বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য জ্বালানি জোগানের সব উৎসকে বিবেচনায় রেখে কাজ করতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।তাদের মতে, সরকারের পাশাপাশি এই খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। নিজস্ব গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার এবং ক্লিন এনার্জির পরিমাণ বৃদ্ধি করার জন্য আরও পরমাণু বিদ্যুৎ-কেন্দ্রের কথা বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে স্মল মড্যুলার রিয়েক্টর (এসএমআর) সিস্টেমের মতো নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের কথাও ভাবা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রাথমিক জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সব বিকল্প উৎস নিয়ে কাজ করতেও বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন।





রোববার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে অতিথিরা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি (বিইএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভিশন’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।বঙ্গবন্ধুর জ্বালানি বিষয়ক দিক-নির্দেশনার আলোকে দেশব্যাপী টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা এবং সরবরাহ নিশ্চিত প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়।

বিইএস’র সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এবং পাওয়ার অ্যান্ড এনার্জির সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেনের উপস্থাপনায় ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

এ ছাড়া গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান প্রমুখ।

ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার আবদুস সালেক সুফি। আলোচক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম, একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু এবং জিই গ্যাস পাওয়ারের (দক্ষিণ এশিয়া) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেশ নন্দ।

সার সংক্ষেপ আলোচনা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য এবং বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির (বিইএস) সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তার দূরদৃষ্টি ও সাহসিকতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তার সেই ভিশনের ধারাবাহিকতায় বর্তমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমরা দেশব্যাপী সোলার এনার্জি বা সৌরশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলে অন্যান্য জ্বালানির ওপর থেকে নির্ভরতা কমবে। একইসঙ্গে দেশবাসীকে জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী ও সচেতন হতে হবে। আমাদের বর্তমান চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে নীতিমালা নির্ধারণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে সক্ষম হলেও জ্বালানি খাতে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। তবে যুগোপযোগী পলিসি নির্ধারণ, স্থানীয় বিনিয়োগ এবং সরকারি খাত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জ্বালানি চাহিদা, সরবরাহ পূরণে সক্ষম হতে পারব।’

বুয়েটের প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তামিম বলেন, ‘বাংলাদেশ তেল ও গ্যাস আমদানিকারক একটি দেশ এবং আমাদের মোট জ্বালানির বড় একটি অংশ তেলভিত্তিক। পূর্ববর্তী সময়ে আমরা শুধু তেলের ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদান করতাম, তবে গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তা দিতে হতো না। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটা পাল্টে গেছে। তাই এখন যথাযথ নীতি নির্ধারণের মাধ্যমে সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ‘বিগত দুই বছর গোটা বিশ্ব যখন কোভিডের আঘাতে নাজেহাল, তখন বাংলাদেশ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা সামাল দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহের কোনো সুযোগ নেই। তবে জ্বালানি সংকট ও সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলায় আমাদের আরও তৎপর হতে হবে।’

জিই গ্যাস পাওয়ারের (দক্ষিণ এশিয়া) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দীপেশ নন্দ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ অর্থনীতি গ্যাসভিত্তিক হওয়ায় হাইড্রোজেন ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মিশ্রণ ব্যবহারে অনেক সুবিধা রয়েছে এবং এভাবে আরও গ্রিনার বিদ্যুৎ উৎপন্ন সম্ভব। জিই জ্বালানি স্থানান্তরের প্রতিটি পর্যায়ে অন-গ্রাউন্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

বিইএস’র সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি আমদানিতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের খনিজ সম্পদও ক্ষতির সম্মুখীন। তাই আমাদের যথাসম্ভব জ্বালানির ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে এবং বিকল্প সমাধানগুলো কাজে লাগাতে হবে।’

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য এবং বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির (বিইএস) সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আজকের ওয়েবিনারে অংশগ্রহণ করে মূল্যবান মন্তব্য ও চলমান কিছু সমস্যার সমাধান শেয়ার করায় সবাইকে ধন্যবাদ। এই আলোচনা থেকে আমরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বর্তমান সমস্যা ও সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে জানতে পেরেছি এবং আমি আশা করি, সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে আমরা বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সক্ষম হবো। জ্বালানি সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যা, তাই এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সময়সাপেক্ষ।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews