হজব্রত পালনের জন্য শারীরিক পরিশ্রম এবং সৌদি আরবের পরিবেশগত ভিন্নতার কারণে হাজিরা নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হন। তাপমাত্রা বেশি ও মাথা উন্মুক্ত থাকার কারণে পুরুষের মধ্যে গরমজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা বেশি। এ ছাড়া হজযাত্রীদের সংক্রামক রোগের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে মেনিনগোক্কাল মেনিনজাইটিস বা মেনিনগোক্কাস নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত ইনফেকশনের বিষয়টিকে বেশ সতর্কতার সঙ্গে দেখা উচিত। এ ছাড়া এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি এবং সি’র ঝুঁকিও রয়েছে। সবচেয়ে জটিল হতে পারে মার্স ভাইরাসের আক্রমণ। লিখেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

* স্বাস্থ্য সমস্যায় করণীয় ও সতর্কতা

হজ পালনে যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকেই বেশ বয়স্ক, আবার তাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের দীর্ঘমেয়াদি রোগ। বয়সের কারণে হজের মতো কঠিন শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে অনেকেই স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। হজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমনকি হজ থেকে ফেরার পরও রোগব্যাধি বা স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

* হিট স্ট্রোক

অতিরিক্ত গরমের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে এই সমস্যা হয়। তাই হজের সময় রোদ এড়াতে কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখতে হবে। প্রয়োজনে মাথায় সাদা ছাতা ব্যবহার করতে হবে।

* পানিশূন্যতা

অতিরিক্ত গরমজনিত কারণে অনেকের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। এই ঝুঁকি এড়াতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া লবণের ঘাটতি মেটানোর জন্য কিছুটা লবণাক্ত খাবার এ সময় দরকার হয়। শরীরের পানিস্বল্পতা এড়াতে সঙ্গে বিশুদ্ধ পানি রাখতে হবে। অতিরিক্ত ঘামের কারণে সৃষ্ট শারীরিক অবসাদ কাটাতে খাবার স্যালাইন গ্রহণ করা যেতে পারে, যা ডায়রিয়া হলেও উপকারে আসে। তাই সঙ্গে নিতে পারেন খাবার স্যালাইনও। হজ পালনের সময় ভিড়ের মধ্যে একজন হজযাত্রী থেকে অন্যজনের দূরত্ব সামান্য থাকে। ফলে যে কোনো সংক্রামক রোগ খুব সহজেই একজন থেকে অন্যজনে ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে হোটেল বা অবস্থানস্থল থেকে বের হওয়ার সময় মুখে মাস্ক পরা যেতে পারে।

* রোগের সংক্রমণ

বেশিরভাগ হজযাত্রীই গলাব্যথা, কাশি, ঘন ঘন হাঁচি, সর্দি, নিউমোনিয়া এবং জ্বরে ভুগে থাকেন। হঠাৎ পরিবেশ পরিবর্তনের জন্য এমনটি হয়ে থাকে। এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সাধারণ কিছু ওষুধপত্র যেমন, ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, হাঁচি, সর্দির জন্য ফেক্সোফেনাডিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। এগুলো অল্প কিছু সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়াই ভালো। অ্যাজমা বা হাঁপানি থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে হজব্রত পালনের প্রস্তুতি নিতে হবে। ইনহেলার বা পোর্টেবল নেবুলাইজার সঙ্গে রাখতে হবে। মসজিদে বা অন্য কোথাও চলাফেরার সময় কড়া সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ সুগন্ধি হাঁপানি এবং বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা মাইগ্রেনের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

* পড়ে যাওয়া এবং হাত-পা মচকে যাওয়ার ঝুঁকি

হজের সময় প্রচুর হাঁটতে হয়, তাই আরামদায়ক জুতা পরবেন। তা না হলে অনেক হাঁটার ফলে পায়ে ক্ষত বা প্রদাহ হতে পারে। যে কোনো ব্যক্তি বিশেষ করে প্রবীণরা খুব সাবধানে চলাফেরা করবেন। কারণ, অসাবধানতায় অথবা জোরে হাঁটাচলা করলে যেকেউ পড়ে যেতে পারেন। এতে মচকে যাওয়া থেকে শুরু করে হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এ ব্যাপারে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে কারও সাহায্য সহযোগিতা নিতে হবে। হজব্রত পালনের সময় হজযাত্রীদের অনেক হাঁটতে হয়। কাজেই দেশে থাকতেই হাঁটার প্রস্তুতি নিতে হবে। হাঁটা খুব ভালো ব্যায়াম। হজের জন্য রওনা হওয়ার ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ আগে থেকেই হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। হজের সময় অনেকেরই মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত সমস্যা হতে পারে। তাই মেনিনজাইটিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। এমনকি ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। হজযাত্রীদের হজক্যাম্পেই এ ধরনের ভ্যাকসিন বা টিকা দেওয়া হয়ে থাকে।

* ডায়াবেটিক রোগীর পায়ের যত্ন

এ রোগীদের পায়ে নরম অথচ টেকসই জুতা পরতে হবে। তা না হলে সামান্য আঘাতে পায়ে ডায়াবেটিসজনিত বড় ক্ষত তৈরি হতে পারে। এছাড়া অন্য ব্যক্তিদেরও পায়ের যত্ন হিসাবে নখ কাটা উচিত।

* দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের করণীয়

যারা আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভোগেন যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস, হৃদরোগ, কিডনি ও লিভারের রোগ বা অন্যান্য ক্রনিক রোগ, তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ নিতে ভুলবেন না। ডায়াবেটিস রোগীরা সুগার মাপার মেশিন সঙ্গে রাখতে পারেন। মাঝে মাঝে সুগার মেপে সে অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে এবং অবশ্যই খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যারা গ্যাস্ট্রিকে ভোগেন তারা সঙ্গে করে অ্যান্টাসিড, ওমিপ্রাজল বা লেন্সোপ্রাজল জাতীয় ওষুধ রাখবেন। আমাশয়ের জন্য মেট্রোনিডাজল সঙ্গে নেওয়া ভালো, প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন।

* মহিলাদের পিল খাওয়া

হজ পালনের জন্য মহিলারা ওষুধ বা পিলের মাধ্যমে মাসিক ঋতুস্রাব বন্ধ রেখে হজের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবেন। তবে পিল খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরী।

* অন্যান্য

▶ হজে যাওয়ার কমপক্ষে দুই মাস আগে দাঁতের চেকআপ করানো উচিত। দাঁতে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা নিতে হবে। তা না হলে দাঁতের সামান্য সমস্যা হজব্রত পালনের সময় বড় সমস্যায় ফেলতে পারে। দাঁতের তীব্র ব্যথা নিয়ে হজ পালন কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

▶ যারা চশমা ব্যবহার করেন, একজোড়া অতিরিক্ত চশমা তাদের সঙ্গে নেওয়া উচিত। এ চশমার লেন্স এবং ফ্রেম প্লাস্টিক জাতীয় উপাদানে তৈরি হলে ভালো। কারণ তাতে চশমা সহজে ভাঙবে না, পরতেও আরামদায়ক হতে হবে।

▶ শারীরিকভাবে ফিট থাকলে হজ পালনে কম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন। হজ সফর বেশ দীর্ঘ এবং এর সঙ্গে অবশ্যই কায়িক পরিশ্রম প্রয়োজন। তাই শারীরিক ফিটনেস জরুরি।

▶ কোনো শারীরিক সমস্যা বোধ করলে কাছাকাছি মেডিকেল ক্যাম্পে গিয়ে সেবা নিতে হবে। শরীরের কোনো অংশ কেটে বা ছিলে গেলে এন্টিবায়োটিক ক্রিম ব্যবহার করবেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews