• ইয়াঙ্গুন থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা নিয়ে আসেন আশরাফ
  • ৩ মে আশরাফকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি
  • আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আশরাফ
  • মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার ৫০-৬০ শতাংশ আসে ৫-৬ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে

চট্টগ্রামের হালিশহর থানার শ্যামলী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আলী গত ৭ এপ্রিল শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে মিয়ানমারে যান। ইমিগ্রেশনের কাগজপত্রে তিনি এখনো মিয়ানমারেই আছেন। কিন্তু বাস্তবে গত ৩ মে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি এখন চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছেন।

গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আশরাফ জানিয়েছেন, উড়োজাহাজে করে মিয়ানমারে গেলেও তিনি ফিরে এসেছেন সাগরপথে, ট্রলার ও স্পিডবোটে করে। ইয়াঙ্গুন থেকে ১৩ লাখ ইয়াবা বড়ি নিয়ে আসেন তিনি। বাহক হিসেবে এর জন্য তাঁর ২০ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল।

আশরাফের জবানবন্দি অনুযায়ী, এই ইয়াবার মালিক কক্সবাজারের সিআইপি (গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী) সাইফুল করিম ও চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী জুবায়ের ওরফে রেদোয়ান। ইয়াঙ্গুন থেকে এঁদের জন্য ইয়াবার চালানটি পাঠান সেখানকার বাসিন্দা ও মাদক ব্যবসায়ী আবদুর রহিম। এই চক্রে আরও ১০-১২ জন সক্রিয় সদস্য আছে।

১৩ লাখ ইয়াবা উদ্ধার মামলার তদন্তকারী চট্টগ্রাম গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এই চক্র দেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার কারবারি। এরা খুবই চতুর ও সংঘবদ্ধ।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, মিয়ানমার থেকে আসা মোট ইয়াবার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ আসছে সাইফুলের মতো পাঁচ থেকে ছয়জন ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। তাঁদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ আবদুর রহমান বদির ভাই মুজিবুর রহমান ছাড়াও আছেন নুরুল হক ওরফে ভুট্টু, শাহজাহান আনসারী, মোস্তাক আহমেদ, নুরুল হুদা, জাফর আহমেদ।

৩ মে আশরাফের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন তাঁর ভাই হাসানও। তাঁদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, রাশেদ ওরফে মুন্না নামের আরও এক ইয়াবা কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ১৯ মে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম শফি উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আশরাফ আলী বলেন, কয়েক বছর আগে শ্রমিক হিসেবে সৌদি আরবে যান তিনি। সেখানে পরিচয় হয় মিয়ানমারের বাসিন্দা আবদুর রহিমের সঙ্গে। রহিম তাঁকে জানান, তিনি ইয়াবার ব্যবসা করেন। বাংলাদেশে তাঁর হয়ে কাজ করেন জুবায়ের, রাশেদ ওরফে মুন্না। জুবায়েরের সঙ্গে আছেন আনোয়ারার আলী আকবর, কামরুল ইসলাম, সুমন, আনোয়ার হোসেন ও শওকত আলী।

আশরাফ আদালতকে বলেন, কয়েক মাস আগেও রহিম এই জুবায়েরের কাছে ২০ লাখ ইয়াবা পাঠিয়েছিলেন। আগে-পরে মিলে জুবায়েরের কাছে রহিমের পাওনা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা।

এর আগে জুবায়েরের একটি বড় চালান র‍্যাব আটক করেছিল। মিয়ানমার থেকে সেই চালানটি এনেছিলেন মোজাহার নামের এক মাঝি। এ কারণে রহিমের আত্মীয় কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা রাশেদ তাঁকে (আশরাফ) মিয়ানমারে গিয়ে ইয়াবা নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেন। তাঁকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন রাশেদ।

