সময়ের কণ্ঠস্বর ডেস্ক-‘মায়ের বেপরোয়া আচরণ ও জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে থাকায় নেশাগ্রস্থ হয়ে নায়ক সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন’- এমনটাই দাবীসালমান শাহ’র তৎকালীন শ্বশুর শফিকুল হক হীরার । একটি গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাতকারে হীরার এই দাবীকে ‘উদ্ভট ও হাস্যকর বক্তব্য’ বলেই দাবী করছেন প্রায় সকলেই।

পুরো সোশ্যাল মিডিয়ায় হীরাকে নিয়ে কটুক্তি হচ্ছে। সবাই ক্ষোভ জানাচ্ছেন তার প্রতি। সালমান শাহ’র মত একজন সফল ও জনপ্রিয় নায়ককে নিয়ে এমন হেয় মন্তব্য করায় অনেকে তাকে সরাসরি ‘পাগল’ আখ্যা দিচ্ছেন।

Loading...

জনপ্রিয়তা হারিয়েই আত্মহত্যা করেছেন সালমান শাহ, এমনটাই দাবি করেছেন প্রয়াত এ নায়কের সাবেক শ্বশুর শফিকুল হক হীরা। ফেসবুকে আপলোড করা এক ভিডিওতে এমন কথা বলতে শোনা যায় তাকে। আত্মহত্যার আগে সালমান শাহ নেশাগ্রস্ত ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।

নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র দাম্পত্য জীবনে অশান্তি ছিল বলে দাবী করেছেন শ্বশুর শফিকুল হক হীরা। বিভিন্ন নায়িকার সঙ্গে তার অভিনয় স্ত্রী সামিরা মেনে নিতেন না বলেও দাবী তার ।

এর আগে মঙ্গলবার সালমান শাহের শ্বশুর শফিকুল হক হীরা দাবি করেন , অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়েই আত্মহত্যা করেন সালমান শাহ।

সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীর ইন্ধনে আমেরিকা প্রবাসী রুবী উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার স্ত্রী লুসি ও মেয়ে সামিরাকে জড়িত করার চেষ্টা করছেন বলেও মন্তব্য করেন হীরা।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে আমেরিকা প্রবাসী রুবী যদি প্রমাণ করতে পারে আমার মেয়ে কিবা আমার পরিবার অথবা আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন এটার সাথে জড়িত আছে আমি এটা মেনে নেবো।’

তিনি আরো বলেন, ‘সালমান শাহ এর পজিশন কমে গেছিলো। এক নম্বার পজিশন থেকে যদি ৩, ৪ নম্বারে পজিশনে যাওয়ার কারণে সালমান এই আত্মহত্যা করে থাকতে পারে।’

শফিকুল হক হীরা বক্তব্যে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হচ্ছে-

১) সালমান শাহ ১৯৯৫ সালে এফ,ডি,সি কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।

২) ১৯৯৬ সালের দিকে সালমান শাহ’র অভিনয়ের মাপ কমে যাচ্ছিল।

৩) সালমান শাহ ফেনসিডিল ও হুইস্কি আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন।

৪) সালমান শাহ চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান করতেন না।

৫) তৎকালীন চলচ্চিত্র নায়কদের উপার্জন কম ছিল বিধায় তিনি সালমান শাহকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করতেন।

৬) সালমান শাহ মায়ের কাছ থেকে আলাদা হয়ে অন্য বাসায় থাকতেন।

৭) সালমান শাহ মৃত্যুর আগে একটি সুইসাইড নোট লিখে গিয়েছিলেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেটি খতিয়ে দেখেছেন যে সেটি সালমান শাহ’র হাতের লেখাই ছিল।

সালমান শাহ্‌র মৃত্যুর একুশ বছর পেরিয়ে গেলেও তার স্ত্রী সামিরা আজও মিডিয়ার মুখোমুখি হননি। কিন্তু কেন হচ্ছেন না? সামিরার এমন নিভৃতে থাকার বিষয়ে কথা বলেছেন সালমান শাহ্‌র শ্বশুর শফিকুল হক হীরা ।

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্যাপ্টেন শফিকুল হক হীরা বলেন, ‘সামিরা তো তার খালাদের সঙ্গে সিআইডির অফিসে গিয়েছিল। সেখানে তাকে ৫-৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাহলে কেন বলা হয় আমরা তাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলতে দিইনি?’

কিন্তু তাহলে সংবাদ মাধ্যমে কথা বলতে তার আপত্তি কিসের?

জবাবে হীরা বললেন, ‘এটা তার ব্যক্তিগত ইচ্ছে। তবে এখনও যদি কোনো আইনি সংস্থা থেকে তাকে ডাকা হয় তাহলে সে কথা বলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুই দুবার পোস্টমর্টেম করা হয়েছে— সেখানে তো হত্যার কিছু পাওয়া যায়নি। তাছাড়া যে রুবির ভিডিও নিয়ে এত আলোচনা সে তো তার প্রথম স্বামী ক্যাপ্টেন জামিলের ফাঁসি হবার পর থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দেখেন নাই ভিডিওতে সে কীরকম অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সামিরার এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সাংবাদিকদের জানান , ‘সামিরা আপু আসলে এসব নিয়ে কথা বলতে এখনও প্রস্তুত নন।’

কিন্তু এর ফলে তো তাকে নিয়ে উঠা প্রশ্নগুলোর কোনো সমাধান হবে না? ‘এটা আমরা তাকে বলেছিলাম যে একটা সংবাদ সম্মেলন করে তোমার বক্তব্য তুলে ধর। তাহলে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

শাবনূরের সঙ্গে সালমানের প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে ওই আত্মীয় বলেন, ‘সামিরা আপু আমাকে বলেছে, শাবনূরকে নিয়ে আমি কখনই বদারড ছিলাম না। কারণ শাবনূর যে ক্লাশ থেকে এসেছে সেরকম ক্লাশের একটা মেয়েকে সালমান বউ করে আনতো না কখনই।’

ডন-এর সাথে ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবি নিয়ে ওই আত্মীয় বলেন, ‘আমরা তখন খুব ছোট। পত্রিকায় খবর হয়েছে, ডন এর সাথে পালিয়ে গেলেন সামিরা। অথচ আমি আপুর সাথে বসা। আসলে আপুকে নিয়ে অনেক বেশি খবর প্রকাশিত যা সত্যি ছিল না। এ কারণে হয়ত তিনি দূরে থাকছেন।’

বর্তমান স্বামী মোস্তাকের সাথে পরকীয়ার ব্যাপারটি নিয়ে বলেন, ‘সামিরা তো বিয়েই করতে চায়নি। তিন বছর পরে আমরা দেখছি তাকে এক প্রকার জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। সালমান শাহ্‌ হত্যা মামলার কারণে সে তার বড় ছেলেকে দেশে পড়াতে পারেনি। সবাই ওই ছেলেকে বলত, তোমার মা একজন খুনী। তাই বাধ্য হয়ে তাকে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

ফ্ল্যাশ ব্যাক

শফিকুল হক হীরা এক সময় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিনি ১৯৭৯ ও ১৯৮২ সালে আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি একজন উইকেট কিপিং ছাড়াও ব্যাটিং ভালো করতেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যু হয় ১৯৯৬ সালে। সেই সময় থেকেই সালমানের পরিবারের দাবি- আত্মহত্যা নয়, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

তখন আত্মহত্যা হিসেবে দেখিয়ে পুলিশ অপমৃত্যুর মামলা নথিভুক্ত করলেও তাতে আপত্তি জানায় সালমান শাহর পরিবার। সালমানের বাবা কমরুদ্দীন আহমেদ হত্যার অভিযোগ তোলেন। কমরউদ্দিনের মৃত্যুর পর সালমানের মা নীলা চৌধুরী ওই মামলা চালাচ্ছেন।

পুত্রবধূ সামিরা হক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ, ১১ জনকে ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করে আদালতে আবেদন করেন নীলা চৌধুরী।

সেই আসামিদের একজন সালমান শাহর বিউটিশিয়ান রাবেয়া সুলতানা রুবি সালমানের মৃত্যুর বাইশ বছর পর সোমবার ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছিলেন সালমান শাহ এবং তা করিয়েছিলেন তারই স্ত্রী সামিরা ও তার পরিবার।’
এর পর আবারো আলোচনায় আসেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক।

চাঞ্চল্যকর এক তথ্য বেরিয়ে এলো এবার ! ১২ লাখ টাকার চুক্তিতে সালমান শাহ্‌কে হত্যা!

ফিরে দেখা

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকা-ের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

ঘটনাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ১৯৯৭ সালের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। পরে সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমর উদ্দিন রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত।

এরপর প্রায় ১২ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনেও সালমানের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এরপর ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের নারাজির আবেদন দাখিল করেন। আদালত নারাজির আবেদন গ্রহণ করে পুনঃতদন্তের জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews