দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মতো সশস্ত্র বাহিনীর একটি স্থায়ী ব্রিগেড বিদেশের মাটিতে মোতায়েন করলো জার্মানি। ব্রিগেডটি চলতি সপ্তাহে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে পৌঁছেছে বলে বৃহস্পতিবার (২২ মে) জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মার্জ।
ভিলনিয়াসে এক সামরিক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান ব্রিগেড মোতায়েনের কথা জানান চ্যান্সেলর মার্জ। তিনি বলেন, আমাদের বাল্টিক মিত্রদের নিরাপত্তা মানেই আমাদের নিরাপত্তা।
এদিকে, শনিবার পৃথক সাক্ষাৎকারে জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়ুস সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, সেনাবাহিনীতে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক না মিললে ২০২৬ সালের শুরু থেকে বাধ্যতামূলক যোগদানের বিধি পুনরায় চালু করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে জার্মানি।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই সামরিক শক্তি বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানি। দেশটির সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, আগামী কয়েক বছরে ন্যাটোর শর্ত পূরণে অতিরিক্ত এক লাখ সেনার প্রয়োজন হবে। তবে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক না পাওয়া গেলে এই লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
২০১১ সালে সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক যোগদান বিধি বাতিল করলেও, বর্তমান জোট সরকার নতুন করে বাধ্যতামূলক যোগদান বিধি চালুর সম্ভাবনার বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও পিস্তোরিয়ুসের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি (এসপিডি) ঐতিহাসিকভাবে স্বেচ্ছাসেবকভিত্তিক ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।
রাশিয়াকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিরাপত্তা হুমকি এবং ইউরোপের নিরাপত্তায় মার্কিন সংশ্লিষ্টতা হ্রাসের সম্ভাবনার মধ্যে এই পদক্ষেপগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকরা। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিজেদেরই মনোযোগী হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউরোপীয় মিত্রদের অনেকটা পাশ কাটিয়েই কূটনৈতিক পন্থায় যুদ্ধাবসানের জন্য চাপ দিচ্ছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায়, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হুমকি নিয়ে শঙ্কিত ইউরোপীয় নেতারা।
পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে রয়েছে তিনটি বাল্টিক দেশ—লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া। এই দেশগুলোকে মূল ন্যাটো ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করে একমাত্র সুওয়াকি গ্যাপ নামে পরিচিত একটি সরু করিডোর, যা রাশিয়া ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের মাঝখানে অবস্থিত।
সেনা মোতায়েনের বিষয়ে চ্যান্সেলর মার্জ বলেন, রাশিয়া কেবল ইউক্রেন নয়, সমগ্র ইউরোপের ভূখণ্ডই পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করছে।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেডা অভিযোগ করেন, রাশিয়া ও বেলারুশ ইতিমধ্যে লিথুয়ানিয়া সীমান্তে সামরিক মহড়া শুরু করেছে।
নতুন জার্মান ব্রিগেডটি রুডনিনকাই শহরে অবস্থিত হবে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে পুরোপুরি কার্যকর হওয়ার কথা। এতে থাকছে প্রায় চার হাজার ৮০০ সেনা, কয়েকশ বেসামরিক কর্মী, এবং সাঁজোয়া যানসহ প্রায় দুহাজার সামরিক বাহন।
চ্যান্সেলর মার্জ বলেছেন, ন্যাটোর কোনও সদস্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে উঠলে, তাদের স্মরণ রাখা উচিত, পুরো জোট তাদের একসঙ্গে প্রতিহত করবে।
তথ্যসূত্র: এনবিসি নিউজ, রয়টার্স