টটেনহ্যাম হটস্পার ইংল্যান্ডের প্রথাগত ‘বিগ সিক্স’ ক্লাবের অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে শিরোপা ছুঁয়ে দেখতে না পারলেও নিয়মিত টপ ফোরে থাকা, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় খেলা এবং আর্থিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হওয়ার সুবাদে তাদের বিগ সিক্সের অংশ হওয়া। কিন্তু চলতি মৌসুমে এই ক্লাবটি প্রিমিয়ার লিগে একেবারেই হালে পানি পায়নি। ৩৭ ম্যাচ শেষে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ১৭ নম্বরে ধুঁকছে তারা। যদি মৌসুম শেষে ১৭-তেই থাকে, তবে এটি হবে গত ৫০ বছরের মধ্যে টটেনহ্যামের সবচেয়ে বাজে লিগ মৌসুম।
কিন্তু এমন হতশ্রী মৌসুমের শেষবেলায় এসে টটেনহ্যাম একটা কাণ্ড ঘটিয়ে বসেছে। ইউরোপের অন্যতম সম্মানজনক প্রতিযোগিতা ইউরোপা লিগের শিরোপা জয় করেছে লিলিহোয়াইটরা। বাংলাদেশ সময় বুধবার দিবাগত রাতে স্পেনের বিলবাওয়ে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৭ বছর পর কোনো শিরোপা ছুঁয়ে দেখেছে দলটি। একইসঙ্গে ঘুচেছে ইউরোপে তাদের ৪১ বছরের শিরোপা খরা।
২০১৮-১৯ মৌসুমে টটেনহ্যাম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেছে। এর আগে-পরে বেশ কয়েকটি ঘরোয়া কাপ ফাইনালেও অংশ নিয়েছে। কিন্তু শিরোপা তাদের ধরা দেয়নি। এই শিরোপাখরা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বছরের পর বছর ট্রল হয়েছে ক্লাবটি।
টটেনহ্যাম যে কখনো আবার ট্রফি জিততে পারে–এই বিশ্বাসই হারাতে বসেছিলেন ভক্তরা। তবে তাদের জন্য শেষ পর্যন্ত ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এক অস্ট্রেলিয়ান–অ্যাঞ্জ পস্তেকগলু। ‘সিরিয়াল উইনার’ হিসেবে পরিচিত জোসে মরিনিও, আন্তোনিও কন্তেরা টটেনহ্যামকে নিয়ে যা করতে পারেননি–সে কাজটাই করে দেখিয়েছেন অ্যাঞ্জ।
২০২৩ সালে টটেনহ্যামে যোগ দেওয়া এই অস্ট্রেলিয়ান কোচ চলতি মৌসুম শুরুর আগেই বলে দিয়েছিলেন, ‘আমি সাধারণত (কোনো ক্লাবে) আমার দ্বিতীয় মৌসুমে কিছু না কিছু জিতি।’ তখন তার এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক হাস্যরস হয়, কারণ তিনি এমন একটি ক্লাবের দায়িত্বে রয়েছেন–যারা ‘ট্রফি জেতে না’।
মৌসুম শুরুর কিছু সময় পরই খেই হারায় টটেনহ্যাম। খেলোয়াড়দের একের পর এক চোটে জর্জরিত ক্লাবটির ফর্ম তলানিতে চলে যায়। গেল বছরের নভেম্বরে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের কাছে ০-১ গোলে হারের পর তাকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কি এখনো ‘নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে ট্রফি জেতার’ ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী? জবাবে পস্তেকগলু নিজের আগের কথাটাই আরও দৃঢ়তার সঙ্গে উচ্চারণ করেন, ‘আমি সবসময় আমার দ্বিতীয় মৌসুমে ট্রফি জয় করি।’
মৌসুম যত সামনে এগিয়েছে, টটেনহ্যামের ফর্ম ততটাই তলানির দিকে এগিয়েছে। টটেনহ্যাম যখন ইউরোপা লিগের ফাইনালে মাঠে নামে, তখন দলটি প্রিমিয়ার লিগে ৩৭ ম্যাচ শেষে ১৭ নম্বরে তথা অবনমন অঞ্চলের ঠিক ওপরের স্থানটিতে ঠাঁই পেয়েছে। নিন্দুকেরা প্রস্তুত ছিলেন, ম্যান ইউনাইটেডের কাছে ফাইনালে টটেনহ্যাম হেরে গেলেই অ্যাঞ্জকে নিশানা বানাবেন। ‘দ্বিতীয় মৌসুমে নিশ্চিত ট্রফি জেতার’ প্রতিশ্রুতি না রাখতে পারলেই হাসির পাত্রে পরিণত হবেন এই অস্ট্রেলিয়ান। ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী পত্রিকা ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের টটেনহ্যাম প্রতিবেদক ড্যান কিলপ্যাট্রিক লিখেছেন, ইউরোপা লিগ ফাইনালের পর অ্যাঞ্জ ‘হয় হিরো নয়ত জোকার’-এ পরিণত হবেন।
শেষপর্যন্ত অ্যাঞ্জ ‘হিরো’-ই হয়েছেন। ফাইনাল জয়ের পর টটেনহ্যাম সামাজিক মাধ্যমে অ্যাঞ্জের ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে ‘হিরো’ লিখে সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট এবং রুলস ফুটবল বেশি জনপ্রিয়। আমরা যে খেলাটিকে ফুটবল বলে চিনি, তারা সেটাকে সকার বলে। সেখানে এই খেলাটির জনপ্রিয়তা তুলনামূলকভাবে কম। সে দেশ থেকে উঠে এসে ফুটবল বিশ্বে এক অনন্য ইতিহাস-ই গড়লেন অ্যাঞ্জ। ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার বাইরের প্রথম ম্যানেজার হিসেবে জিতলেন ইউরোপিয়ান শিরোপা। এমন অর্জনকে রূপকথা না বললেই নয়!