উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হওয়া দারুল ইহসান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ভাগ্য খুলছে। ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল উচ্চ আদালতের রায়ের আগে পাস করা ব্যক্তিদের সনদ মূল্যায়ন করে কর্মস্থল পরিবর্তন, উচ্চ পদে পদোন্নতি ও বিধি মোতাবেক যোগদান করেও যারা বঞ্চিত তাদের এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এই নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। রায়ে বলা হয়, আইনের দৃষ্টিতে দারুল ইহসান কোনও বিশ্ববিদ্যালয় নয়। তবে সনদ অবৈধ ঘোষণা করেননি আদালত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রায় প্রকাশের পর দারুল ইহসান থেকে অর্জিত সনদধারী এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে জটিলতা তৈরি হয়। নতুন এমপিভুক্তির জন্য আবেদনকারীদের এমপিওভুক্তি বন্ধ হয়ে যায়। ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। ফলে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।
জটিলতা নিরসনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর গত বছর ১২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে রায়ের আগে অর্জিত সনদধারীদের গ্রহণযোগ্যতা দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগকে পত্র দেয়। ওই পত্রে বলা হয়, হাইকোর্টের রায়ের আগে ইনডেক্সধারী হওয়ায় তাদের এমপিওভুক্তি ও বিএড সনদধারীদের সনদের গ্রহণযোগ্যতা প্রদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি। দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার ঘোষিত হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সনদধারী (আদালতের রায়ের আগে) এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মস্থল পরিবর্তন ও উচ্চপদে এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত কামনা করা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যম) জাভেদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দারুল ইহসানের সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে যে জটিলতা তা স্পষ্ট করে শিগগিরই একটি আদেশ জারি করা হবে। আদালতের রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (মাধ্যমিক) সালমা জাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের রায়ের আলোকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদধারীকে নতুন করে কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করার সুযোগ নেই। তবে যারা কর্মরত আছেন, তাদের সনদের গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয়ে আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার দিয়েছেন। সে কারণেই দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করা শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মস্থল পরিবর্তন ও উচ্চ পদে পদোন্নতি এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ দেওয়া হবে, আর তা হবে রায়ের আলোকেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গভর্নিং বডি যদি বিধি মোতাবেক নিয়োগ করে, এমপিও দেওয়ার যথাযথ সুপারিশ করে, তাহলে মাউশি এমপিও বাদ দিতে পারে না। কারণ, রায়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি। অর্থাৎ গভর্নিং বড়ি ও এমপিও কমিটির সুপারিশ থাকলেই সরকার তার এমপিও ছাড় করতে পারবে। অন্যদিকে যারা এমপিওভুক্ত তারা কর্মস্থল পরিবর্তন ও উচ্চপদে পদোন্নতি পেতে পারেন। কারণ তার দায়িত্ব যথাযথ কর্তৃপক্ষের।’
আরও পড়ুন-
দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ
বৈধতা পাচ্ছে বন্ধ হওয়া দারুল ইহসানের দু’লাখ সনদ