ঢাকা-কাঠমান্ডু সড়ক যোগাযোগ
২৭ এপ্রিল, ২০১৮ ইং
বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ ও কানেকটিভিটির গুরুত্ব সর্বাধিক। কেননা যোগাযোগ যত বাড়িবে, ততই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি হইবে এবং গতিশীল হইবে দেশের অর্থনীতি। এই ব্যাপারে সংরক্ষণমূলক মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার কোনো অবকাশ নাই। স্থল, জল ও আকাশপথে আঞ্চলিক যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশ গত কয়েক বত্সরে অগ্রণী ভূমিকা পালন করিয়াছে। তাহারই অংশ হিসাবে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা দিয়া ঢাকা ও কাঠমান্ডুর মধ্যে পরীক্ষামূলক বাস চলাচল শুরু হইয়াছে গত সোমবার। এইদিন বিআরটিসি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তিন দেশের ৪৬ জন প্রতিনিধি লইয়া ঢাকার কল্যাণপুর হইতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। একদিন পর বিকালে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়া তাহারা ভারতে প্রবেশ করেন। ইহার পর ভারতের শিলিগুড়িতে রাত্রিযাপন শেষে তাহারা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তাহারা নিরাপদেই কাঠমান্ডু পৌঁছাইয়াছেন এবং আজ কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নিতেছেন। এই বৈঠকে ঢাকা-কাঠমান্ডু রুটে বাস চলাচল, ভিসা প্রক্রিয়া, ভাড়া নির্ধারণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা হইবার কথা।
প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্টের (বিবিআইএনএমভিএ) আওতায় এই আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে তাহাদের সুচিন্তিত মতামত প্রদান করিবেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগের এই চুক্তিটি করা হয়। যদিও ভুটান এখনও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে নাই, তথাপি তাহারা শীঘ্রই এই ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন বলিয়া আশা করা যায়। মোট ১১০৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কপথে ঢাকা হইতে কাঠমান্ডু যাইতে যাত্রাবিরতিসহ সময় লাগিবে ৩০ ঘণ্টা। প্রথমে মতিঝিল হইতে গাবতলী-চন্দ্রা-এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর হইয়া বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, ইহার পর সেখান হইতে ভারতের শিলিগুড়ি হইয়া নেপালের কাঁকরভিটা পর্যন্ত বাস যাইবে। সেখানে মেচি মিনি কাস্টমস অফিস দিয়া বিভিন্ন রুট ব্যবহার করিয়া অবশেষে বাস পৌঁছাইবে কাঠমান্ডু। আলোচনা সফল হইলে আগামী জুন নাগাদ সরাসরি এই আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ চালু হইতে পারে। এই সড়ক যোগাযোগ চালু হইলে বিশেষত বাংলাদেশ ও নেপালের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও পর্যটন শিল্পের ব্যাপক উন্নয়ন ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হইবে। বাংলাদেশে অবস্থিত নেপাল দূতাবাসসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিক্যাল কলেজে সে দেশের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেন। বাংলাদেশের সহিত নেপালের বাণিজ্য দিনদিন সমপ্রসারিত হইতেছে। অন্যদিকে প্রতি বত্সর বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করিতেছেন। তাহাদের সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান। আবার প্রতি বত্সর কয়েক হাজার নেপালি পর্যটক বাংলাদেশের বগুড়ার মহাস্থানগড় ও অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান ভ্রমণ করিতেছেন। সুতরাং এই সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হইলে ইহাতে সংশ্লিষ্ট সকল দেশই উপকৃত হইবে। ব্যবসা ছাড়াও আন্তঃধর্ম ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটিবে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাবান্ধা দিয়া চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগ স্থাপন ব্যাপক সম্ভাবনাময় ও সুবিধাজনক। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর হইতে ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। সুতরাং এই সুবিধাকে কাজে লাগানো উচিত। কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিতব্য আজকের বৈঠকে বিবিআইএনভুক্ত দেশগুলির মধ্যে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হইতেছে না। তবে ঢাকা-কাঠমান্ডু সড়ক যোগাযোগ বাস্তবায়নের স্বার্থে শীঘ্রই এই ব্যাপারে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া প্রয়োজন।