আশরাফ জবানবন্দিতে বলেন, পাসপোর্ট-ভিসার সব ব্যবস্থা রাশেদ করে দেন। ৭ এপ্রিল বিমানে করে তিনি মিয়ানমারে যান। ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে নামার পর রহিম তাঁকে একটি হোটেলে তোলেন। মিয়ানমার থেকে কীভাবে বের হতে হবে, তার পথঘাট ঠিক না হওয়ায় তিনি ২২ দিন সেই হোটেলে থাকেন। এরপর একদিন সকালবেলায় তাঁকে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ একটি ট্রলারে তুলে দেন রহিম। ট্রলারের সঙ্গে একটি স্পিডবোটও ছিল। আশরাফ জানান, চার দিন সাগরে চলার পর ট্রলারটি বাংলাদেশের জলসীমানায় পৌঁছায়। সেখানে সঙ্গে আনা স্পিডবোটে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়। তিনি স্পিডবোট চালিয়ে কুতুবদিয়া চ্যানেলে আসার পর প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে স্পিডবোটের ইঞ্জিন পানিতে পড়ে যায়। পরে তিনি একটি মাছ ধরার ট্রলারে উঠে ভাটিয়ারীর এলাকার মাদামবিবির হাট ঘাটে নামেন। সেই ঘাটে আগে থেকেই গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন শহীদ নামের এক ব্যক্তি। শহীদ তাঁকে ইয়াবাসহ হালিশহরের বাসায় পৌঁছে দেন।

আশরাফকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ রাশেদ ওরফে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে। রাশেদও ১৯ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তিনি বলেন, ইয়াঙ্গুনের আবদুর রহিম তাঁর ফুফাতো বোনের স্বামী। রহিম ১০ বছর ধরে ইয়াবা ব্যবসা করেন। তিনি বাংলাদেশে এলে শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা জুবায়েরের বাসায় ওঠেন। জুবায়েরের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ১০-১২টি ইয়াবার চালান পাঠিয়েছেন। জুবায়ের ছাড়াও টেকনাফের বাসিন্দা সাইফুল করিম ইয়াঙ্গুন থেকে রহিমের কাছ থেকে সাত-আটটি ইয়াবার চালান নিয়ে এসেছিলেন।

রাশেদ মুন্না বলেন, সাইফুল করিমের কাছে ইয়াবা বিক্রির সাত কোটি টাকা পাওনা আছেন রহিম। এই টাকা আদায়ের জন্য তিনি একাধিকবার সাইফুলের টেকনাফের বাসায় যান। রাশেদ বলেন, আশরাফ যে ১৩ লাখ ইয়াবা এনেছিলেন, তা শাহপরীর দ্বীপের নাইম হাবিব, নুর আলম, মোহাম্মদ আলম ও শহীদের মাধ্যমে বিক্রির কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই পুলিশ সেগুলো আটক করে।

টেকনাফের শীলবুনিয়া পাড়ার চিকিৎসক মো. হানিফের ছেলে সাইফুল করিমের বিরুদ্ধে মাদকের কোনো মামলা নেই। তবে তাঁর সাত ভাইয়ের ছয়জনের নাম ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকায় রয়েছে।

২০০৭ সালেও সাইফুল করিম স্বল্প বেতনে একটি আড়তে কাজ করতেন। এখন রিসোর্টসহ অনেক সম্পদের মালিক। প্রতিষ্ঠা করেছেন এস কে জি গ্রুপ নামে কোম্পানি। গত বছর (২০১৭) কক্সবাজার জেলার সেরা করদাতা হিসেবে পুরস্কার নিয়েছেন।

সাইফুল করিমের আরেক ঘনিষ্ঠজন হলেন চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ এলাকার বাসিন্দা যুবায়ের ওরফে রেদোয়ান এবং ওআর নিজাম রোডের বাসিন্দা ইয়াবা ব্যবসায়ী আমিন শরীফ। আমিন শরীফের মেয়ে তাসফিয়া সম্প্রতি খুন হয়েছে। সেই মামলার সুরতহাল প্রতিবেদনের সাক্ষী ছিলেন সাইফুল করিম। ইয়াবাবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর এঁরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews