পবিত্র কোরআনের প্রথম শব্দ ‘ইকরা’। মানে পড়। যে পড়ে সেই বড় হয়। ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম পড়াকে এত গুরুত্ব দেয়নি। আল কোরআন ও হাদিস পড়াকে স্বতন্ত্র ইবাদত বলে উল্লেখ করেছে। কোনো কোনো ধর্ম পড়াকে পাপ মনে করত। ধর্মগুরুরা চাইতেন, জ্ঞান একটি শ্রেণির কাছে জমা থাকবে। যেন মূর্খদের ঠকিয়ে জ্ঞানীরা ব্যবসার পসরা সাজাতে পারেন। কিন্তু কোরআন ও নবী (সা.) শুরুতেই এ ধরনের ধর্মব্যবসার দোকানে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক। পড় তোমার প্রভুর নামে। যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘তালাবুল ইলমি ফারিদাতুন আলা কুল্লি মুসলিম। জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরজ।’ জ্ঞানীর মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হাল ইয়াসতা ওয়িল্লাজিনা ইয়ালামুনা ওয়াল্লাজিনা লা ইয়ালামুন। অর্থ : যারা জ্ঞানী আর যারা মূর্খ তারা কি কখনো সমান হতে পারে? না। পারে না।’ আরেকটি আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘ইয়ারফাউল্লা হুল্লাজিনা আমানু মিনকুম ওয়াল্লাজিনা উতুল ইলমা দারাজাত। আল্লাহ তাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছেন যারা বিশ্বাসী এবং জ্ঞানী।’ একজন জ্ঞানীর সম্মান কত? কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, জ্ঞানীর মর্যাদা বাড়ানো হয়েছে। কতটুকু বাড়িয়েছেন— এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নবী (সা.)। বলেছেন, ‘জ্ঞানীরা নবীর উত্তরসূরি।’ মিশকাত। একদিন নবী (সা.) সাহাবিদের ডেকে বললেন, ‘নবীরা কখনো কোনো সম্পদ রেখে যান না। তাদের সন্তান-পরিবার কোনো সম্পদের উত্তরসূরি হয় না। তবে হ্যাঁ! নবীরা রেখে যান জ্ঞানসম্পদের অট্টালিকা। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে যারা জ্ঞানের চর্চায় ব্রত হবে, তারাই আমার উত্তরাধিকার হবে।’ তাই তো হুজুর (সা.) প্রায়ই একটি উপদেশ দিতেন সাহাবি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উম্মতকে। তিনি বলতেন, ‘হে আমার উম্মত! জ্ঞান হলো তোমাদের হারানো সম্পদ। যেখানেই পাবে, তা কুড়িয়ে নেবে। জ্ঞানসম্পদ কুড়াতে যদি চীন দেশেও যেতে হয়, তবে তুমি চীনে যেতেও দ্বিধা করো না।’
শুধু জ্ঞানার্জনের নির্দেশ কিংবা জ্ঞানীকে সম্মান দিয়েই চুপ থাকেনি ইসলাম। জ্ঞান অন্বেষণকারীর প্রতি দিয়েছে বিশাল পুরস্কারের ঘোষণা। বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য ঘর থেকে বের হলো, সে যেন আল্লাহর রাস্তায়ই বের হলো। যতক্ষণ পর্যন্ত সে জ্ঞান অর্জনের জন্য দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করবে, আকাশের পাখি, বাগানের বৃক্ষ, সমুদ্রের মাছ তার জন্য দোয়া করবে। এই সফরে সে যদি কোনো দুর্ঘটনা বা রোগে-শোকে মারা যায়, তবে সে ধর্মযুদ্ধে নিহত শহীদের মর্যাদা পাবে।’ আবু দাউদ ও তিরমিজি। হজরত বারা ইবনে আজেব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেউ যদি এই নিয়তে দুটো কথা শেখে যে আমার এ কথা মানুষের উপকারে আসবে, তবে ষাট বছর নফল ইবাদত করলে যে সওয়াব হতো, এ দুই কথা শেখায় তার চেয়ে বেশি সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হবে।’ খতিব বাগদাদি। হে আমার দরদি পাঠক! জ্ঞান সম্পর্কে এত উৎসাহ সত্ত্বেও কেন যেন আমরা মুসলমান জ্ঞান থেকে পিছিয়ে পড়েছি। আসুন! আবার আমরা আমাদের হারানো সম্পদ-সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য জ্ঞান সাধনায় ঝাঁপিয়ে পড়ি। যারা জ্ঞান সাধনায় নিজেদের বিলিয়ে দেবে না, তাদের সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পবিত্র কোরআন। আল্লাহ বলেন, ওয়া মান কানা ফি হাজিহি আমা ফাহুয়া ফিল আখিরাতি আমা। ওয়া আদাল্লু সাবিলা। অর্থ : যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ থাকবে, হৃদয়ে জ্ঞানের বাতি জ্বালবে না, আখেরাতেও সে অন্ধ হয়ে জীবন পাবে। বরং সেখানে আরও বেশি বিপদে পড়তে হবে তাকে। আল্লাহ আমাদের জ্ঞানহীনতা থেকে রক্ষা করুন, সহি জ্ঞান দান করুন।
লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
www.selimazadi.com