অর্থহীন জীবনে অর্থের আর কিই-বা মূল্য

আমাদের বাস্তব পৃথিবীতে লোভনীয়, মনোমুগ্ধকর ও সুখ আনয়নকারী একটি বস্তু আছে, যা ছাড়া মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়ে, তা হলো, অর্থ কিংবা টাকা। টাকা দিতে পারলে নাকি বাঘের দুধও মিলে – এমনই এক ক্ষমতার অধিকারী হল টাকা। তবে এই টাকার কারণেই ঢাকা পড়ে মানুষের মনুষ্যত্ব, হিতাহিত জ্ঞান। মানুষ যখন টাকার পাহাড়ে ঢেকে যায়, তখন সে মনে করে তার অনেক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন সে বেপরোয়া হয়ে যায়। টাকার গরম বলে কথা – ধরাকে সড়া জ্ঞান করে। সেই ক্ষমতার জোরেই সে তাঁর বয়সে বড় ব্যক্তিকেও অনেক ছোট মনে করে। এমনকি সে তার পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি মানুষকে ক্ষমতাহীন তার তুলনায়ও অনেক ছোট বলে মনে করে। তখন সে চায় টাকা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীই কিনে নিতে। টাকার গরমে যে অন্ধ হয়ে যায় তার কাছে বর্তমানে মানুষের বয়স বাড়লেই মানুষ বয়স্ক হয় না। যার টাকা যত বেশি সে তত বয়স্ক- এমনই ভাবনা সে ভাবে।

অর্থাৎ বয়সে ছোট হলেও কোন ব্যক্তির যদি প্রচুর অর্থ থাকে তাহলে সমাজের চোখে অন্যান্য বয়স্ক ও গুণী ব্যক্তির চেয়েও সে যেনো অনেক বড়, গুণবান ও সমৃদ্ধশালী হয়ে পড়ে। আজকের পরিবেশে এটাই আমাদের সমাজের নিয়ম। আর, এটাই যদি আজকের নিয়ম না হয়, তাহলে প্রায় প্রতিটি ধনশালী পরিবারে তাদের মা-বাবারা বৃদ্ধ বয়সে অর্থের অভাবে লাঞ্ছিত কেন হবে? নতুবা সম্মানবঞ্চিত পরিবারের বৃদ্ধ বয়সের মা-বাবারা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর সাথে কেন পাঞ্জা লড়বে? বৃদ্ধাশ্রমে দিন দিন কেন আশ্রয়হীনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে? বাস্তবিক পক্ষে দেখা যায়, যেসব পিতা-মাতার ছেলেমেয়েরা প্রচুর অর্থ-বিত্তশালী, এককালের ক্ষমতাশীল ব্যক্তি সেসব পিতা-মাতারাই বৃদ্ধ বয়সে নিঃসঙ্গতা ও অভাবের তাড়নায় দিনাতিপাত করে।
সেক্ষেত্রে অভাবটা শুধু টাকার নয়- যতেœর অভাব, ভালোবাসার অভাব, চিকিৎসার অভাবসহ অন্যান্য সকল অভাবই ঘিরে থাকে সেসব পিতা-মাতাকে। কাজেই অর্থ বা টাকা দিয়ে সমস্ত পৃথিবীই ক্রয় করা যায় বটে, দুর্লভ বস্তুও সহজে হয়তো লাভ করা যায়, তবুও শুধু টাকা দিয়েই মা-বাবার ঋণ শোধ করা যায় না। এতে প্রয়োজন হয় মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধাময় আবেগ, ভালোবাসা, নম্রতা ও যত্নপরায়ণতা। তবে, মৃত্যুর পরে মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা না দেখিয়ে জীবিত মা-বাবার প্রতি যত্নশীল হওয়াই অনেক মানবিক। এতে বৃদ্ধকালের মানুষের সেবা হয়।
জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি অর্থ বা টাকা ছাড়া মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়ে- এটাই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়। অর্থ ছাড়া মানুষের জীবন যেমন অর্থহীন তেমনি অর্থহীন, জীবনে অঢেল অর্থের মালিক হলেও মনের মাঝে যদি মানবিকতা না থাকে তাহলে জীবনটাই মূল্যহীন।
তাই বলে এই নয় যে, অর্থই সর্বেসর্বা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থই মনুষ্যত্বের বিলুপ্তি ঘটায় যদি তাকে নিয়ন্ত্রণে রেখে ব্যবহার করা না হয়। অর্থের মোহে অন্ধ হয়ে গিয়ে বিচার-বিবেচনা বোধ হারিয়ে ফেললে সে-মানুষ আর মানুষের পর্যায়ে থাকে না। আর মানবজনম বৃথা হয়ে যায়। কেউ অর্থের দাসত্বে বন্দী হয়ে গেলে অমানুষে রূপান্তরিত সে-জন অমানুষে পরিণত হয়।



The Post Viewed By: 8 People















The Post Viewed By: 8 People



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews