রোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা ওষুধ খাই; কিন্তু সেই ওষুধই আবার কখনো কখনো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে চর্মরোগে। তাই এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। কিছু চর্মরোগ আছে যার নেপথ্যে মূল ভূমিকায় রয়েছে কোনো না কোনো ওষুধ। অসংখ্য রোগ রয়েছে যা ওষুধের কারণে হয়, যার মধ্যে একটি হচ্ছে ফলিয়েটিভ ইরাইথ্রোডার্মা। এই রোগের অন্তত ১১ শতাংশের কারণ হচ্ছে কোনো না কোনো ওষুধ। যে ওষুধগুলোর ব্যবহার থেকে এ রোগ হতে দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সালফার, যা কিন্তু অহরহই ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও আছে অ্যালুপুরিনল, ফেনিটমেন, ফেনোবারবিটাল, আইসোনায়েড, আয়োডিন ইত্যাদি। এ রোগের ক্ষেত্রে শরীরজুড়ে আঁশ হতে দেখা যায়, যা ঘষা দিলে ঝরে পড়তে থাকে। শুরুতে লাল লাল দাগ দিয়ে ত্বকে শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে তার বিস্তার ঘটতে থাকে ও পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু দিনের মধ্যেই ত্বকে আঁশ আকারে উঠে আসতে থাকে। পরবর্তী সময়ে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে তার জীবনে শঙ্কা তৈরি হয়। এমন আরেকটি রোগ হচ্ছে ড্রাগ ইরাপশন। নাম থেকেই বোঝা যায় ড্রাগ বা ওষুধের কারণেই এ রোগটি হয়। এক্ষেত্রে ত্বকের গায়ে র্যাশ বা চাকা ওঠে, যা দেখলেই মনে হয় যেন হাম উঠেছে কিংবা অ্যালার্জি উঠেছে।

ওষুধের কারণে যা হতে পারে : ওষুধের কারণে সাধারণভাবে দুই ধরনের র‌্যাশ হয় যেমন-আর্টিকেরিয়া, যাতে চাকা হয় এবং চুলকানি থাকে। আর এক ধরনের র‌্যাশ হলো : রবিফিলিফর্ম। শেষেরটা বেশি পাওয়া যায় এবং শরীরজুড়ে লাল লাল দাগ অথবা ছোট ছোট দানা বা গোটার আকারে লালচে রঙের হতে দেখা যায়। যেহেতু ওষুধের কারণেই এই রোগটি হয় তাই এ ধরনের র‌্যাশ দেখা দেওয়া মাত্র ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণত যেসব ওষুধের কারণে এ রোগ হয় তা হলো অ্যামোক্সাসিলিন, কোট্রামাইসোল, অ্যামপিসিলিন, পেনিসিলিন, সেফালোসেপারিন, ইরাইথ্রোমাইসিন, সিমেটাডিন ইত্যাদি। (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে) ফিঙ ড্রাগ ইরাপশন নামের আরেকটি রোগে ওষুধ খেলে বারবারই এরকম উপসর্গ নিয়ে রোগটি দেখা দেয়। যতবার ওষুধটি খাবেন ততবারই ত্বকে এ রোগটি একইভাবে দেখা যাবে। দেখতে গোলাকার ডিম্বাকৃতির লালচে চুলকানিযুক্ত, উঁচু অথবা ফোসকাযুক্ত যে কোনোভাবে দৃশ্যমান হতে পারে, যা সেরে যাওয়ার পর স্থানটি কালো রঙের হয়ে থাকে অনেক দিন পর্যন্ত। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওষুধ যার কারণে রোগটি হয় যেমন- টেপ্রাসাইক্লিন, বারবিচুরেট, স্যালিসাইলেটস ইত্যাদি। স্টেভাসন জনসনস সিনড্রম নামের আরেকটি রোগও ওষুধের কারণেই হয়। (তাই চিকিৎসকের পরামর্শে হবে) রোগটি অত্যন্ত জটিল এবং এর থেকে জীবননাশও ঘটতে পারে। প্রথমে ফোসকা আকারে দেখা দেয় যা ঠোঁট, জিহ্বা, মুখের ভেতরে ঘা হয়ে দেখা দেয়। চোখে আক্রমণ ঘটলে অন্ধত্ব বরণ করতে হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মুখ, হাত ও পায়ের তালুতে ফোসকা নিয়ে উঠতে দেখা যায়। ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। এছাড়া গিরায় ব্যথা, যকৃত্ বড় হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ হয় যা চামড়ার ওপর দিয়ে লাল লাল ছোট অথবা বড় দাগ নিয়ে দেখা দেয়, যেটা কখনো কখনো খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, যদি ঠিক সময় ওষুধ খাওয়া শুরু করা না হয়। রোগটির জন্য দায়ী কয়েকটি ওষুধ হলো বারবিচুরেট, কুইনিডিন ইত্যাদি। (অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে) একটি কথা মনে রাখতে হবে, ওষুধ কিন্তু এক ধরনের বিষ। সাধারণত তা জীবাণুর জন্য বিষ হিসেবে কাজ করে। তবে কখনো কখনো শরীরেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। তাই ওষুধ থেকে দূরে নয়, ওষুধ ব্যবহারে সতর্ক থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। এজন্য প্রয়োজন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধ গ্রহণ ও ব্যবহার।

ডা. দিদারুল আহসান, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ,

আল-রাজী হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews