গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ফুটানীর বাজার পাওয়ার হাউস মাঠে মাসব্যাপী হস্ত কুটির শিল্প ও পাট বস্ত্র মেলার নামে লটারির ফাঁদ পাতা হয়েছে।
সরকারি নিয়মে মেলা চলার কথা থাকলেও মেলা জমানো এবং অধিক টিকেট বিক্রি করতে বিভিন্ন ক্লাবের নায়ক-নায়িকাদের দিয়ে হিন্দি গানের আসর জমিয়েছেন মেলা কর্তৃপক্ষ। মোটরসাইকেলসহ শতাধিক পুরস্কারের লোভে এলাকার মানুষরা টিকিট সংগ্রহ করতে ভিড় করছে। এতে আশপাশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে জানা যায়, উপজেলার ফুটানীর বাজার পাওয়ার হাউস মাঠে মাসব্যাপী মেলা চলছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি জমকালো আয়েজনের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করা হয়। ঈদের ঘরমুখী মানুষের পকেট ফাঁকা করার টার্গেট করে ‘জে বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামের একটি লাইসেন্সের মাধ্যমে মেলাটি কৌশলে পরিচালনা করছেন যশোর জেলার যুবক জাহাঙ্গীর আলম। এই কারণে গত ঈদের আগে রোজার দিনে ঢোলসানাই বাজিয়ে মেলা চালু করেন। লটারির ফাঁদে ফেলে ঈদের সময় ঘরমুখী মানুষের টাকা লুটে নেয়ার অভিযোগে সাঘাটা থানার পুলিশ মেলাটি বন্ধ করে দেয়।
মেলা কমিটি এবারো কৌশলে ঈদকে টার্গেট করে এক মাসের হস্ত কুটির শিল্প ও পাট বস্ত্র মেলার অনুমতি নিয়ে গত ২৩ মে (শুক্রবার) দিবাগত রাতে বিভিন্ন ক্লাবের নায়ক-নায়িকাদের দিয়ে হিন্দি ও বাংলা গান পরিবেশন করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করা হয়। এ সময় ২০ টাকা প্রবেশ টিকিটের মাধ্যমে দর্শকদের এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়।
বোনারপাড়া এম ইউ আলিম মাদরাসার শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমি ছেলেবেলা থেকে দেখি এই এলাকার কেউ মারা গেলে বোনারপাড়া রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ফুটানীর বাজার পাওয়ার হাউস মাঠে নামাজের জানাজা করা হতো। এখানে শত শত মানুষের জানাজার নামাজ পড়েছি। ২০ গজ পাশে একটা সরকারি কবরস্থান রয়েছে। কিছু দিন আগেও একজন মারা গেছে এই মাঠে জানাজা পড়াতে পারিনি। আমাকেও একদিন মরতে হবে আমি আল্লাহর কাছে কী জবাব দিব। এই মেলা চলুক আমরা বাধা দিব না তবে মেলার নামে টিকেট বিক্রি ও নাচ-গান বন্ধ করতে হবে।’
বোনারপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী কবিতা আক্তার জানান, ‘সামনের মাসের ২৬ তারিখ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে মেলার নামে নাচ-গান কাম্য নয়। রাতে উচ্চস্বরে মাইক বাজানোর কারণে আমরা লেখাপড়া করতে পারি না।
বোনারপাড়া বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, এই মেলার যা মালামাল বিক্রি হয় তা যদি সারা বছর ধরে বিক্রি করে তবুও আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু লটারির কারণে আমার ছেলে মেয়েরা প্রতিদিন আমার কাছ থেকে টাকা চায়। তাছাড়া রাতে তখন উচ্চস্বরে মাইক বাজে তখন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার মনোযোগ নষ্ট হয়।
এ বিষয়ে মেলার পরিচালক জাহাঙ্গীরের সাথে মোবাইলফোনে যোগাযোগ হলে তিনি বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী সকল প্রক্রিয়া সেরে পুলিশ প্রতিবেদন, ইউএনও প্রতিবেদন ও ডিসি মহোদয়ের পারমিশন নিয়ে মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মেলাতে লটারি নেই, প্রবেশ টিকিটের মূল্য আছে।’
এ বিষয়ে সাঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: বাদশা আলমের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
সাঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মোহাম্মদ আল কামাহ তমাল জানান, ‘মেলার অনুমতি দেয়া আছে। কিন্তু মেলার বিষয় নিয়ে যে অভিযোগ পেয়েছি তা নিয়ে মেলার মালিককে সতর্ক করে দিয়েছি। পরবর্তীতে আইন অমান্য করে কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নেয়া হবে।’
