‘অ্যাংগ্রি ইয়াং মেন’, আধুনিক ইউরোপ বিনির্মাণের এক নিঃসঙ্গ লড়াকু প্লাটুন। শিল্প-সংস্কৃতির পুরনো জীর্ণতা, ভৌতিক গল্পকে হটিয়ে আধুনিক, উদার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই ছিল এর লক্ষ্য। বাঙালির জীবনেও এ রকম নীরব লড়াই ঘটে চলেছে। প্রথাগত লুটপাট, মৌলবাদী আচরণ, সাম্প্রদায়িক সময়কে হটিয়ে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার ও স্বপ্ন পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

ভয়ংকর বিষয় হলো, তাঁর লড়াইয়ের বিপরীতে আরেকটি ধারা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কারণ সমৃদ্ধির পথে এগোনো দেশকে পেছনের দিকে টেনে ধরতে প্রায় সব কিছুতেই উপভোগ ও সঞ্চয়ের চেয়ে খরচের নেশা ঢুকিয়ে দিতে তৎপরতা চলছে। রাজনীতি মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে, মাধুর্য সম্পন্ন করে। কিন্তু ট্র্যাজেডি হলো, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্রসংগঠন শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দেশের রাজনীতিকে লুট, পয়সার ছড়াছড়ি এবং অযোগ্যদের জোর করে সামনে আনার রেওয়াজ সৃষ্টি করেছে। রাজনীতিকে ‘দশটা হুন্ডা বিশটা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা’ থেকে শুরু করে অর্থ, লোভ, খুন, গুম, হত্যার পথে নিয়ে গেছে। সংগঠন কিংবা দল করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার এক রাজনৈতিক চল শুরু করেছে। ফলে সব সংগঠনে চেয়ার আঁকড়ে ধরে রাখার অসুস্থ মানসিকতা প্রকট থেকে প্রকটতর হতে শুরু করেছে।

ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগকেও নানা সময়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে, হচ্ছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগকে দেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বারবার উদ্ধৃত করে গেছেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এই ছাত্রসংগঠনের প্রায় ২৭ হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। সংগঠনটি পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারদের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অদম্য শেখ হাসিনার পাশে থেকে সব কিছুকে মোকাবেলা করেছে।

বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুণ্যবতী শেখ হাসিনা প্রতিনিয়ত নিজেকে শাণিত করেন, বিনির্মাণ করেন। কাজেই তাঁর উন্নয়ন দর্শন ও অর্জনকে অনুভব করে সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়াই এই সময়ের নৈতিক দায়বদ্ধতা।

রাজনৈতিক বাস্তবতায় শেখ হাসিনাকে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই যার যার স্থান থেকে দায়িত্ববোধের আদলে তৈরি হওয়াটাই শ্রেয়। পাশাপাশি আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যাঁরা অযোগ্যদের যোগ্য প্রমাণে এগিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বাঙালির গর্বের ধন পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করেও ঘরে-বাইরে শেখ হাসিনাকে ব্যর্থ প্রমাণে একটি অংশ জোরালো ভূমিকা রেখেছে। সরকারের ভেতর সরকার বিনির্মাণের চেষ্টা করেছে। এরা মূলত নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য দল ও সরকারকে চাপে রেখে বৃহৎ স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠা বোধ করে না।

এসব বিবেচনায়ই শেখ হাসিনা বাঙালির বেহুলা। নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের অন্তিম সারথি। একলা চলো নীতি তাঁর সহায়। ভোগের দাসত্ব তাঁকে ছুঁতে পারেনি। তিনি আজ একক সত্তার দ্যুতিতে আলোকিত। শেখ হাসিনা এখন একক সত্তায় ভাস্বর। দূরদৃষ্টিতে বিশ্বের গৌরব।

বৈশ্বিক বাতায়নে আগামী দিনের বাংলাদেশকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, বৈশ্বিক ক্ষমতার কেন্দ্র ও অংশীদারির টানাটানি—সব মিলিয়ে বৈশ্বিক জ্বালানি, অর্থনৈতিক সংকটের ছোঁয়া এখানেও লাগতে পারে। বিস্ময়কর ব্যাপার, এই অশুভ সত্যকে কেউ আঁচ করতে পারেনি, কিংবা বলা যায় গায়েও লাগায়নি। অথচ শেখ হাসিনা এই অপ্রত্যাশিত অমোঘ সত্যকেও উপলব্ধি করেছেন এবং একে যেন আলিঙ্গন করতে না হয় সে জন্যও জাতিকে মানসিক ও জাগতিকভাবে প্রস্তুত করে চলেছেন। অর্থনৈতিকভাবে ব্যয় সংকোচন নীতিতে হাঁটার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

ছাত্রসংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তা ছাড়া দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশই শিক্ষার্থী। কাজেই শিক্ষার্থীদের মাঝে মিতব্যয়িতা, সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে সঞ্চয়পত্র, বিনা মূল্যে টিউশনির ব্যবস্থা করতে পারে। এতে দেশের সংস্কৃতিগত ও জাতীয়তাবোধ বাড়ার সুযোগ তৈরি হবে।

অপ্রিয় সত্য হলো, দেশের রাজনীতিতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য মানুষের অভাব অনুভূত। বিস্তৃত অর্থে সিভিল সোসাইটির বড্ড অভাব। শেখ হাসিনাও হয়তো সেটা অনুভব করছেন। সব সংকট সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লড়াইটাই চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘুম ভাঙানোর এই লড়াইয়ে এখন প্রয়োজন সম্মিলিত সচেতনতা ও সজাগ দৃষ্টি।

লেখক : প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ

[email protected]



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews