ময়নাতদন্তের গুরুত্বপূর্ণ

৩৬ মেডিকেল কলেজে মাত্র ২৭ জন

নিউজ আপলোড : ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৯

image

দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চরম সঙ্কট চলছে। দেশের ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আছেন মাত্র ২৭ জন। যেকোন হত্যাকা- ও ধর্ষণের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ‘ফরেনসিক রিপোর্ট’ (ময়নাতদন্ত) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অনেক সময় এই রিপোর্টের ওপর নির্ভর করেই প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়। বিচার কার্যক্রম চলে। কিন্তু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সংকট থাকায় এ নিয়ে চরম ঝামেলা ও দুর্ভোগে পড়তে হয় বিচারপ্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।

সরকারি মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগগুলো ১৯৯০ সালের পর থেকে গত ২৯ বছর ধরে চরম অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজের ফরেনিক বিভাগে কমপক্ষে ৫ জন করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ থাকার কথা। এ হিসেবে ৩৬টি মেডিকেল কলেজে কমপক্ষে ১৮০জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দরকার। অথচ আছে মাত্র ২৭ জন বিশেষজ্ঞ। তা দিয়ে সারাদেশে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া হত্যাকা-, ধর্ষণ, বয়স ও লিঙ্গ নির্ণয় করা অসম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে জেলা পর্যায়ে যেখানে মেডিকেল কলেজ নেই সেখানে সাধারণ একজন এমবিবিএস চিকিৎসক দিয়ে ময়নাতদন্ত ও ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলার আলামতের পরীক্ষা করানো হয়।

বিশেষজ্ঞ সংকটের কারণে দেশজুড়ে আলোচিত অনেক হত্যাকা-ের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট নিয়ে জনমনে সন্দেহ, উদ্রেগ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এমনকি অনেক হত্যাকা- ময়নাতদন্তের ভুলের কারণে আত্মহত্যায় পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা অবহেলিত এ বিভাগটি উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায় বিচারব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। এছাড়াও ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে উচ্চতর প্রফেশনাল বিষয় পড়শোনা দিনদিন কমে যাচ্ছে। ফরেনসিক বিভাগের উন্নয়ন জরুরি। বিভিন্ন আদালতে গিয়ে সাক্ষী দেয়া নিয়ে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের পদে পদে ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নানা কারণে এ বিষয়ে ছাত্ররা উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চায় না। ফরেনসিক বিভাগে ১ থেকে ২ জন ছাত্র উচ্চতর কোর্সে ভর্তি হয়। প্রতি বছর ছাত্র সংখ্যা কমছে।

ফরেনসিক বিশেষষজ্ঞদের মতে, হত্যা, ধর্ষণ, বয়স ও লিঙ্গ নির্ণয় একমাত্র ফরেনসিক বিভাগই সমস্যার সমাধান করে। ন্যায়বিচারের জন্য ফরেনসিক বিভাগ খুবই দেশে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিভাগের রিপোর্ট আদালতে দেয়ার পর হত্যা ও ধর্ষণের মতো মামলার বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত হয়। আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বা ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে সঠিকভাবে না দিলে বিচার নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। অথচ দেশে এ বিভাগটি সবচেয়ে বেশি অবহেলিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাঞ্চল্যকর হত্যাকা-, বোমা বিষ্ফোরণে নিহত ও আহত হওয়ার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আলামত সংগ্রহ ও ময়নাতদন্ত করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে ক্লু উদ্ঘাটন সম্ভব হয় না। ফলে দেশের বিচার ব্যবস্থাপনায় ওপর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হত্যাকা-ের পর ঠিকমত ময়নাতদন্ত না হলে বিচার প্রার্থী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। সারাদেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে কোন কোন মেডিকেল কলেজে ১ জন থেকে ২ জন ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ আছে। আবার কোন মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নেই। জেলার অনেক জেনারেল হাসপাতালে একজন এমবিবিএস ডাক্তার (মেডিকেল অফিসার) দিয়ে ময়নাতদন্তসহ গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলো করা হয়। ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে আদালতে সাক্ষী দিতে হয় তাদের। তাদের মূল্যায়ন করা হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। আদালতে তাদের বসার জন্য কোন ব্যবস্থা নেই। অ্যাডভোকেটের রুমে গিয়ে বসলেও তাদের উঠে অন্যদের জায়গা করে দিতে হয়। আবার সাক্ষী দিতে এক বিভাগ বা জেলা থেকে আরেক বিভাগে যেতে যে টাকা খরচ হয় তাও দিতে ২ থেকে ৩ বছর ধরে গড়িমসি চলছে। তাই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞারা আাদালতে গিয়ে সাক্ষী থেকে রেহাই পেতে চান। সাক্ষীর কারণে তাদের একাডেমিক কাজসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অনেক সময় সাক্ষী দেয়া ও ময়নাতদন্ত করার কারণে তারা চেম্বারে বসতে পারে না। আর বসলে তাদের কাছে রোগীও অন্য বিশেষজ্ঞদের মতো যায় না। সিনিয়রদের কাছে নানা ধরনের ঝুঁকির কথা শুনে নতুন করে এমবিবিএস পাস করা ডাক্তাররা আর উচ্চপর্যায়ে এসে ফরেনসিক মেডিসিন বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট (উচ্চতর ডিগ্রি) করতে অনীহা রয়েছে। ফলে স্নাতকোত্তর কোর্স ১ থেকে ২ জন ছাত্র ভর্তিও হয় না।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ৩ জন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ২ জন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজে ২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে ৪ জন, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ১ জন, নোয়াখালী মেডিকেল কলেজে ১ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ১ জন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ১ জন। রংপুর, কক্সবাজার, বরিশাল এবং সিলেট মেডিকেল কলেজে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ নেই। পাবনা মেডিকেল কলেজে ১ জন, যশোর মেডিকেল কলেজে ১ জন, কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ১ জন, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ১ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজে ১ জন (চুক্তিভিত্তিক) মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে ১ জন, গাজীপুর মেডিকেল কলেজে ১ জন এবং টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজে ১ জন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ আছেন। এভাবে দেশের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেল কলেজে প্রায় ২৭ জন ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রয়েছে।

ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮টি থেকে ১০টি ময়নাতদন্ত হয়। এ হিসাবে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে গড়ে দিনে ১৫০টি ময়নাতদন্ত হয়। কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে। ৬৪ জেলায় প্রতিদিন সংঘটিত হত্যা, ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা, বয়স নির্ধারণী পরীক্ষা ও লিঙ্গ নির্ধারণী ও ডিএনএ টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ সংকটের কারণে অনেক পরীক্ষা গুরুত্ব দিয়ে করা যাচ্ছে না। জেলাগুলোতে আরও খারাপ অবস্থা। যেখানে বিশেষজ্ঞ নেই। একজন মেডিকেল অফিসার দিয়ে কোন মতে জোড়াতালি দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। বিশেষজ্ঞ না থাকলে পরীক্ষায় নানা ত্রুটি থাকে। অনেক রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয় না।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews