ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না নেয়া পর্যন্ত নির্বাচন না করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম
Author,
জান্নাতুল তানভী
Role,
বিবিসি নিউজ বাংলা, ঢাকা
৩৬ মিনিট আগে
'বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে না নেয়া অবধি কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে' অথবা 'চলতি বছর ডিসেম্বরে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হলে গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসাথে করা যেতে পারে'- নির্বাচন ঘিরে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের এমন বক্তব্য নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. ইউনূস এ বছরের ডিসেম্বরে বা আগামী বছরের মার্চে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন।
নির্বাচন কমিশনও ডিসেম্বরেই নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
সিইসি বলেছেন, "সরকার প্রধান যেখানে একটি টাইম ফ্রেম ঘোষণা করেছেন, ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারির শুরু দিকে, আমরা ডিসেম্বর ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত মাস 'ডিসেম্বর'।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কিংবা যে কোনো ফৌজদারী মামলার বিচার একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ফলে ডিসেম্বরের আগে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে তবে কি শেখ হাসিনার বিচারের আগে নির্বাচন নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলটির আপত্তি রয়েছে? ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি করা এই দলটি নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে?
ছবির ক্যাপশান,
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম
জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গতকাল মঙ্গলবার রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও কবর জিয়ারত করেছেন।
সেখানে তিনি বলেছেন, "এই বিচার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে করতে হবে। যেই সময়টুকু এই সরকারের আছে নির্বাচনের আগেই খুনী হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে। যত দিন না আমরা খুনী হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও ওই নির্বাচনের কথা না বলে।"
মি. আলম অবশ্য বিবিসি বাংলাকে তার এ বক্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তিনি জানান অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর বিচারের প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করাই এ কথার উদ্দেশ্য।
"ব্যাপারটা এরকম নয় যতক্ষণ না বিচার হচ্ছে ততক্ষণ নির্বাচন নয়। ব্যাপারটা বরং এরকম এই কথার মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় ও সর্বোপরি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রত্যক্ষভাবে চাপ প্রয়োগ করা যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাযজ্ঞের সাথে সম্পর্কিত যারা প্রধান আসামি ও নির্দেশদাতা তাদের বিচার নিশ্চিত ও প্রক্রিয়া আরও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা যায়," বলছিলেন মি. আলম।
যদিও নির্বাচনের আগেই অন্তত শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
"শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শেখ হাসিনা গণহত্যা চালালো, নৃশংসতা চালালো, হাজারের ওপর মানুষের প্রাণ নিলো অন্তত সেই একটা মানুষের বিচারটা যেন নির্বাচনের আগে নিশ্চিত করা যায়। কারণ সাধারণ ৫০ জন মানুষের বিচার হওয়ার চেয়ে একজন খুনি শেখ হাসিনার বিচার হওয়াটা অনেক বেশি ইমপ্যাক্টফুল (কার্যকর)। আমাদের কাছে অনেক বেশি কার্যকরী," বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির এই নেতা।
ছবির উৎস, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরকে ঘিরেই সরকারের নির্বাচন প্রস্তুতি দৃশ্যমান।
ফলে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণদের নিয়ে গঠিত নতুন এই রাজনৈতিক দলটির নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের বক্তব্য এক ধরনের সংশয় তৈরি করছে।
এই দলের নেতারা বলছেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্ব শর্ত পূরণ করে তবেই অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যে সময়টাকে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত মনে করবে সেখানে জোরালোভাবে দ্বিমত করবে না তারা।
দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বিবিসি বাংলাকে বলেন, "কিন্তু তার পূর্বে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করার যে পূর্বশর্ত রয়েছে যেমন বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মতো আস্থা অর্জন করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের দায়িত্বগুলো পালন করার মতো অবস্থা হওয়া কিংবা নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ নির্বাচন দিতে পারবে এরকম আস্থা অর্জনের কোয়ালিটি নিশ্চিত করা এই বিষয়গুলো যখন হয়ে যাবে তখন অন্তর্বর্তী সরকার মনে করলে নির্বাচন দিতে পারবে।"
দলটির নেতারা মনে করছেন প্রয়োজনীয় সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করলে তা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে তার সাথে প্রতারণা করা হবে।
মি. আলম বলেন, "যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে এই সিস্টেমগুলো সংস্কার করে সেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারে তাহলে তো সেখানে আমরা দ্বিমত জানাবো না। কিন্তু দিন শেষে আমাদের একমাত্র প্রায়োরিটি যদি শুধুমাত্র নির্বাচন হয় তবে অভ্যুত্থান পরবর্তী মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা এটার সাথে একটা প্রতারণা করা হবে।"
পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বরাবরই আগে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে।
এমনকি রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই যে কোনো সংস্কার করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
এই বিষয়টি উল্লেখ করলে মি. আলম জানান রাজনৈতিক সরকারের অধীনে সংস্কারের বাস্তবতা অধরাই থেকে যায়।
কারণ সেখানে জনগণের এবং রাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে কোনো ব্যক্তির বা দলের স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পেয়ে যায়।
বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোনো নির্দিষ্ট দলের না হওয়াতে দেশের মানুষের স্বার্থে এই সংস্কারগুলো যুগোপোযোগীভাবে করতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা মি. আলম।
ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব বলে মনে করেন কি না এমন প্রশ্নে মি. আলম বলেন, "রাজনৈতিক দলগুলো যদি উদার মনোভাব দেখিয়ে সহযোগিতা করে তাহলে ডিসেম্বর কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে এই প্রয়োজনীয় সংস্কার করা সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের আরও সুদৃঢ় অবস্থান লাগবে। সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, আমলাতন্ত্র, অন্তর্বর্তী সরকার সকলের যৌথ প্রচেষ্টা লাগবে।"
তবে দলটির নেতারা মনে করছেন সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের যে সুদৃঢ় অবস্থান, গতি বা প্রচেষ্টা থাকা দরকার এখন পর্যন্ত সেটি নেই।
যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেক্ষেত্রে দলটি অংশ নিতে পারবে বলেও জানান মি. আলম।
"যেভাবে একটি রাজনৈতিক দল যে সকল শর্ত পূরণ করা সাপেক্ষে নিবন্ধন নেয়া ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে থাকে আমরা আমাদের সেই প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করবো এবং আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি নির্বাচনের পূর্বেই আমরা প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে আমাদের দলের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবো," বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা সারজিস আলম।