আলিফ লায়লা ও ও...

নব্বইয়ের এই গানের টাইটেল ট্র্যাক টি মনে পড়ে? 'আলিফ লায়লা'র জ্বীন, পরী আর উড়ন্ত কার্পেট আমাদের নিয়ে  কি করে জাদুর মায়াবী জগতে হারিয়ে যেত? 

সকলেই আশা করি ফিরে গেছেন সেই ছোটবেলার স্মৃতির ভাণ্ডারে, বিটিভির পর্দায়। আরব্য রজনীর আলিফ লায়লার কোনো এক পর্ব হয়ত এই মুহুর্তে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। এমন মানুষের জুড়ি মেলা ভার যে ছোটবেলায় আলিফ লায়লা দেখে নি। ছোটবেলায় আলিফ লায়লার এই জিঙ্গেলটা কানে আসলেই একটা অন্যরকম ফিলিংস আসত। প্রতি পর্বের ওই সময়টুকু যেন দু’চোখ টেলিভিশনের পর্দায় আটকে যেত। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ছিল যে ১ মিনিটের জন্যও যদি অন্য দিকে তাকাই, তাহলে বোধহয় বিশাল গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করে ফেলব। আলিফ লায়লার বহু চরিত্রের মাঝে অনেক সময় নিজেকে বিশেষ কোনো চরিত্রে কল্পনা করতাম আমরা অনেকেই।

আরব্য রজনীর কাহিনী নিয়ে নির্মিত এই টিভি সিরিজটি একসময় বিটিভির পর্দায় তুমুল জনপ্রিয় ছিলো। নব্বই দশকে জন্ম, অথচ এই সিরিজের নাম শোনেনি এমন মানুষ নেই সম্ভবত। এখনও হয়ত কারো কারো স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠছে শুক্রবারের সন্ধ্যা-রাতে পরিবারের সবার সাথে বসে দেখা কোনো একটি বিশেষ পর্ব। 

আলিফ লায়লার কাহিনীর সূত্রপাত পারস্যের সম্রাট শাহরিয়ার ও তাঁর নববধূ শাহরাজাদকে ঘিরে। প্রথম স্ত্রীকে বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তিস্বরূপ মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পর সম্রাট নারীবিদ্বেষী হয়ে ওঠেন। তারপর একের পর এক কুমারী বিয়ে করে পরদিন সকালেই তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া শুরু করেন যেন কোনো নারীই আর রাজাকে প্রতারিত করতে না পারে। 

রাজার উজিরের দায়িত্ব ছিল কুমারীর সন্ধান দেওয়া। এক পর্যায়ে রাজ্যে কোনো কুমারীর সন্ধান পাওয়া না গেলে উজিরকন্যা শাহরাজাদ হয় রাজার সঙ্গী। বাসররাতে নববধূ রাজাকে গল্প শোনানো শুরু করলে গল্পে গল্পে রাত শেষ হলেও— গল্প শেষ হয় না। রাজাও গল্পের শেষ জানার আগ্রহ-অপেক্ষায় পরের দিন শাহরাজাদের মৃত্যুদণ্ড বিলম্বিত করেন। এভাবেই শাহরাজাদের গল্পের মায়াজালে আটকে মৃত্যুদণ্ড বিলম্বিত হতে হতে ১০০১ রাতে গড়ায়। 

ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলিফ-লায়লার গল্পগুলো অনেকের দ্বারা সংগৃহীত এবং তা এসেছে মূলত ভারত ও পারস্য অঞ্চল থেকে। অষ্টম শতকের দিকে তা আরবিতে রূপান্তরিত হয়ে “আলিফ-লায়লা” শিরোনামে পরিচিতি পায়। নবম ও দশম শতকে ইরাকের মূল গল্পের সঙ্গে আরবের লোকগল্পও যুক্ত হয়। তখনই খলিফা হারুন-উর-রশিদের কাহিনীর সম্পৃক্ততা তৈরি হয়। ত্রয়োদশ শতকের পরে এতে সিরিয়া ও মিসরের আরও গল্প সন্নিবেশিত হয়।

আলিফ লায়লার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় চরিত্র ছিলেন সিন্দাবাদ নামের এক নাবিক।

সিন্দবাদ আল্লাহর একজন সৎ বান্দা এবং পরোপকারী ব্যক্তি । তিনি বাগদাদের একজন বিখ্যাত সওদাগর। জীবন বাজি রেখে তিনি মানুষের উপকার করেছেন। সাতবার সমুদ্রযাত্রায় গিয়েছেন এবং অচেনা সাগরের বুকে ভেসে বেড়িয়েছেন। কখনো তার জাহাজ ভেঙেছে ভয়ঙ্কর ঝড়ে, কখনো গিয়ে পড়েছেন একচোখা দৈত্যের কবলে। কখনো দ্বীপ ভেবে ভুল করে পা রেখেছেন বিশাল তিমির পিঠে, কখনো লড়াই করেছেন রক-পাখির বিরুদ্ধে।সাহস, দৃঢ়তা, সততা এবং আল্লাহর প্রতি অসীম বিশ্বাসের কারণে তিনি প্রতিটি বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন এবং অসংখ্য মানুষকে বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, হয়ে উঠেছিলেন জগৎজোড়া খ্যাতিমান এবং দয়ার সাগর হিসেবে।

তবে নব্বইয়ের দশকে দর্শকদের মনে সাড়া জাগানো কে এই নাবিক সিন্দাবাদ?

আলিফ লায়লা'র সিন্দাবাদ চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন অভিনেতা শাহনেওয়াজ প্রধান।তিনি ছিলেন একজন জনপ্রিয় অভিনেতা, যিনি এই টিভি সিরিজে সিন্দাবাদের ভূমিকায় অভিনয় করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। আলিফ লায়লা ছিল 'আরব্য রজনী'র গল্পের উপর ভিত্তি করে নির্মিত একটি ভারতীয় টিভি ধারাবাহিক। 

শাহনেওয়াজ প্রধান, যিনি সিন্দাবাদ নামে পরিচিত, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালে মারা যান। আলিফ লায়লা ধারাবাহিকে তার অভিনয় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিল। 

আলিফ লায়লা ধারাবাহিকটি ১৯৯৩ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ডিডি ন্যাশনাল এবং পরে সাব টিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। এতে 'আরব্য রজনী'র বিভিন্ন জনপ্রিয় গল্পের চিত্রায়ন করা হয়েছে। 

এই ধারাবাহিকে শাহনেওয়াজ প্রধানের পাশাপাশি আরও অনেক অভিনেতা অভিনয় করেছেন, যেমন: 

  • নবদীপ সিং যিনি আলাদিনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
  • অঙ্কিত অরোরা যিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন।


Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews