ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
বস্তারের জঙ্গলে মোতায়েন এক নিরাপত্তারক্ষী।
Author,
সালমান রাভি
Role,
বিবিসি নিউজ, কাঁকের থেকে
৩০ মিনিট আগে
ভারতের ছত্তিশগড়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা কাঁকেরের পার্শ্ববর্তী বস্তারে লোকসভা নির্বাচন হয়েছিল গত ১৯শে এপ্রিল। ভারতে সেই প্রথম দফা ভোটের ঠিক আগে ১৬ই এপ্রিল কাঁকের জেলা সদর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে আপাটোলা-কালপার জঙ্গলে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ২৯জন মাওবাদী নিহত হয়।
এই ‘এনকাউন্টারকে’ বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে পুলিশ প্রশাসন।
অন্য দিকে, ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মাওবাদীরা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, "আমাদের কমরেডরা জঙ্গল এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের ঘিরে ফেলা হয় এবং মেরে ফেলা হয়।”
কাঁকেরের পুলিশ সুপার কল্যাণ আলেসেলা বিবিসি হিন্দিকে বলেন, "১৯শে এপ্রিল বস্তার লোকসভা আসনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। তার ঠিক আগে, ১৫ই এপ্রিল আমরা একটি বিশাল নকশাল স্কোয়াডের সমাবেশ সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাই।”
“এই অঞ্চলটা বস্তার এবং কাঁকের দুইয়েরই কাছাকাছি। সেখানে অনেক বড় ক্যাডার ও কমান্ডার ছিল, ৬০ থেকে ৭০ জন মাওবাদী ছিল। আমরা এলাকাটি ঘিরে ফেলি এবং একটা সংঘর্ষ হয়।”
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
কাঁকেরের পুলিশ সুপার কল্যাণ আলেসেলা।
নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে মাওবাদীদের তরফে জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "পুলিশের গুলিতে আমাদের ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং বাকি ১৭ জনকে আহত বা জীবিত আটক করে পুলিশ নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”
যদিও বস্তারের ডিভিশনাল আইজি সুন্দররাজ পি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, "মাওবাদীরা সহানুভূতি পাওয়ার জন্য এই ধরনের দাবি করছে। এটা তাদের প্রোপাগান্ডা।”
এই ঘটনায় নিহত মাওবাদী গেরিলার মধ্যে ছিলেন শঙ্কর রাও এবং তাঁর স্ত্রী রীতা। তারা মাওবাদীদের বিভাগীয় কমিটি পদমর্যাদার সদস্য ছিলেন।
ছবির উৎস, CHHATTISGARH POLICE
ছবির ক্যাপশান,
পুলিশ দাবি করছে এই অভিযানে মারা গেছেন শঙ্কর রাও নামের এক শীর্ষ মাওবাদী নেতা। তার এই ছবিটি ছত্তিশগড় পুলিশের দেওয়া।
শঙ্কর রাওকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৫ লক্ষ রুপি এবং তার স্ত্রী রীতাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ লক্ষ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
ভোটের আবহে কাঁকের এবং তার আশপাশের এলাকায় থমথমে পরিবেশ রয়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনীর সজাগ চোখ আর রাস্তার থমথমে পরিবেশ ভয় পাওয়াতে পারে। এবং এই আশঙ্কার কারণও রয়েছে।
গত ১৬ই এপ্রিলের ঘটনায় মাওবাদীদের বড় নেতাদের মৃত্যু হয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতে মাওবাদীরা হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পুলিশ প্রশাসন।
নকশাল শব্দটা এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ির ছোট্ট গ্রামের সূত্র ধরে যেখানে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা চারু মজুমদার এবং কানু সান্যাল ১৯৬৭ সালে সরকার ও সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন শুরু করেছিলেন।
২০০৬ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মাওবাদী সহিংসতাকে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি বলে বর্ণনা করার পর শুরু হয় ‘অপারেশন গ্রিন হান্ট’।
২০০৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম সংসদে জানান, দেশে মাওবাদী প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ২২৩। তবে তাদের প্রভাব মূলত দেশের দশটি রাজ্যের প্রায় ৭৫টি জেলায় বলে মনে করা হয়।
