আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি আসনে এখনো পর্যন্ত বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৭ জনের নাম শোনা যাচ্ছে। দলীয় মনোনয়ন পেতে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এলাকায় গণসংযোগ, সভা, সমাবেশ করে বেড়াচ্ছেন।
এর মধ্যে যশোর-৩ (সদর) আসনে কেবলমাত্র একজন প্রার্থী। তিনি হলেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী মরহুম তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। যিনি গত নির্বাচনেও আওয়ামী দুঃশাসনের মধ্যে চরম ঝুঁকির মধ্যে একেবারে নির্বাচনের দিন পর্যন্তই মাঠে ছিলেন। এ কারণে তাকে কম ধকল পোহাতে হয়নি। সে সময় দফায় দফায় তার ওপর হামলা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার গাড়ি। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের বিকল্প এখনো পর্যন্ত কেউ নেই বলে মনে করেন বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী।
সদর আসনের বাইরে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। শার্শা উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-১ আসন। এই আসনে বিএনপির তিনজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির ও সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটন।
ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-২ আসন। এই আসনে বিএনপির চার নেতা মাঠে রয়েছেন। এরা হলেন- ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক।
সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৩ আসন। এটি জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আওয়ামী ফ্যাসিস্ট জমানার কাণ্ডারিখ্যাত অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি সাবেক মন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির মরহুম সদস্য তরিকুল ইসলামের সন্তান। খুলনা বিভাগে বাবার মতো বিএনপির হাল ধরে আছেন তিনি।
বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলা এবং সদর উপজেলার বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত যশোর-৪ আসন। এই আসনে বিএনপির দু’জন প্রার্থী জোরেশোরে মাঠে রয়েছেন। এদের একজন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক টিএস আইয়ূব ও অপরজন অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফারাজী মতিয়ার রহমান। এই দু’জন নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সভা সমাবেশ করছেন। এদের বাইরে বাঘারপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই মনার নামও কমবেশি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু তার কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা মনিরামপুর নিয়ে গঠিত যশোর-৫ আসন। এই আসনে এখনো পর্যন্ত বিএনপির চারজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদ ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ মুছা, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মুনির আহম্মেদ সিদ্দিকী বাচ্চু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ইফতেখার সেলিম অগ্নি।
কেশবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত যশোর-৬ আসন। এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চান তিনজন। তারা হলেন- উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক উপকমিটির সহসম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু ও পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুস সামাদ বিশ্বাস।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সদর আসন বাদে অন্যসব আসনে নির্বাচন যত এগোচ্ছে ততই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা শক্তির মহড়া দিচ্ছে। এরইমধ্যে শার্শায় মফিকুল হাসান তৃপ্তি এবং নুরুজ্জামান লিটন ও হাসান জহিরের সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
যশোর-২ আসন ঝিকরগাছা-চৌগাছায় দু’গ্রুপের মধ্যে ঘটেছে মারামারির ঘটনা।
যশোর-৪ আসনে মারামারি এক প্রকার লেগেই আছে। বাঘারপাড়া উপজেলায় টিএস আইয়ূবের সমর্থকদের সাথে আব্দুল হাই মনা সমর্থকদের সঙ্ঘাত অব্যাহতভাবে চলছে। একইভাবে অভয়নগরে ফারাজী মতিয়ার রহমানের সমর্থকদের সাথে তার প্রতিপক্ষদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য দখল পাল্টা দখল, ঘাট দখল পাল্টা দখল নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে।
সবচেয়ে খারাপ অবস্থা মনিরামপুরে। এখানে শহিদ ইকবাল গ্রুপ অপ্রতিরোধ্য। ৫ আগস্টের পর তারা এতটাই অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে যে, থানার সামনে একটি অফিস নিয়ে সালিস বিচারের নামে অর্থ বাণিজ্য শুরু করেছে বলে বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। থানায় অভিযোগ দিতে আসা লোকজনকে ডেকে ওই অফিসে নিয়ে তারাই সালিস করে অর্থ আদায় করে বলে সূত্রের অভিযোগ। কেবল তাই না, ঘের, বাঁওড়, জায়গা, জমি, দোকানপাট অর্থের বিনিময়ে দখল পাল্টা দখল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা তাদের এই অপকর্মে বাধা দিলে তার গায়ে ‘ফ্যাসিস্ট’ ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের দরুণ বদনাম হচ্ছে শহিদ ইকবালের। তারই ইমেজ নষ্ট হচ্ছে বলে ওই গ্রুপের একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।