ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা আর মুসলিমদের হাতে থাকছে না—এমনই এক ভয়াবহ সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। দখলদার প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, পবিত্র ভূখণ্ড গাজা চিরতরে ছিনিয়ে নিতে মরিয়া তার সরকার।
বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে মুসলিমদের আবেগের এই ভূমি দখল করতে চলেছে ইসরাইল। আগামী পাঁচ মাসের মধ্যেই এই নীলনকশা বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছে নেতানিয়াহু প্রশাসন।
নিজেদের জিম্মি নাগরিক কিংবা মুক্তিকামী যোদ্ধাদের রক্ত ঝরাতেও তারা পিছপা হবে না বলেই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকে পাঁচ ভাগে বিভক্ত করে গাজা দখলের মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, IDF (ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) কে পাঁচটি ডিভিশনে ভাগ করে গাজায় পাঁচ মাসব্যাপী সামরিক অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা করছে তেলআবিব। একইসাথে, গাজার ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প পরিকল্পনাও তৈরি হচ্ছে।
নেতানিয়াহু সরকার গাজার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে সমর্থন চাইবেন বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
IDF এর অভ্যন্তরে মতবিরোধ
এদিকে আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬ শতাংশ গাজার নিয়ন্ত্রণ ইসরাইলের হাতে চলে গেছে। তবে বাকি অংশ দখলে বাধা দিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি (জামির)। তিনি এই অভিযানে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “এই অভিযানটি ভুল হচ্ছে এবং জিম্মিদের জন্য হুমকি স্বরূপ।”
তার এমন মন্তব্যের পর নেতানিয়াহুর সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ এক কর্মকর্তা তাকে পদত্যাগ করতেও বলেন। তবে আপাতত সেই পথে তিনি হাঁটছেন না বলে জানিয়েছে জেরুজালেম পোস্ট।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুর পরিকল্পনা নজরে এসেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে গাজার দখল নিয়ে তার কোনো স্পষ্ট আপত্তি নেই। ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা গাজার মানুষের খাবারের নিশ্চয়তার দিকে নজর দিচ্ছি। অঞ্চল দখলের ব্যাপারটা ইসরাইলের বিষয়।”
তবে ভবিষ্যতে ট্রাম্প প্রশাসন কোনো চাপ দিলে তেলআবিব কী পদক্ষেপ নেবে, সেটি নিয়েও আজকের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। এমনকি কোন “মডেল” অনুসরণ করে সেনারা তাদের পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে—তাও নির্ধারিত হতে পারে বৈঠকে।
জাতিসংঘ ও পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া
গাজা উপত্যকা নিয়ে ইসরাইলের দখলদারিত্বে জাতিসংঘ সরাসরি আপত্তি জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, স্বাধীন ফিলিস্তিনে গাজার গুরুত্ব অপরিসীম, আর নেতানিয়াহুর এই পদক্ষেপে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এদিকে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য-সহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ ফিলিস্তিন প্রশ্নে কণ্ঠ উঁচু করেছে। তবে এসব আন্তর্জাতিক কণ্ঠে কান দিচ্ছে না নেতানিয়াহু সরকার।
গাজার প্রতিটি ইঞ্চি দখলে নেওয়ার পেছনে তাদের যে উদ্দেশ্য, তা আর গোপন নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই আগ্রাসন থামাতে বিশ্ব কী করবে?
শেখ ফরিদ