ইউপিএ সরকারের আমলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযান শুরু হয় যা এনডিএ সরকারের আমলেও গত দশ বছর যাবত অব্যাহত রয়েছে।
বস্তারের আইজিপি সুন্দররাজ বলেছেন, “গত সাড়ে তিন মাসে বস্তার ডিভিশনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৭৯ জন মাওবাদী নিহত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে মাওবাদীদেরও। এর ফলে তাদের ইকোসিস্টেমের ওপর প্রভাব পড়েছে।”
এর আগে ঘটা মাওবাদী হামলাগুলোর কথা ভেবে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে তারা (মাওবাদীরা) শক্তি প্রদর্শনের জন্য আক্রমণ করতে পারে।
উল্টোদিকে, নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা মাওবাদীদের অন্য একটি গোষ্ঠীকে নিশানা করতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
এ কারণেই রাস্তার থমথমে পরিবেশ আতঙ্কের মতো কাজ করছে।
১৬ই এপ্রিল যেখানে সংঘর্ষ ঘটেছিল বলে জানা গিয়েছে তার কাছেই ছোটে বেথিয়া গ্রাম। অপ্রীতিকর কিছুর ঘটে যাওয়ার আশঙ্কায় সেই গ্রামের কেউই ক্যামেরার সামনে কথা বলতে চান না।
দিনভর হাড়ভাঙা খাটুনির পরেও কীভাবে পরিবারের অন্নসংস্থান করবে সে চিন্তা তো রয়েইছে, উপরন্তু দশকের পর দশক ধরে মাওবাদী আর নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যাওয়ার ফলে গ্রামবাসীদের জীবনে দুর্ভোগ এবং দুর্দশা হয়ে উঠেছে স্থায়ী সঙ্গী।
ছোটে বেথিয়া গ্রামের মানুষেরা আপাতত এটা ভেবেই স্বস্তিতে রয়েছেন যে ১৬ তারিখের ঘটনায় কোনও গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়নি। তবে এই স্বস্তি কতদিন রইবে সে বিষয়ে নিশ্চিত নন তারা। কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী বা রাজ্য সরকার কেউই তাদের শান্তি বা স্বস্তির নিশ্চয়তা দিতে পারেনি।
এই এলাকার সাধারণ আদিবাসীদের পরিবারগুলো যে কোনওদিন শেষ হয়ে যেতে পারে। আর এই বিপর্যয় আসতে পারে বিভিন্ন ভাবে।
হতেই পারে যে একদিন ঘর থেকে বেরিয়েই ‘ক্রসফায়ার’-এর শিকার হলেন গ্রামবাসীদের কেউ। আবার নিরাপত্তা বাহিনী বা মাওবাদী, যে কারওর গুলিতে তাদের মৃত্যু হতে পার।
এমনও হতে পারে যে পুলিশের 'ইনফর্মার' হওয়ার সন্দেহে কাউকে মাওবাদীদের নিশানা হতে হল অথবা মাওবাদী সন্দেহে পুলিশের হাতে মৃত্যু হল।
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
সুরজবতী হিডকো।
এই কারণেই ছত্তিশগড়ের মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে মাওবাদ দমনের এই লড়াইয়ে সাধারণ আদিবাসীদের জীবন বিপন্ন হয়ে উঠেছে।
কিন্তু এই লড়াই সাধারণ আদিবাসীদের কতটা প্রভাবিত করছে?
ছত্তিশগড়ের সবচেয়ে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকা আবুঝমাড় এলাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত পেওয়ারি গ্রাম।
কাঁকের জেলা সদর থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার দূরে দুর্গম জঙ্গলের মাঝখানে অবস্থিত এই গ্রামে সুরজবতী হিডকোর একটি বাড়িও রয়েছে।
সেই বাড়িতে পৌঁছে শুধু স্তব্ধতা আর বিষণ্ণ মুখই চোখে পড়েছে বিবিসি হিন্দি টিমের। সুরজবতী হিডকো হলেন অনিল হিডকোর বৃদ্ধা মা।
আঙিনার একটা কোণায় বসে চোখের জল মুছছিলেন তিনি। মাত্র দু’মাস আগেও তার এক রোজগেরে ছেলে, বউমা আর নাতি-নাতনিও ছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি তাদের জীবনের সব কিছু তছনছ হয়ে যায়।
সুরজবতী হিডকো জানিয়েছেন তার ২৮ বছরের ছেলে অনিল প্রতিদিনের মতোই ১৫ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে তেন্দু পাতা (পূর্ব ভারতীয় আবলুস গাছের পাতা) বাঁধার জন্য দড়ির ব্যবস্থা করতে গিয়েছিলেন।
মা সুরজবতী বলছেন, "পরের দিন মানে ২৫শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়, গ্রামের লোকেরা জানায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছেলের মারা গিয়েছে। মারদা গ্রামের কাছে একটা পাহাড়ে এই সংঘর্ষ হয়েছিল।”
“কী হয়েছে কেউ বলেনি। রাত ১১টায় আমার ছেলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। ওর দেহ অনেক দেরিতে পেয়েছি আমরা। দুর্গন্ধের কারণে ওর মরদেহ ঘরে রাখতে পারিনি। এমনকী পরিবারের লোকজনও ওর মুখ দেখতে পারেনি।”
সন্তানকে কোলে নিয়ে অনিলের স্ত্রী সুরজা হিডকোও অঝোরে কাঁদছিলেন। অনেকক্ষণ পর তিনি কথা বলতে শুরু করেন।
বৃদ্ধ শাশুড়ি ও শ্বশুর এবং ছোট দুই সন্তানকে নিয়ে বাকি জীবনটা কীভাবে কাটাবেন সে বিষয়ে নিজের দুশ্চিন্তার কথা বলতে থাকেন তিনি।
সুরজা হিডকো বলেন, “আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাদের লালন-পালন করার কেউ নেই। শ্বশুর বা শ্বাশুরির চাকরি করার বয়স নেই।”
“বাড়িতে আমার স্বামীই একমাত্র উপার্জন করার মতো ছিলেন। এখন বলুন আমি কী করব! দড়ির ব্যবস্থা করতে জঙ্গলে গিয়েছিলেন আর ওকে (অনিলকে) মেরে ফেলল।”
ছবির উৎস, SALMAN RAVI
ছবির ক্যাপশান,
মঙ্গলু রাম।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি যে সংঘর্ষে অনিল হিডকোর মৃত্যু হয়েছে বলে নিরাপত্তা বাহিনী দাবি করেছে সেই ঘটনাস্থল পেওয়ারি গ্রাম থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে মারদা গ্রামের কাছে অবস্থিত একটা পাহাড়ি এলাকা।
ওই সংঘর্ষে তিনজন মাওবাদী গেরিলা নিহত হয়েছিল বলেও দাবি করা হয়েছে।
তবে পেওয়ারি গ্রামের প্রধান মঙ্গলু রামের দাবি, অনিল কিন্তু তার গ্রামে ট্রাক্টর চালানোর কাজ করতেন।
এই ঘটনার পর, গ্রামবাসীরা কাঁকের জেলার কালেক্টর এবং পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন।
সেখানে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছিল যে অনিল হিডকো মাওবাদী ছিলেন না বা তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগও ছিল না।
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
অনিল হিডকোর পরিবার এবং পরিচিতরা দাবি করেছেন মাওবাদীদের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ ছিল না, তিনি অন্য কাজ করতেন।
মঙ্গলু রাম বলেন, "ও আমাদের বাড়িরই ছেলে ছিল। কঠোর পরিশ্রমী ছিল। রোজগারের নিশ্চয়তা কর্মসূচির আওতায় কাজও করত। সে সংক্রান্ত কার্ডও রয়েছে। এছাড়া আধার কার্ড, প্যান কার্ডের পাশাপাশি আয়ুষ্মান কার্ডও আছে। নিজেই রেশন আনতে যেত অনিল।”
তিনি বলেন, "প্রতি মাসে রেশন নেওয়ার পর রেজিস্টারে এবং রেশন কার্ডে তার সইও রয়েছে। তেন্দু পাতা বাঁধার জন্য দড়ি তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করতে জঙ্গলে গিয়েছিল। সব সময় জঙ্গলে যেত।"
"ওরা বলছে এনকাউন্টার হয়েছে, আসলে গুলি করা হয়েছে ওকে। ও (অনিল) জঙ্গলের লোক (মাওবাদী) ছিল না। সাধারণ মানুষ ছিল। অনিল আমার ট্রাক্টরও চালাত।”
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
বস্তার ডিভিশনের ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পি সুন্দররাজ।
বস্তার ডিভিশনের ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পি সুন্দররাজ স্বীকার করেছেন যে মাওবাদীদের দমন করতে চালানো অভিযানের সময় সাধারণ মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে তার দাবি, এ জাতীয় পরিস্থিতিতে স্বাধীন তদন্ত হয় এবং নিহতদের পরিবারকেও 'ক্ষতিপূরণ'ও দেওয়া হয়ে থাকে।
২৫ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি বলেন, “পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে।”
“মাওবাদী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে কোনও নিরীহ গ্রামবাসীর ক্ষতি হয়ে থাকলে আমরা তা স্বীকার করে নিই। ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় ওই ব্যক্তির (ক্ষতিগ্রস্ত) উপর নির্ভরশীলদের।”
কোনও নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু হলে তার উপরে নির্ভরশীল পরিবারকে ৫ লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আহতদের ক্ষেত্রে এক লক্ষ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল কোনও ক্ষতিপূরণই কি সুরজবতী বা সুরজার ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া জগতকে অথবা মারদা গ্রামের খাসপাড়ায় সোমারি বাই নেগির পরিবারের সুখ ফিরিয়ে আনতে পারবে?
সোমারি বাই নেগির ছেলে রামেশ্বর নেগিও ২৫ ফেব্রুয়ারির ওই সংঘর্ষে নিহত হন বলে জানা গিয়েছে। তার পরিবারের তরফেও সরকারের কাছে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ জানিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
কৈলাশ কুমার।
কাঁকেরের ঘটনাস্থল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে থাকেন কৈলাস কুমার।
তার প্রশ্ন যদি ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপক্ষে সংঘর্ষ হয়ে থাকে, তাহলে নিরাপত্তা বাহিনীর কোনও কর্মীর গায়ে কেন আঁচড় লাগেনি?
গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, পুলিশের দাবি অনুযায়ী একটা দেশি বন্দুকও উদ্ধার করা হয়েছে অথচ পুরো গ্রামের কারও কাছে কোনও অস্ত্র নেই।
ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটা সংঘর্ষ সম্পর্কে কৈলাস কুমার বলেছেন, "যদি দুই পক্ষ গুলি চালাত, তাহলে পুলিশ যাদেরকে নকশাল বলে দাবি করেছে তারাও পুলিশের উপর হামলা করত। তেমন কিছুই ঘটেনি। তাই ওরা আমাদের লোককে নকশাল নাম দিয়ে মেরে ফেলেছে।”
দান্তেওয়াড়ার মানবাধিকার কর্মী ও পেশায় আইনজীবী বেলা ভাটিয়া বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, "এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যেখানে সংঘর্ষ হয়েছে এবং অনেকে নিহত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে দু-তিনজন মাওবাদীকে চিহ্নিত করা হয়েছে আর বাকিদের কিন্তু মাওবাদীদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।”
“গুলিবিনিময়ে নিহত নিরীহ মানুষের হয়ে আওয়াজ তোলার কেউ নেই! না মাওবাদী না অন্য কোনও সংগঠন! তাই এখানে ভয়ের পরিবেশ রয়েছে”, বলছিলেন বেলা ভাটিয়া।
ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলও ২৫ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
চলতি মাসের বড়সড় অভিযানের পর ফের প্রশ্ন উঠেছে যে যদি মাওবাদীরা দুর্বল হয়ে গিয়ে এবং পিছু হঠে থাকে তাহলে তারা কীভাবে এই বিশাল জমায়েত করেছিল?
ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনাস্থল থেকে 'এলএমজি, এনসাস, কারবাইন ও একে-৪৭'-এর মতো অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল নিহত মাওবাদীদের কাছ থেকে কীভাবে এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র পৌঁছাল?
এই প্রশ্নের উত্তরে পি সুন্দররাজের দাবি, "বিগত বছরগুলোতে মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা চালিয়েছে এবং অস্ত্রাগারও লুঠ করেছে। এখানে তেমন অনেক অস্ত্রই আছে। এ ছাড়া তারা দেশি পদ্ধতিতে অস্ত্র তৈরি করে। বিস্ফোরকও তৈরি করে। এই সব বিস্ফোরকের আঘাতে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।”
ছবির উৎস, SALMAN RAVI/BBC
ছবির ক্যাপশান,
পুলিশ এবং মাওবাদীদের সংঘর্ষের মাঝে গ্রামবাসীদের জীবন বিপন্ন বলে তারা জানিয়েছেন।
নিরাপত্তা বাহিনী ও মাওবাদীদের মাঝে আটকে থাকা স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ের কোনও আশার আলো দেখতে পান না।
ছত্তিশগড়ে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রচার জোরদার হলেও ১৬ই এপ্রিলের সংঘর্ষের পর রাজ্য সরকার এখন মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী বিজয় শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, "হিংসা দিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান করা যায় না। তাই সরকার মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।”
তার কথায়, "বন্দুকের নলের মুখে উন্নয়নও হতে পারে না, তাই আলোচনার পথ অবলম্বন করাই ভাল।”
গত তিন দশক ধরে যদিও বস্তার অঞ্চলে মাওবাদী এবং পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সংঘর্ষই চলছে, আলোচনা হয়নি।