নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, 'কেয়ামত পর্যন্ত আমার উম্মতের একদল লোক সর্বদাই দীনের ওপর অটল থাকবে, তিরস্কারকারীদের তিরস্কার তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।' নবী করিম (সা.)-এর এই অমীয় বাণী অক্ষরে অক্ষরে যাদের ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে সে ক্ষণজন্মা মনীষীদের মধ্যে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন (রহ.) (ফেনুয়ার হুজুর) ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম শায়খুল ইসলাম, আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর সুযোগ্য খলিফা ও যুগশ্রেষ্ঠ ওলিয়ে কামেল। শায়খুল ইসলামের পরশে তিনি একদিকে ছিলেন হাদিস বিশারদ, বিদগ্ধ আলিম ও মুসলিহে উম্মাহ, হাদিয়ে মিল্লাত, মুরশিদে কামিল। অপরদিকে অন্যায় ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন একজন শক্তিমান পুরুষ। এই মানুষটি ১৩১২ বাংলা, ১৯০৫ ইংরেজি ১৩২৬ হিজরি, কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত, লাকসাম থানাধীন ফেনুয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মৌলভী ইমাম উদ্দিন মোল্লা। মাতা 'আমেনা' ছিলেন একজন দীনদার মহীয়সী। মহান রাব্বুল আলামিন তার এই বান্দাকে কবুল করেছেন। তার বয়স ছয় বছর। এক রাতে এশার নামাজ আদায় করতে বাড়ির কাছে মসজিদে যান। এশার নামাজের পর সব মুসলি্ল মসজিদ থেকে বাড়ি চলে গেছেন। তিনি একা একা দীর্ঘক্ষণ নফল নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ এক-দেড় হাত লম্বা একটি সাপ তার সামনে মসজিদের খুঁটির ওপর দিয়ে ওঠা-নামা করছিল। এতে তিনি একটুও বিচলিত হননি বরং একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করে ঘরে এসে মাকে বিস্তারিত বললেন। মা বললেন বেটা! এটা সাপ নয় বরং সাপের আকৃতিতে ফেরেশতা তোমাকে পাহারা দিচ্ছে, যাতে অন্য কেউ তোমার নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে। তখন থেকে মা অাঁচ করতে পেরেছিলেন যে, তার আদরের দুলাল, নয়নের মণি একদিন হক্কানি আলেম ও কুতুবে জমান হবেন। ফলে আল্লাহ পাক তাই করেছেন। স্বদেশের শিক্ষা শেষ করার পর চৌমহনী ইসলামিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। কিন্তু মন ছিল অতৃপ্ত। মনে প্রশান্তি পাচ্ছিলেন না। কারণ মাদারে ইলমি দারুল উলুম দেওবন্দ দেখা হয়নি। সেখানকার বিশ্ববরেণ্য আসাতেজায়ে কেরামদের থেকে ফয়েজ নেওয়া হয়নি। তাই কালবিলম্ব না করে মুরবি্বদের দোয়া নিয়ে দারুল উলুম দেওবন্দের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেলেন। একসময় দারুল উলুম দেওবন্দে পৌঁছে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করলেন। দারুল উলুম থেকে ফারাগাতের পর চিন্তা করলেন, জাহেরি ইলম তো অর্জন হলো। কিন্তু বাতেনি ইলম কীভাবে হাসিল করা যায়। তাই ভারতের থানাবনে হাকিমুল উম্মত হজরত আশ্রাফ আলী থানুভি (রহ.)-এর দরবারে যান। হজরতের কাছে নিজের মনের বাসনা পেশ করলেন। হজরত থানুভি বললেন 'ভাই! মেরে পাছ কিঁউ আয়েহো? জবকে দারুল উলুম মেঁ শায়েখ মাদানি মৌজুদ হায়' (আমার কাছে কেন এসেছ? দারুল উলুমে শায়খ মাদানি উপস্থিত থাকা অবস্থায়) শায়েখ মাদানির প্রতি হজরত থানুভি (রহ.)-এর গভীর ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখে শায়েখ মাদানির প্রতি হজরতের ভক্তি-শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল। কালবিলম্ব না করে দারুল উলুমে শায়েখ মাদানি (রহ.)-এর দরবারে এসে শায়েখের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। শায়েখ মাদানি হজরতের সুলুকের লাইনে এত উন্নতি দেখে বাইয়াত গ্রহণের মাত্র ১৩ দিনের মাথায় খেলাফত দান করেন। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দেশে এসে দেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ ও খানকা কায়েম করেন। মানুষ যাতে সঠিক পদ্ধতিতে এবাদত করতে পারে এবং ওয়াজ ও নসিহতের মাধ্যমে দেশ থেকে শিরক বেদায়াত ও কুংস্কার প্রতিরোধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। দেশ-বিদেশে তার অসংখ্য খলিফা, শাগরেদ, মুরিদ, মুহিব্বীন ও মুতাআল্লেকিন রয়েছেন। তার খোলাফাদের মধ্যে আল্লামা সিরাজুল ইসলাম (রহ.) (বি বাড়িয়ার বড় হুজুর) আল্লামা আলী আকবর (রহ.) (তাবলিগ জামাতের বিশিষ্ট মুরবি্ব) আল্লামা আবদুল মান্নান (রহ.) (ফেনীর পীর সাহেব)সহ দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরামরা।

লেখক : ফেনুয়ার হুজুর (রহ.)-এর নাতি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews