বিএসএফ’র গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশি হতাহতের ঘটনা এখন নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কিছুদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীদের আহত নিহত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। গত বুধবার দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন নওগাঁর পোরশা সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে আল আমীন নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যু এবং লালমনিরহাট সীমান্তে একজন আহত হয়েছে বলে জানা যায়। পরে লালমনিরহাটের আহত ব্যক্তিও মারা গেছে। সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি বিজিবি-বিএসএফ’র কমান্ড পর্যায়ের একটি সমঝোতা বৈঠকে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করা এবং হত্যাকান্ড শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ইতিপূর্বে ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকেও সীমান্তে লিথ্যাল ওয়েপন ব্যবহার না করা এবং হত্যাকান্ড শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে একাধিকবার প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত করা হলেও কোনো প্রতিশ্রæতির বাস্তব প্রতিফলন দেখা যায়নি। দ্বিপাক্ষিক বন্ধুত্ব, সম্পর্কের অনন্য উচ্চতা দ্বিপাক্ষিক ক‚টনীতি এবং ক্ষমতাসীনদের ব্যবহৃত এসব বাক্য যেন শ্রেফ কথার কথা। বাস্তবে তা একপাক্ষিক এবং নৃসংশ হত্যাকান্ডে সব সময়ই রক্তাক্ত।

বিজিবি বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে ৫৪তম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হয় গত ৯ মার্চ। সম্মেলনে জানুয়ারিতে বিএসএফ’র গুলিতে একজন বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা কোনো টার্গেট কিলিং নয় বলে বিএসএফ’র সাফাইয়ের সাথে বিজিবি মহাপরিচালককেও সুর মেলাতে দেখা গেছে। অত:পর ভারত সীমান্তে আবারো নন-লিথ্যাল ওয়েপন ব্যবহার এবং মৃত্যুর হার শুন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রæতি দেয়। ছাব্বিশে মার্চ স্বাধীনতা দিবসে একাধিক সীমান্ত পয়েন্টে গুলি চালিয়ে বাংলাদেশিদের হতাহত করে প্রতিশ্রæতি বরখেলাফের ধারাবাহিকতা অনুসরণের দৃষ্টান্তই তুলে ধরেছে। ভারতের সাথে পাকিস্তান, মিয়ানমার, চীন, নেপাল, ভ‚টান প্রভৃতি দেশের সীমান্ত থাকলেও আর কোনো দেশের সীমান্তে এমন যথেচ্ছ গোলাগুলি ও হতাহতের ঘটনা খুব বিরল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএসএফ গুলি চালিয়ে বাংলাদেশিদের হত্যা করার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ অব্যাহতভাবে করে যাচ্ছে। ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতি এবং বিএসএফ’র ক্রমবর্ধমান প্রাণঘাতী হিং¯্রতার বিপরীতে বিজিবি’র শীতল নিস্ক্রিয়তা এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে হত্যাকান্ডের পক্ষে বিএসএফ’র সাথে অভিন্ন মতামত প্রকাশ সরকারের নতজানু ভারত নীতির প্রতিফলন। তা না হলে বিজিবি সদস্যসহ সীমান্তে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের পরও কেন বিজিবি’র পক্ষ থেকে কোনো জোরালো প্রতিবাদী ভ‚মিকা নিতে দেখা যায় না।

সীমান্তে চোরাচালান কোনো একপাক্ষিক ঘটনা নয়। দুই দেশের ব্যবসায়ী, নাগরিক ও সীমান্তরক্ষিদের যোগসাজশ ছাড়া তা অসম্ভব। চোরাচালান বন্ধে বিজিবি’র ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিএসএফ সদস্যরা সীমান্তরেখা পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে স্থানীয়দের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি এবং লুটতরাজে লিপ্ত হওয়ার মত ঘটনার খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। গত মাসে ফেনি সীমান্ত থেকে ২৩ বাংলাদেশিকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে ভারতের জেলে পাঠিয়েছে। বিজিবি’র গুলিতে বিএসএফ কিংবা ভারতীয় নাগরিক আটক কিংবা হতাহতের ঘটনা খুবই বিরল। গত বছর বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে ৩১জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। যদিও প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। সীমান্তে আমরা কোনো পক্ষেই অপ্রীতিকর তৎপরতাকে সমর্থন করিনা। সীমা লঙ্ঘন করে বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিক একপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশি হত্যাকাÐের পরও বিজিবি’র নিষ্ক্রীয়তা এবং সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীদের কণ্ঠে হত্যাকাÐের পক্ষে সাফাই গাওয়ার নানা রকম খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখে দেশের মানুষ হতাশ ও বিক্ষুব্ধ হয়। দেশের বিক্ষুব্ধ মানুষ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জন বা বয়কটের ডাক দিয়েছে, তখন সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি হত্যার ঘটনা অগ্নিতে ঘৃত সংযোগের মত ইন্ধন সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপিসহ দেশের বিরোধীদলগুলোও ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনকে সমর্থনের পাশাপাশি সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশি হত্যার বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ সব বাংলাদেশিকে সোচ্চার হওয়ার আহŸান জানিয়েছে। মানুষের জানমাল রক্ষা করা দেশের সরকার এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত কিংবা ব্যর্থতার সুযোগ নেই।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews