• রুশো তাহের

জনৈক সরকারী কর্মকর্তার সঙ্গে করোনা সঙ্কট নিয়ে আলাপকালে রূপপুর প্রসঙ্গ এলো। ভদ্রলোক হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে বললেন, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নাজুক অবস্থায় রেখে কী দরকার ছিল পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের। আমার নিকট আরও জানতে চাইল, রূপপুর প্রকল্প সাইটে করোনার এই সময় রাশিয়ান নাগরিকরা এখনও আছে কিনা। তার কথা শুনে মনে হলো, করোনা সংক্রমণের সময় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরত সব রাশিয়ান নাগরিক বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। বস্তুত রূপপুর নিয়ে ধারাবাহিক বিরোধিতা করোনা সঙ্কটকালে ভিন্নরূপ পেয়েছে। কতিপয় মহল প্রচারণা চালাচ্ছে রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণকাজ করোনা সঙ্কটের জন্য বন্ধ রয়েছে। তাই এই প্রকল্পের কমিশনিংও সময়মতো হবে না। আর অনিবার্যভাবে প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে তা কি আমরা জানি? প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে রাশিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ২৫ শতাংশের অধিক সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পে দেশী-বিদেশী মিলিয়ে প্রায় এগার থেকে বার হাজার বিশেষজ্ঞ, অফিসার ও কর্মী সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পে বিদেশী কর্মীও রয়েছেন দুই হাজারের অধিক যার মধ্যে অধিকাংশই রাশিয়ান। তারা রূপপুর প্রকল্পে বাংলাদেশী ভিসা নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট ও ১৬টি উপ-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকেন। বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও কর্মীগণ নির্দিষ্ট কাজ রুটিনমাফিক সমাপ্ত করে দেশে ফিরে যান এবং অন্য কাজের জন্য অন্য বিশেষজ্ঞ-কর্মীগণ সময়মতো বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এসে এই প্রকল্পে যোগদান করেন। এর ধারাবাহিকতায় রুটিন কাজ সমাপ্ত করে গত মার্চ ও এপ্রিলে যে সকল রাশিয়ান নাগরিক ফিরে যাওয়ার কথা তারা করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ফিরে যেতে পারছিলেন না। অবশেষে রাশিয়ান দূতাবাসের সহায়তায় নিজ দেশে ফিরে গেলেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রে কর্মরত ৭৮ জন রাশিয়ান নাগরিক। চার্টার্ড ফ্লাইট (BI 2584) যোগে সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে তারা রাশিয়া গমন করেন। জানা গেছে, রাশিয়া হতে এপ্রিল মাসে ৩৭০ জন, জুন মাসে ২৩৩ জন রূপপুর প্রকল্পে যোগদান করেছে। জুলাই ও আগস্ট মাসে যথাক্রমে ৫০০ ও ৩০০ জন রাশিয়ান নিউক্লিয়ার বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে থেমে নেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সকল বিধি অনুসরণ করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে। সকল কর্মী, অফিসার ও বিশেষজ্ঞের নিকট হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছে। প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্ট, অফিস বিল্ডিং ও ক্যান্টিনের প্রবেশ পয়েন্টে বসানো হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের মেডিক্যাল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বছরের শেষ দিকে মূল রিএ্যাক্টর বসানোর কাজ শুরু হবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ৩০ নবেম্বর ২০১৭ এই বিদ্যুতকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২ অক্টোবর ২০১৩ বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের প্রথম পর্যায় কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রীর তিনবার আগমনেই প্রতীয়মান হয় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প সরকার তথা দেশের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের আগে ৮ জুলাই ২০১৮ বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে প্রয়োজনীয় লাইসেন্স প্রদান করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণে কাজ করছে রাশিয়ান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ্যাটমস্ট্রয় এক্সপোর্ট। ওই প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শেষ করতে ৬৬ মাস বা সাড়ে পাঁচ বছর সময় পাবে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় ইউনিটের কমিশনিং হবে। উল্লেখ্য প্রথম ইউনিটের কমিশনিং হবে ২০২৩ সালের মে-জুন মাসে।

‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির রূপপুরের দুটি ইউনিটের প্রতিটিতে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। রূপপুর প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা। রাশিয়ার সঙ্গে সই হওয়া জেনারেল কন্টাক্ট অনুযায়ী এই ব্যয় নির্ধারিত হয়। প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দিচ্ছে রাশিয়া। বাকি ১০ শতাংশ যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।

রূপপুর প্রকল্প বাঙালী জাতির অর্ধশতকের স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নপূরণের কা-ারি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হলো, শুরু থেকেই কখনও পরিবেশ-প্রতিবেশের কথা বলে, কখনও অধিক ব্যয়ের কথা বলে, কখনও বা ইউরোপসহ পৃথিবীতে পরমাণু বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এই প্রচারণা চালিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরোধিতা করা হচ্ছে। এখন প্রচারণা চালানো হচ্ছে করোনা সঙ্কটে রাশিয়ানরাসহ বিদেশিরা চলে যাচ্ছে। মোদ্দাকথা এ হচ্ছে বাংলাদেশের পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদনের যুগে পদার্পণে ষড়যন্ত্র ও উন্নয়ন বিরোধিতা। এই ষড়যন্ত্র ও বিরোধিতা থেকে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাসহ সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

লেখক : গবেষক



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews