শরীয়তপুরের জাজিরার বিলাসপুর ও মাগুরার সদরের চাউলিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। শরীয়তপুরে সংঘর্ষের সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ছাড়া মাগুরার ঘটনায় ১২ জন আহত হয়েছেন। এ সময় সাতটি দোকান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর করা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

আমাদের শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও তার প্রতিপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। এ সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। গতকাল সকাল থেকে দফায় দফায় বিলাসপুর ইউনিয়নের সারেংকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন- শাহাবুদ্দিন সারেং (৩০), মো. আরশাদুল (১১), সৈকত সরদার (১৯), হাজেরা বেগম (৭৫) ও আকাশ হাওলাদার (২৮)। তাদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শাহাবুদ্দিন, আরশাদুল, সৈকত ও আকাশকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাজিরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বেপারী এবং তার নির্বাচনি প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আবদুল জলিল মাদবরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই নিয়ে বেশ কয়েকবার দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ মার্চ দুইপক্ষের সংঘর্ষে বোমার আঘাতে সজীব মুন্সী নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার সূত্র ধরে গতকাল আবারও দুইপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় তারা সারেংকান্দি এলাকায় ফসলি জমিতে নেমে একে অন্যকে লক্ষ্য করে ককটেল ছুড়তে থাকে। ককটেলের মুহুর্মুহু শব্দে ভারী হয়ে উঠে আশপাশ। এ ছাড়া দুইপক্ষের বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করায় এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে বিলাসপুর ইউনিয়নে দুটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব, হামলা-মামলা চলছে। তারই জেরে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করে। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর আগেই দুইপক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়। তারা বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। যারা এসব ঘটিয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।

মাগুরা প্রতিনিধি জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাগুরা সদরের চাউলিয়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে গতকাল রাতে দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ১২ জন আহত, সাতটি দোকান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এই ঘটনায় আহত ছয়জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তিনজনকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে দাউদ মোল্লা ও আতিয়ার মোল্লার মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনার জেরে গতকাল রাত ৮টার দিকে আতিয়ার মোল্লার ভাতিজা মহিদুলের ওপরে হামলা করে দাউদ মোল্লার লোকজন। এরই প্রতিবাদে আতিয়ার মোল্লার লোকজন ওই রাতেই দাউদ মোল্লার ওপর হামলা করে তাকে আহত করে।

 গুরুতর আহত দাউদ মোল্লাকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পাল্টা জবাব হিসেবে দাউদ মোল্লার লোকজন আতিয়ার মোল্লা সমর্থক কয়েকজনের দোকান ও বাড়িতে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে। এ সময় ইছাক মোল্লার একটি মুদি দোকান, আকরাম মোল্লার বাড়ি, বিলাল খাঁর গোয়ালঘর ও আরব আলীর পানের বরজে আগুন দেয়। পাশাপাশি তন্নু খাঁ, স্বাধীন খাঁ, হাফেজ ও ফারুক মোল্লার বাড়িতে ভাঙচুর করে। রাত সাড়ে ১০টার সময় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। আহতদের মধ্যে মোজাম ম ল ও নিজাম নামে দুজনকে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, মিলন বিশ্বাসকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও দাউদ মোল্লাকে ঢাকায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের অফিসার রুহুল আমিন বলেন, আগুনে একটি মুদি দোকান, মুদি দোকানের পাশে অবস্থিত একটি গোয়ালঘর ও তার একটু দূরে একটি বসতবাড়ি ও বসতবাড়িতে থাকা মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ ভূস্মীভূত হয়।

মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদি রাসেল বলেন, দুইপক্ষের সামাজিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিয়েছে। পরবর্তী সহিংসতা এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews