পতনশীল শেয়ারবাজার

বৃহস্পতিবার দেশের শেয়ারবাজারে দর পতনের যে উদ্বেগজনক চিত্র দেখা গেল, উহা যে কোনো বিচারেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক ব্যর্থতার ফল বলিলে ভুল হইবে না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি শেয়ারের দরসংক্রান্ত ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দরসীমা প্রত্যাহারের পর আড়াই মাস যাবৎ ধারাবাহিকভাবে দর হারাইতেছিল অধিকাংশ শেয়ার। সম্প্রতি পরিস্থিতির এতটাই অবনতি ঘটে; শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি উপায়ান্তর না পাইয়া গত বুধবার বাজারে তথাকথিত এক সার্কিটব্রেকার স্থাপন করে; যাহার মর্মবস্তু– নির্দিষ্ট দিবসে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর ৩ শতাংশের অধিক হ্রাস পাইবে না। কিন্তু ইহার ফল হয় উল্টা। পাগলকে নৌকা ঝাঁকাইতে নিষেধ করিবার পর যদ্রূপ আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, তদ্রূপ উক্ত সিদ্ধান্তের একদিন পর বৃহস্পতিবার শেয়ার বিক্রয়ের যেন ধুম লাগিয়া যায়। এক পর্যায়ে এমনকি ক্রেতাশূন্য হইয়া পড়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ২০০ কোম্পানির শেয়ার। প্রতিবেদনমতে, বৃহস্পতিবার তালিকাভুক্ত কোম্পানিসমূহের বাজার মূলধন অর্থাৎ সকল শেয়ারের বাজারদর ৩ সহস্রাধিক কোটি টাকা হ্রাস পাইয়াছে এবং পরিণামে সাধারণ বিনিয়োগকারীগণ হারাইয়াছেন প্রায় ১৭ শত কোটি টাকা।

ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় শেয়ারের তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি তথা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার কার্যকরের দিন হইতে গত বুধবার পর্যন্ত মোট ৪৩ সহস্রাধিক বিও অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ শেয়ারশূন্য হইয়াছে। বৃহস্পতিবারের ধাক্কায় আরও বহু সাধারণ বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারবিমুখ হইবেন– ইহা হলফ করিয়া বলা যায়। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ভূমিকম্পসম ধসের পর হইতেই দর পতনের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ এই বাজার। মাঝেমধ্যে কিছু শেয়ারের দরে সাময়িক ঊর্ধ্বগতি দৃশ্যমান হইলেও কখনোই উহা স্থায়ী হয় নাই। অভিযোগ, এহেন দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির জন্য মুখ্যত দায়ী কারসাজির চক্রের স্বার্থে টেকসই ব্যবস্থার পরিবর্তে বিএসইসির খামখেয়ালিপূর্ণ সার্কিটব্রেকারের ন্যায় টোটকা পদক্ষেপের প্রতি পক্ষপাত। চার বৎসর পূর্বে দায়িত্ব গ্রহণকালে বর্তমান কমিশন শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তৎসহিত সূচক ১২ সহস্রের ঊর্ধ্বে স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিল। অথচ প্রতিবেদন অনুসারে, চলমান অবনমনে বৃহস্পতিবার উহা সাড়ে পাঁচ সহস্রেরও নিম্নে পৌঁছিয়াছে। 

লক্ষণীয়, শেয়ারবাজারে নূতন কোনো দেশি-বিদেশি ভালো কোম্পানি আসিতেছে না। উল্টা, সাম্প্রতিক সময়ে বহু বিদেশি বিনিয়োগকারী উহা ত্যাগ করিয়াছেন। অথচ শেয়ারবাজার যে কোনো দেশে টেকসই শিল্পায়নের সহায়ক পুঁজির সরবরাহকারী শুধু নহে; বিদেশি পুঁজি সংগ্রহেরও অন্যতম প্রধান উপায়। সত্য, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করিতে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান, তৎসহিত বহু পদক্ষেপ লইয়াছে। কিন্তু চিহ্নিত কতিপয় দুষ্টচক্রের কারণে ঐগুলির কোনোটাই কার্যত ফল দেয় নাই। প্রকৃতপক্ষে এই দুষ্টচক্রের মূলোৎপাটনে সক্ষম ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে বিএসইসি পুনর্গঠিত না হইলে এহেন পরিস্থিতি হইতে মুক্তির প্রত্যাশা করা যায় না। তজ্জন্য সরকারের সদিচ্ছাও গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। 



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews