ছবির উৎস, https://www.facebook.com/Asif07M
ছবির ক্যাপশান,
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
২ ঘন্টা আগে
সম্প্রতি একটি বক্তব্য ঘিরে আবারো সমালোচনার মুখে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরস,আলোচনা, সমালোচনা কিংবা ট্রলের ঘটনা ঘটে চলেছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্য ঘিরে রাষ্ট্রের উচ্চ পদে থাকা ব্যক্তিদের সুযোগ-সুবিধা বা বেতন-ভাতার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া জানে আলম অপু সম্প্রতি এক ভিডিও বার্তায়আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।
সেই অভিযোগের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
যেখানে রাতের খাবার খেতে মাঝে-মধ্যে ঢাকায় পূর্বাচলের তিনশ ফিট সংলগ্ন নীলা মার্কেটে অথবা গুলশান এলাকার অভিজাত ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার কথা বলেন মি. ভুঁইয়া।
তার এই বক্তব্য সামনে আসতেই নানা মাধ্যমে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমও এ নিয়ে নানা সংবাদ প্রকাশ করে।
সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে যে বেতন-ভাতা তিনি পান, তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে খাওয়া কিংবা শিক্ষার্থী প্রতিনিধি হিসেবে তার বিলাসী জীবন নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সমালোচকদের অনেকে।
অতীতেও দামি জুতা কিংবা হযরাত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন চেকিংয়ে নিজের হ্যান্ডব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনায়ও সমালোচিত হয়েছিলেন উপদেষ্টা আসিফ।
নানা আলোচনা-সমালোচনার ব্যাপারে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাৎক্ষণিকভাবে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ছবির ক্যাপশান,
আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে নানা সমালোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে চাঁদাবাজির ওই ঘটনায় নিজের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন মি. ভূঁইয়া।
বক্তব্যে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়েই ভোররাতে পূর্বাচলে হাঁসের মাংস খেতে যাওয়া অথবা ওয়েস্টিন হোটেলে যাওয়ার প্রসঙ্গটি আনেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, "রাতে যখন কাজ শেষ হয় কখনো কখনো ভোর হয়ে যায়। ওই সময় বাসায় আসলে খাওয়া দাওয়া দেয়ার মতো কেউ থাকেনা। আমি মাঝে-মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই যাই তিনশ ফিটের নীলা মার্কেটে। ওইখানে হাসের মাংস খুব ভালো পাওয়া যায় ওইখানে হয়তো যায় চার-পাঁচজন মিলে আবার মাঝেমধ্যে ওইটা আবার বেশি ভোর হয়ে গেলে বন্ধ থাকে, তখন ওইদিকে ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়।"
তার এই বক্তব্য মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। সমালোচকদের অনেকে সামাজিক মাধ্যমে ট্রলও করেন আসিফ মাহমুদকে নিয়ে। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে তার এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। সমালোচনা হওয়া তার অতীতের নানা ঘটনাও টেনে আনেন কেউ কেউ।
সরকারের একজন উপদেষ্টা হিসেবে তার বেতন-ভাতার সঙ্গে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয়টি কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ এমন প্রশ্ন তুলতেও দেখা গেছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের ছবির সঙ্গে হাঁসের ছবি জুড়ে দিয়ে কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি নানা বক্তব্য প্রচার করে সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের জন্ম দেন অনেকে। রাতে পূর্বাচলের ওই এলাকায় গিয়ে অনেককে হাঁসের মাংস খাওয়ার ছবিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা গেছে।
সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দেন রাজনৈতিক নেতাদেরও কেউ কেউ। তার অতীত জীবনাচরণের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার পরের পরিবর্তন নিয়েও সমালোচনা হয়।
এ নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেয়া এক পোস্টে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ লিখেছেন, "এক সময় ভাত খুঁজতো ক্যান্টিনে, এখন হাঁস খুঁজে ওয়েস্টিনে।"

ছবির উৎস, Getty Images
ছবির ক্যাপশান,
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বক্তব্য ঘিরে সরকারের উপদেষ্টারা কী ধরনের সুযোগ সুবিধা পান বা তাদের বেতন ভাতা কত, আর তা দিয়ে অভিজাত হোটেলে যাওয়ার বিষয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টাদের বেতন- ভাতা কেমন, এর বাইরে তারা সুযোগ- সুবিধা কি পান?
সরকারের উপদেষ্টারা মন্ত্রী সমমর্যাদা হওয়ায় তাদের বেতন ভাতাও এর সমপরিমাণ। যা ২০১৬ সালের মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল অনুযায়ীই নির্ধারিত।
এই আইন অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা মন্ত্রীর সমপরিমাণ বেতনই পেয়ে থাকেন। যার পরিমাণ মাসিক এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান।
নিয়ম অনুযায়ী একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান ২ হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা। এর পাশাপাশি মোবাইল ফোন কেনার জন্যও ৭৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন।
এছাড়া সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য গাড়ি পাবেন। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচও বহন করে সরকার। মন্ত্রী পদমর্যাদা হওয়ায় বর্তমান উপদেষ্টারাও এই সুবিধা পেয়ে থাকেন।
একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান।
এছাড়া আরও একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন পেয়ে থাকেন। এসব সুবিধাও দেওয়া হয় সরকারিভাবে।