যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২ সে.মি কমে বিপদসীমার ৩৭ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধীর গতিতে পানি কমায় জেলার সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৩৪টি ইউনিয়নের এখনো ৯৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে।
দীর্ঘদিন পানিবন্দী মানুষের কাজকর্ম না থাকায় বানভাসী মানুষের মধ্যে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ভাবে প্রতিটি ইউনিয়নে জনপ্রতি ১০ কেজি হারে চাল বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো অনেক মানুষ ত্রাণ সামগ্রী থেকে বঞ্চিত রয়েছে। জেলার অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়া কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। জনপ্রতিনিধিরা বলছে, সরকার থেকে যে চাল দেয়া হয়েছে তা বন্যা কবলিত মানুষের প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। অন্যদিকে, পানি কমার সাথে সাথে যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল কাজিপুরের খাসরাজবাড়ী, তেকান, নিশ্চিতপুর, সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, শাহজাদপুর উপজেলার আড়কান্দি, পাঁচিল, কৈজুরী, জালালপুর ও চৌহালীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গনে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি, কবরস্থান, মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
সয়দাবাদ ইউপির বাঐতারা, পুর্বমোহনপুর গ্রামের বন্যা কবলিতরা জানান, পানির অপর নাম জীবন হলেও যমুনার পানি এখন আমাদের মরনে পরিণত হয়েছে। রাস্তাঘাট, বসতবাড়ী, তাঁত কারখানা ও ফসল এখনো পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে। মানুষের কাজ কর্ম না থাকায় খুব কস্টে জীবনযাপন করছে। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নৌকা করে দুর থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। পানিতে থাকায় হাত পায়ে ঘা দেখা দিয়েছে। নানা অসুখ দেখা দিয়েছে। মানুষের কাছে ওষুধ কেনার টাকা নেই। রাতে পানিতে পোকা-মাকড়, সাপ বিচ্চুর ভয় নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে। কস্টে থাকলেও জনপ্রতিনিধিরা খোজ নেয় না।কাওয়াকোলা ইউপি চেয়ারম্যান জিয়া মুন্সী বলেন, কাওয়াকোলা ইউনিয়নে বন্যায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে তিন থেকে চার শতাধিক বসতভিটাসহ ফসলী জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের কারনে ইউনিয়নটি মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। পাউবো কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, যমুনা নদীর তীর সার্বক্ষিনিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাধে কোন সমস্যা দেখা দেয়ার সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর যেসব এলাকায় তীব্র ভাঙ্গন সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যমুনা নদীর ভাঙন তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয় না।
বিডি প্রতিদিন/এএম