যুক্তরাজ্যে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ঢুকে পড়া অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে নতুন একটি পাইলট স্কিম চালু করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রো।

একইসঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলে কিইভকে সহায়তার পরিকল্পনাও করেছেন তারা।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর তিন দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষ হয় বৃহস্পতিবার। এদিন লন্ডনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে‘একজন আসবে, একজন যাবে’ ধরনের একটি অভিবাসী চুক্তি করার ঘোষণা দেন দুই দেশের নেতা।

এই চুক্তির উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফ্রান্স থেকে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে অবৈধভাবে মানুষের যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর বিপজ্জনক যাত্রা ঠেকানো। এ বছর এখন পর্যন্ত এ পথে যাত্রা করেছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।

নতুন পাইলট স্কিমের আওতায় যুক্তরাজ্য কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ছোট নৌকায় করে আসা কাগজপত্রহীন মানুষদেরকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো শুরু করবে। বিনিময়ে যুক্তরাজ্য ফ্রান্স থেকে সমসংখ্যক বৈধ আশ্রয়প্রার্থীকে নেবে—যাদের ব্রিটিশ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে স্টারমার বলেন, “এই পাইলট প্রকল্পটি আজ ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত। এই প্রথম ছোট নৌকায় করে আসা অভিবাসীদের দ্রুত আটক করে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্প সফল হলে সবার কাছে এমন বার্তাই যাবে যে, এখন থেকে এভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা করা বৃথা।”

“মানবপাচারকারীদের ব্যবসার মূল পরিকল্পনাটা ভেস্তে দিতে সহায়ক হবে এই যুগান্তকারী পরিকল্পনা। সফল হলে এটি আরও বড় পরিসরে চালানো হবে। অবৈধ অভিবাসন বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। এটি ইইউ-এর জন্য সমস্যা। আমাদের দুই দেশের জন্যও সমস্যা,” বলেন স্টারমার।

তবে চুক্তিটি বড় ধরনের কোনও প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশন এবং ইইউ সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে চুক্তিটির আইনি যাচাই হওয়া প্রয়োজন। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

সরকারি সূত্র জানায়, চুক্তি বাস্তবায়নের প্রথম পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে প্রতি সপ্তাহে গড়ে ৫০ জন অভিবাসী ফেরত পাঠানো হতে পারে। অর্থাৎ, বছরে প্রায় ২,৬০০ জন ফেরত যাবে।

অথচ গত বছরই ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছে ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ; চলতি বছরেরও প্রথম ছয় মাসে এসেছে রেকর্ড ২০ হাজারের বেশি।

ম্যাক্রোঁর কটাক্ষে ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ

ব্রেক্সিটের কড়া সমালোচনা করে ম্যাঁক্রো বলেন, “আপনাদের অনেকেই বলেছিলেন, ব্রেক্সিট (যুক্তরাজ্যের ইইউ ত্যাগ) হলেই অবৈধ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ঠিক তার উল্টোটা।”

তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাজ্যে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কাজ পাওয়া এত সহজ হলে, যে কোনও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যর্থ হবে।”

উত্তরে স্টারমার বলেন, “আমরা নজিরবিহীন মাত্রায় অবৈধ শ্রমিক ধরতে অভিযান চালাচ্ছি। যারা চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে এখানে মানুষ পাচার করছে, তারা শিগগিরই বুঝবে—এখানে আর সেই সুযোগ নেই।”

প্রতিরক্ষা ও ইউক্রেইন নিয়ে একসঙ্গে কাজ:

অভিবাসন ছাড়াও বৈঠকে দুই দেশের নেতার মধ্যে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি ও কূটনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হয়। যে কোনও হামলার ঘটনায় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স পারমাণবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা একযোগে সক্রিয় করবে বলে জানান দুই নেতা।

এছাড়া সুপারকম্পিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অ্যান্টি-শিপ মিসাইল নিয়ে গবেষণাতেও একসঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

তারা বলেন, ইউক্রেইনে যুদ্ধবিরতি হলে দেশটির পুনর্গঠন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট’ গঠন করা হবে; যার প্রথম সদরদফতর থাকবে প্যারিসে এবং পরের বছরে তা লন্ডনে স্থানান্তর হবে।

স্টারমার বলেন, “ইউক্রেইনকে সহায়তা করা কেবল সঠিক কাজই নয়, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যও তা অপরিহার্য।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews