অন্ধকার হইতে আলোর পথে

২৬ মে, ২০১৮ ইং

সুন্দরবন উপকূলে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক মানুষের বাস। ইহাদের বেশির ভাগেরই জীবন-জীবিকা নির্ভর করে এই বনের উপর। তাহাদের মোকাবিলা করিতে হয় বাঘ, সাপসহ আরো অনেক হিংস্র প্রাণীর। কিন্তু তাহার চাইতেও ভয়ঙ্কর ছিল সুন্দরবনের জলদস্যু। স্বস্তির কথা হইল, সুন্দরবনে দস্যুদের ভয়ঙ্কর জামানার অবসান ঘটিতেছে ক্রমশ। জিম্মি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যা, চাঁদাবাজি আর ডাকাতি ছিল যেখানকার প্রতিদিনকার নির্মম চিত্র, সেইখানে গত দুই বত্সর ধরিয়া ক্রমশ বহিতে শুরু করিয়াছে শান্তির সুবাতাস। এই সময়ে প্রায় তিন শতাধিক জলদস্যু আত্মসমর্পণ করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন স্বাভাবিক জীবনে। সর্বশেষ গত ২৩ মে বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে আগ্নেয়াস্ত্র জমা দিয়া আত্মসমর্পণ করিয়াছেন সুন্দরবনের ভয়ঙ্কর ছয় দস্যু বাহিনীর প্রধানসহ ৫৭ জলদস্যু। জমা দিয়াছে ৫৮টি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও এক হাজার ২৮৪ রাউন্ড গোলাবারুদ।


এই সকল দস্যুর নিকট পাওয়া গিয়াছে বিদেশি দোনলা বন্দুক, পয়েন্ট টুটু বোরের রাইফেল, বিদেশি একনলা বন্দুক, বিদেশি সিক্স শুটারগান ও বিদেশি শটগান। অর্থাত্, দস্যুদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইহার নেপথ্যে রহিয়াছে গডফাদারদের হাত। এই গডফাদাররাই গরিব সাধারণ মানুষদের ইন্ধন দিয়া বিপথগামী করে। লইয়া আসে দস্যুপথে। এই পথ চক্রব্যুহের মতো, একবার প্রবেশ করিলে আর বাহির হওয়া যায় না সহজে। আত্মসমর্পণকৃত দস্যুদের বয়ান হইতেই জানা যায়, তাহাদের বেশিরভাগই স্বেচ্ছায় এই খারাপ পথে পা বাড়ান নাই। এলাকার প্রভাবশালী কেহ প্রথমে তাহাদের হাতে অস্ত্র তুলিয়া দিয়া অন্ধকার জগতে ঠেলিয়া দেয়। আর একবার এই জগতে ঢুকিয়া গেলে ফিরিয়া আসিবার পথ বন্ধ করিয়া দেয় গডফাদাররাই। অতঃপর এই দস্যুদের দিয়াই গডফাদাররা প্রতি বত্সর কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে মাছ ব্যবসায়ী, জেলে আর মৌয়ালদের নিকট হইতে। উপকূলের ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তিরাও রেহাই পাইতেন না। অথচ সুন্দরবন হইতে কখনোই বাড়িতে বা উপকূলেও আসিতে পারিত না সাধারণ দস্যুরা। গডফাদাররা ভয় দেখাইত, লোকালয়ে আসিলেই পুলিশ এবং র্যাব ক্রসফায়ারে শেষ করিয়া দিবে। তাহাদের জন্য কেবল খাবার পাঠানো হইত। এমনকী পরিবারের জন্যও শুধু খাবার টাকা ব্যতীত বাড়তি কোনো টাকা দেওয়া হইত না। অর্থাত্ তাহারা পরিণত হইত দস্যুদাসে। এইভাবে অনেক দস্যু কেবল বনের মধ্যে দাসের মতো জীবন পার করিয়াছে বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া।


সুতরাং স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়া আসিবার সুযোগ একঅর্থে তাহাদের জন্য হাতে চাঁদ পাইবার মতো। এইক্ষেত্রে বিগত দুই বত্সর ধরিয়া সরকারের সহিত সমঝোতা করিয়া সাধারণ দস্যুরা যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়া আসিবার নিশ্চয়তা পাইল, তখন তাহা লুফিয়া লইল। উভয়পক্ষই এইক্ষেত্রে সাধুবাদ পাইবে নিশ্চয়ই। কিন্তু যেই সকল গডফাদাররা আড়ালে কলকাঠি নাড়িয়া থাকে, তাহাদের মূলোত্পাটন করিতে না পারিলে সুন্দরবনকে দস্যুদের কবল হইতে সম্পূর্ণত ঝুঁকিমুক্ত করা যাইবে না কখনোই।




Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews