একটা সময় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই ছিল ক্রীড়ামোদীদের গায়ে শিহরণ জাগানো উত্তেজনা। এখন আর সেই উত্তেজনা আগের মতো নেই। উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠায় রং ছড়ানোর সেই জায়গাটা ক্রমেই দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচও থাকে উত্তেজনায় ঠাসা। সম্প্রতি প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে যে কোনো ফরম্যাটের ক্রিকেটেই মাঠে কি মাঠের বাইরে দেখা গেছে বাড়তি উন্মাদনা। সেটা অকপটে স্বীকারও করেছেন ভারতীয় তারকা ক্রিকেটার দিনেশ কার্তিক।
আজ এমনই এক উত্তেজনার ম্যাচে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। বাংলাদেশের কোনো টুর্নামেন্টেরই ফাইনালে খেলার অতীত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। এর আগে বেশ কটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও লাল-সবুজের দলকে ফিরতে হয়েছিল খালি হাতে। আর যে কোনো পর্যায়ের ক্রিকেটে ভারত যেন আরও দুর্জেয় হয়ে উঠছে বাংলাদেশের সামনে। এবার তাই বাংলাদেশের অপেক্ষাটা স্বপ্ন পূরণের। একই সঙ্গে ভারতের বিপক্ষে গেল ওয়ার্ল্ড টি-২০`র ম্যাচে হারের ক্ষত শুকানোরও। এ সবই পূর্ণতা পাবে যদি ভারতের বিপক্ষে জয়টা ছিনিয়ে আনা যায়।
যদিও ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ভারতের বিপক্ষে সুখ স্মৃতি নেই টাইগারদের। সাত ম্যাচে প্রাপ্তির খাতাটাই শূন্য। নিদাহাস ট্রফিতে দুই দেখায় খর্ব শক্তির ভারতের সামনে পথ হারায় বাংলাদেশ। এর মাঝে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে রেকর্ড গড়ে জয় তুলে নেয় মাহমুদউল্লার দল। তাতেই ভালো কিছু করার স্বপ্ন আরও বড় হয় ভক্তদের। আর গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে অসাধারণ জয় দেখাচ্ছে ফাইনালে ভারত বধের স্বপ্ন।
শক্তি-সামর্থ্য থাকার পরও কেন যেন ভারতের বিপক্ষেই জয়ের হিসাব মিলছিল না। তবে এবার আর কোনো স্নায়ু চাপ নয়। ফাইনালে স্বাভাবিক খেলাটাই উপহার দিতে চায় সাকিব বাহিনী। ভারতের বিপক্ষে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে অধরা জয় স্পর্শ করার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়ন ট্রফির গায়ে চুমু আঁকতে মরিয়া টাইগাররা। ভারতীয় দলের অভিজ্ঞ পাঁচ সদস্যই বিশ্রামে থাকলেও এই দলটিই সবার আগে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। প্রতিপক্ষকে সমীহ করলেও এই দলকে হারানোর মতো যোগ্য সদস্যও বাংলাদেশ দলে আছেন। টাইগার শিবিরে সবচেয়ে বড় সুখবর দলের নির্ভরশীল অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান চোটকে পুরোপুরি বিদায় জানিয়ে ফিরে এসেছেন স্বরূপে। দলকে সামনে থেকে দিচ্ছেন নেতৃত্বও।
মাহমুদউল্লাহকে দুঃসময়ে দলের যে কতটা প্রয়োজন সেটা প্রমাণ দিয়েছেন তিনি গত ম্যাচেও। দলের বিপদের সময়ে দলকে টেনে তুলেছেন খাদের কিনারা থেকে। ছিনিয়ে এনেছেন জয়। মুশফিকুর রহিম আছেন ধারাবাহিক ফর্মে। সাকিব আল হাসান, রুবেল হোসেন, মুস্তাফিজুর রহমান বোলিংয়ে সেরাটা দিলে ব্যাটে- বলে মিলিয়ে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালটা হতে পারে লাল-সবুজের রঙে রাঙানো।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত জয়ের স্বপ্ন দেখলেও টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফরমেন্সকে সমীহই করছে। তাইতো ম্যাচের আগের দিন সকাল থেকেই নিবিড় অনুশীলন করছে ভারত। নেটে দীর্ঘসময় ব্যাটিং করেছে রোহিত-ধাওয়ানরা। অন্যপাশে একটানা বোলিং করছেন চাহাল-ওয়াশিংটন সুন্দররাও। তাদের এই অখণ্ড মনোযোগের আরেকটি কারণ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ যেভাবে জিতেছে তা ছিল একটি সতর্ক বার্তাও।
টাইগারদের জন্য শোকগাঁথা হয়ে ওঠা ফাইনালকে জয় করার সময় এবার এসেছে। ব্যর্থতার অশ্রু আর ঝরাতে চায় না দেশ। এবার বদলাবে ইতিহাস। বিজয় মিছিলের স্রোত এতদিন একটু একটু করে জমে জলোচ্ছ্বাসে পরিণত হয়েছে। আজ সেই জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে যাক ব্যর্থতা আর হতাশা। বিজয় উল্লাসে মেতে উঠুক দেশ।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