১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের নীতিনির্ধারক ড. সেলিম জাহান ঢাকায় এলে আমি তাঁর কাছে এই ‘মিরাকল’ শব্দের ব্যাখ্যা চাই। তিনি বললেন, ‘এখানে মিরাকল দেখলে কোথায়? সবটাই তো তাদের কর্মের সুফল।’ আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে তাঁর ছাত্র হিসেবে যেভাবে শিখেছি, সেভাবেই তিনি শেখালেন যে এই চার বাঘের কতগুলো ‘কমন’ কৌশল ছিল। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও সুশাসন নিশ্চিত করেই এরা বাঘ হয়েছে।
সম্প্রতি বেশ কিছু টিভি প্রতিবেদন দেখেছি। একটিতে দেখলাম বলা হচ্ছে, এই সরকারপ্রধান নাকি অর্থনীতির ম্যাজিক শুরু করেছেন। তাতে অর্থনীতির সব কটি সূচক নাকি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের ‘আশার বাতিঘর’ হবে বাংলাদেশ। কেউ বলেছেন, ম্যাজিক নাকি টর্নেডোর আকার ধারণ করেছে। ফলে কমে গেছে বিদেশমুখিতা, মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব।
এক প্রতিবেদনে সাবেক একজন ডাকসু নেতা মন্তব্য করেছেন, এই সরকারপ্রধান নাকি ম্যাজিকের মতো কাজ করছেন। একজন শুভানুধ্যায়ী একটি টিভি প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ পাঠিয়েছেন, যেখানে গভর্নর বলেছেন যে বাংলাদেশের নাকি আইএমএফের ঋণের আর প্রয়োজন নেই। এটি কি ‘আঙুর ফল টক’, নাকি সত্যিই রিজার্ভ উপচে পড়ছে, তা বুঝলাম না। এতগুলো বিস্ময়কর সংবাদ শুনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম, ‘বাংলাদেশের কোথাও কি স্বর্ণখনি পাওয়া গেল, যার খবর আমি রাখিনি?’
অবশেষে কোথাও স্বর্ণখনির সন্ধান না পেয়ে বুঝে নিলাম, এ হচ্ছে সরকারের তুষ্টিসাধক কিছু সংবাদমাধ্যমের পুরোনো অভ্যাস—নতুন বোতলে পুরোনো শুরার জোগান দেওয়ার কসরত। আওয়ামী আমলে এদের জোগান অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এখন ভিন্নরূপে এদের উত্থান কেন হচ্ছে। অর্থনীতিতে বায়বীয় কথাবার্তা বিপজ্জনক।
গণিত, পরিসংখ্যান ও সঠিক পর্যবেক্ষণ অর্থনীতিকে পাহারা দেয়। সেগুলো থেকে কোনো ম্যাজিক বা বিস্ময়কর কিছু পাওয়া তো দূরের কথা, স্বাভাবিক সাফল্যেরও সংবাদ পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সরকারের তথ্য বিভাগ সবকিছুকে ‘ব্রিলিয়ান্ট’ বললেও আইএমএফ বা বিশ্বব্যাংক এতে বিগলিত হতে পারছে না। বরং অনেক বিষয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।