টার্মিনালের ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় মূল রাস্তার ওপরেই দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে অনেক বাস। এতে সড়কের দুই পাশেই বেশ খানিকটা জায়গা বাসগুলোর দখলে চলে যাওয়ায় তৈরি হচ্ছে যানজট। তার ওপর টার্মিনাল এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বিকল। অল্প বৃষ্টিতেই তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। ভেতরে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পথে রাস্তা পার হওয়ার ঝক্কি তো আছেই।

এটা রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আন্তজেলা বাস টার্মিনালটির নিত্যদিনের চিত্র। ১৯৮৫ সালে চালু হওয়া এই টার্মিনালে সর্বোচ্চ আড়াই শ বাস রাখার জায়গা ছিল। এখন সেখান থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছয় শর বেশি গাড়ি চলাচল করছে।

গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার পর থেকে টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাতরাস্তা থেকে মহাখালী মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশে অন্তত ৩০টি স্বল্প ও দূরপাল্লার বাস দাঁড় করিয়ে রাখা। মূল সড়কের ওপরেই যাত্রী ওঠানোর কাজ চলছে।

মহাখালী টার্মিনাল থেকে বাস আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী-ভোগড়া বাইপাস ও টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহ, বগুড়া, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি। গন্তব্যে যাওয়ার জন্য টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পথে গাড়িগুলোকে ইউ টার্ন নিতে হয়, যা এই এলাকায় যানজট তৈরি হওয়ার আরেকটি কারণ। গতকালও দেখা গেল, টার্মিনাল থেকে কয়েক দফায় এক সারিতে পাঁচ-সাতটি করে গাড়ি বের হচ্ছে। তাতে মূল সড়কের দুই পাশে চলাচলকারী অন্য যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।

এসব বিষয়ে কথা হয় মহাখালী টার্মিনাল মালিক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেকের সঙ্গে। মূল সড়কের ওপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া আমাদের উপায় নেই। এই টার্মিনাল থেকে ছয় শর বেশি গাড়ি চলাচল করে। ভেতরে দুই-আড়াই শর বেশি গাড়ি ধরে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা টার্মিনাল সম্প্রসারণের জন্য ডিএনসিসি মার্কেটের জায়গাটা চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আমাদের দেওয়া হয়নি। এখন টার্মিনালের পেছনে সরকারি কিছু জায়গা খালি আছে। আমরা অনুরোধ করব ওই জায়গাটা যেন টার্মিনালের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।’

মহাখালী বাস টার্মিনালের বাস ধারণক্ষমতা আড়াই শ। আছে ছয় শর বেশি গাড়ি l প্রথম আলোটার্মিনালের মূল ভবনসহ ভেতরের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে নিজেদের অস্বস্তির কথা জানালেন কয়েকজন যাত্রী। রকিবুল ইসলাম নামের ময়মনসিংহগামী এক যাত্রী বলেন, ঢাকার অন্য দুটি টার্মিনালের থেকে এখানে যাত্রীর চাপ তুলনামূলকভাবে কম। তারপরও জায়গাটি কখনো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখতে পাই না।’ এ ছাড়া টার্মিনাল ভবনের নিচতলায় যাত্রীদের বসার জায়গা অনুপাতে ফ্যানের সংখ্যা কম বলে অভিযোগ জানান একজন।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ টার্মিনালের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ‘ব্যর্থতার’ জন্য উত্তর সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমকে দুষলেন মালিক সমিতির কয়েকজন নেতা। সমিতির কার্যকরী সভাপতি তারেক মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনালের সব কটি ড্রেন ভরাট হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়। সিটি করপোরেশন থেকে নিয়োগ দেওয়া আটজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর একজনও কাজ করে না। মালিক সমিতির বেতনভুক্ত ১০ জন কর্মী দিয়ে কোনোভাবে কাজ চালাতে হয়।

টার্মিনাল ভবনের দোতলায় মালিক সমিতির কার্যালয়ের পাশেই সিটি করপোরেশনের একটি কার্যালয় আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে কার্যালয়ের সহকারী ব্যবস্থাপক জোসন আলীকে সেখানে পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারী ওয়াহিদুল আলম জানান, তিনি এখন গাবতলীতে আছেন।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এম সাবের সুলতান প্রথম আলোকে বলেন, ‘লোকবলের অভাবে একজন সহকারী ব্যবস্থাপককে দিয়েই ঢাকার তিনটি টার্মিনালের কাজ চালাতে হয়। তাই সার্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছুটা ঘাটতি হয়তো হচ্ছে।’

টার্মিনালে ডিএনসিসির নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাজ না করার অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর ভাষ্য, ‘এটা ঠিক এসব পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেশির ভাগের বয়স হয়েছে। ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু টার্মিনালে যাঁরা আমাদের হয়ে রাজস্ব আদায় করছেন, চুক্তি অনুসারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব তাঁদের। তাঁরা হয়তো সেই দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন না।’

আর টার্মিনালে জলাবদ্ধতার বিষয়ে কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত মালিক সমিতির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন সাবের সুলতান। টার্মিনাল সম্প্রসারণের জন্য মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জমি বরাদ্দের দাবি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখনকার যে পরিস্থিতি, যে বাস্তবতা, তাতে এই জায়গায় টার্মিনাল সম্প্রসারণের কোনো সুযোগ নেই। বরং এটি কীভাবে সুবিধাজনক জায়গায় স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews