেই এসব আউটসোর্সিং শ্রমিকের বেতন-ভাতা ঠিকাদারের মাধ্যমে প্রদান করা হতো। বর্তমানে তাই হচ্ছে।
২০০২ সাল থেকে কসার কারখানার বিক্রয় বিভাগে কাজ করছেন আল আমিন। কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার স্থায়ী হওয়ার জন্য আবেদন নিবেদন করেও কোনো ফল পাননি তিনি। বাধ্য হয়ে দারস্থ হন আদালতের। তিনি বলেন, ‘আদালতের যাওয়ার জন্যই আমার বেতন বন্ধ। জীবনে এবারই প্রথম কুরবানি দিতে পারি নাই। ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকাতেও কষ্ট হয়।’
১৯৮৭ সাল থেকে কারখানার উৎপাদন বিভাগে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত মো. রফিকুল ইসলাম । দীর্ঘ সময়েও তার চাকরি স্থায়ী হয়নি। তার দুই ছেলে-মেয়ে চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বেতন না পেয়ে ছেলে-মেয়ের নুন্যতম চাহিদাও মেটাতে পারিনি। মানসিক কষ্টে ভুগছি।’
একই কথা জানান খুরশেদ, উজ্জল সুত্রধর , সুমন মিয়াসহ অনেক অস্থায়ী শ্রমিক।
প্রিন্টিং ভুলের জন্য কার্যাদেশ পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে কারখানার প্রশাসন বিভাগের প্রধান ডিজিএম মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ভুইয়া বলেন, ‘এসব শ্রমিক আগেও ঠিকাদারের মাধ্যমে বেতন পেত।’ কেন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বোর্ড অব ডিরেক্টরসকে অবহিত করা হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি তৎকালীন কর্তৃপক্ষ জানেন।’
এ ব্যাপারে কারখানার এমডি প্রদীপ কুমার নাথ বলেন, ‘এসব শ্রমিকের বেতন-ভাতা ঠিকাদারের মাধ্যমে দেওয়া হয়। ঠিকাদারের কাছে তাদের বেতন-ভাতার চেক দেওয়া হয়েছে। বেতন পাচ্ছেন না কথাটি সঠিক নয়।’