এতদিন জোট গঠন প্রক্রিয়ার রাজনীতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সূচনাতেই ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই প্ল্যাটফর্মে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি ও নাগরিক সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি উঠে আসায় জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র দেখছে ক্ষমতাসীনরা।
শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ তাদের দাবিগুলো উত্থাপন করায় এতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন কিছু রাজনীতিককে নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে নেমেছেন। দলটির নেতারা মনে করছেন, নাগরিক সমাবেশে বিএনপি নেতাদের অংশগ্রহণ ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে জাতির কাছে। তাই এই ঐক্য প্রক্রিয়া জাতির কাছে তার আবেদন হারিয়ে ফেলেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ড. কামাল হোসেন কখনই শুভবুদ্ধির রাজনৈতিক চর্চা করেন না। তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ও নাগরিক সমাবেশে বিএনপির নেতাদের উপস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জাতির কাছে এই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে।’ তিনি বলেন, জোট গঠনের তোড়জোড়কে আমরা সহজভাবেই দেখেছি। আজকের পরে বিষয়টি জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে, সঙ্গে আওয়ামী লীগকেও।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘জোট গঠন প্রক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবেই দেখে আসছিল আওয়ামী লীগ। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নাগরিক সমাবেশে বিএনপির নেতাদের উপস্থিতি ও তাদের দাবি পর্যালোচনা করলে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যায়।’ তিনি বলেন, নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে দমন করা হবে।
নাগরিক সমাবেশ থেকে ওঠা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন। এছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দেওয়া।
ঘোষণায় বলা হয়, ‘কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না।’
আওয়ামী লীগের অপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশ থেকে জাতির কাছে একটা বার্তা পৌঁছে গেছে জোট গঠনের অন্তরালে ষড়যন্ত্রও রয়েছে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘নাগরিক সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া জাতির কাছে আবেদন হারিয়ে ফেলেছে। তারা যে সরকার ও নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।’