দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। ১০ বছর ধরে ২৬ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে বাংলাদেশ যেভাবে ১২ থেকে ১৫-এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, সেটি ইতিবাচক তো নয়ই, বরং সমাজের রল্প্রেব্দ রল্প্রেব্দ দুর্নীতি প্রবেশেরই লক্ষণ। আমরা বিস্মিত, সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষুষ্ণতা ঘোষণা করলেও বাস্তবে তার সুফল আসেনি। এমনকি করোনা মহামারির এ সময়েও বন্ধ হয়নি অনিয়ম-দুর্নীতি। দুঃখজনক হলেও সত্য; দুর্নীতির সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু আফগানিস্তান বাংলদেশের নিচে অবস্থান করছে; অন্য দেশগুলোর অবস্থান আমাদের ওপরে।
বলাবাহুল্য, টিআই যে পদ্ধতিতে দুর্নীতির মাত্রা মূল্যায়ন করে, তা প্রশ্নাতীত নয়। কিন্তু কভিড-১৯ অতিমারির সংকটময় মুহূর্তে দেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ব্যাপকতা আমরা যেমন দেখেছি, তেমনি আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির ঘটনাও ঘটেছে। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের অবস্থান ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া; ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার ঘাটতিসহ অন্য যেসব বিষয় টিআইর প্রতিবেদনে এসেছে, সেগুলো একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সরকারের চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতিসহ নানা খাতের অনিয়মের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায়শ প্রকাশ হচ্ছে। এমনকি করোনায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারি সহায়তা বণ্টনের বিষয়ও অনিয়মের বাইরে নয়।

সংগতই টিআইর সূচকে দুর্নীতির পাশাপাশি সুশাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রও বিশেষ পরিমাপক। দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্ষমতাবানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, কারও কারও ক্ষমতার অপব্যবহার ও সরকারি কাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবের যেসব ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিফলন টিআইর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। আমরা জানি, দেশে দুর্নীতি ও অপরাধের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্রতা যেমন রয়েছে, তেমনি রাঘববোয়ালদের জবাবদিহির আওতায় আনার ক্ষেত্রেও এক ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে, যা দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে রাখা জরুরি, দুর্নীতি দূর করা শুধু অর্থনৈতিক মুক্তি, আইনের শাসন ও নাগরিক অধিকারের বিষয় নয়; এর সঙ্গে একটি জাতির মর্যাদার প্রশ্নটিও অঙ্গাঙ্গী জড়িত।
আমরা মনে করি, দুর্নীতি শূন্যে নামিয়ে আনতে সরকারের আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। আমাদের মনে আছে, ২০০১ সাল থেকে টানা পাঁচবার বাংলাদেশ দুর্নীতির ধারণা সূচকে নিম্নতম দেশগুলোর সারিতে স্থান পেয়েছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে এ ক্ষেত্রে ক্রমেই উন্নতি করেছিল বাংলাদেশ। দুর্নীতি রোধে আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক যেমন কাজ করছে, তেমনি এ সংক্রান্ত আইনও রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে সরকারের নির্দেশের বাস্তবায়ন না হওয়া উদ্বেগজনক। দুর্নীতির সূচক প্রকাশ হলে সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। আমরা মনে করি, টিআই সূচক সামলে নিয়ে দুর্নীতির প্রশ্নে শূন্য সহিষুষ্ণতা নীতির চর্চা অব্যাহত রাখাই জরুরি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের এক বিস্ময়। উন্নয়নের যে মহাসড়কে বাংলাদেশ আরোহণ করেছে, সেখানে গতি আনতেও দুর্নীতিমুক্ত হওয়া জরুরি। সরকারি দপ্তরগুলোতে গেলে শোভা পায় স্লোগান 'আমি ও আমার অফিস দুর্নীতিমুক্ত'। তারপরও সংশ্নিষ্ট দপ্তরের দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়। বিভিন্ন দপ্তরের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর দেশে-বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থের সন্ধান প্রমাণ করে- সরকারের সেবা খাতে দুর্নীতি থেমে নেই। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কঠোর বার্তা দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়ে কঠোরতার প্রমাণ পাওয়া গেলে সাধারণ নাগরিকের পক্ষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন ও সংঘবদ্ধ হওয়া সহজ হয়। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সরকারের সদিচ্ছা, দুদক কিংবা আইনের কঠোরতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি ব্যক্তির পরিশুদ্ধিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষের মাঝে নৈতিকতার বোধ জাগিয়ে তুলতেও সরকারের মনোযোগ দেওয়া দরকার। হতাশার যে বৃত্তে দুর্নীতি ঘুরপাক খাচ্ছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews