আর মাত্র ৬৯ রান। হলেই দীর্ঘ আইসিসি শিরোপার আক্ষেপটা যাবে ঘুচে। দক্ষিণ আফ্রিকা অবশেষে বুক চিতিয়ে বলতে পারবে, আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তাদের সামনে লক্ষ্যটা ২৮২ রানের। তৃতীয় দিন শেষেই তারা তুলে ফেলেছে ২১৩ রান। এতে এইডেন মার্করাম আর টেম্বা বাভুমার কীর্তিই সবচেয়ে বেশি। দুজন মিলে তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১৪৩ রানের জুটি গড়াতেই না প্রোটিয়ারা এমন স্বস্তির ঘুম ঘুমাতে পারছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের ‘ফাইনাল’ দিনের আগে!
কাগজে কলমে আরও দুটো দিন বাকি। তবে যে ম্যাচের যবনিকা পড়তে আর ৬৯ রান বাকি, সেই ম্যাচটা কাল পেরিয়ে পড়শুও পা রাখবে, এমন ভাবনা কষ্টকল্পনাই বটে। যদিও ইংলিশ সামারে এমন কিছু হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়, মেঘ আর রোদের ইঁদুর বিড়াল খেলায় মেঘ জিতে গেলেই তো…
নাহ, দক্ষিণ আফ্রিকা ওসব নিয়ে ভাবতেই চাইবে না। শুভ মুহরতে ওসব অলুক্ষুণে কথা কে ভাবতে যায়! পরিস্থিতিটা নিজেদের জন্য শুভ ভাবতেই পারে প্রোটিয়ারা। দিনশেষে ৬৫ রানে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা, কিন্তু তিনি বিদায় নিতে পারতেন সেই ২ রানের মাথায়। তার স্লিপে দেওয়া ক্যাচটা ফেলে স্টিভ স্মিথ ইংলিশ সামারের আকাশের চেয়েও কালো করে রেখেছিলেন মুখটা। কেন করেছিলেন, বাভুমা সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন দিনের বাকিটা সময়জুড়ে।
প্রথম ইনিংসে প্রয়োজনের চেয়েও যেন একটু বেশি ধীরগতির ছিল প্রোটিয়াদের ইনিংস। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে আজ সেটা করেনি দলটা। বাভুমা ধৈর্য্যের প্রতিমূর্তি হয়েই ছিলেন, তবে বাজে বলকে অযথা শ্রদ্ধা দেখানোর বিনয় আজ দেখাননি। মার্করামও রান তুলেছেন প্রয়োজনীয় গতিতেই। যার সম্মিলিত ফলাফল অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে দেড়শ ছুঁইছুঁই রান, দুই সেশনে ২১৩ রান।
মার্করাম ইতোমধ্যেই সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন। ১০২ রানে তিনি দিন শেষ করেছেন। তিনি যখন সেঞ্চুরিটা করছেন, ওপাশে নেচে উঠেছিলেন বাভুমাও, ছবিটা দেখলে মনে হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা বুঝি জিতেই গেল। প্রোটিয়া অধিনায়ক অপরাজিত ৬৫ রানে। চতুর্থ দিনে নিজের সেঞ্চুরি হয়তো চাইবেন, তবে তার চেয়ে বেশি করে চাইবেন দলের জয়।
তবে প্রোটিয়ারা তৃতীয় দিনের শেষেই এভাবে জয় থেকে ৬৯ রানের দূরত্বে চলে আসবে, সেটা দিনের শুরুতে কল্পনাও করা যায়নি। মিচেল স্টার্ক আর জশ হেইজেলউড মিলে সকালে আগুন ঝরালেন, কিন্তু তা বল হাতে নয়, ব্যাট হাতে।
হার-না-মানা ফিফটি নিয়ে স্টার্ক যখন ফিরছেন ইনিংস সর্বোচ্চ রান নিয়ে, তার আগে হেইজেলউডের সঙ্গে শেষ উইকেট জুটি যোগ করে ফেলেছে ৫৯ রান, দেড়শোর আশেপাশে গুটিয়ে যেতে বসা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হলো ২০৭ রানে। তাতেই মনে হচ্ছিল জয়ের জন্য যথেষ্টের চেয়েও বেশি পুঁজি বুঝি হয়ে গেছে অজিদের। সঙ্গে যোগ করুন শেষ উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বেহাত হয়ে যাওয়া মোমেন্টাম আর ফাইনালে রক্তের গন্ধ পেয়ে গেলে অস্ট্রেলিয়ার ‘উইনিং ইনস্টিংক্ট’কেও।
তবে সবকিছুকে একপাশে রেখে প্রোটিয়াদেরকে ইতিহাসের খুব কাছে নিয়ে গেছে এইডেন মার্করাম আর টেম্বা বাভুমার ব্যাট। শেষ দুই দিনে এখন সম্ভাব্য ১৮০ ওভার হাতে, ৮ উইকেট বাকি, দলের চাই ৬৯ রান। এই সমীকরণটা মিললেই লেখা হয়ে যাবে ইতিহাস। প্রোটিয়ারা হয়ে যাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। মার্করাম-বাভুমারা শেষ কাজটা সেরে আসতে পারবেন তো?
