উইকিপিডিয়া তাদের আর্টিকলের উপরে এআই দিয়ে তৈরি সংক্ষিপ্ত সারাংশ দেখানোর একটি পরীক্ষামূলক পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে প্ল্যাটফর্মটি ঘোষণা দিয়েছিল, মোবাইল ওয়েব ব্যবহারকারীদের ১০ শতাংশের ওপর এই ফিচারটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করবে এই মুক্ত বিশ্বকোষ।
তবে সম্পাদকদের তীব্র বিরূপ প্রতিক্রিয়ার পর উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশন (ডব্লিউএমএফ) সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে এনগেজেট।
মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার কার্যক্রম চলে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সম্পাদকদের মাধ্যমে।
এই সারাংশগুলো মোবাইল ব্যবহারকারীদের একটি নির্দিষ্ট অংশের কাছে আর্টিকলের উপরে দেখা যেত এবং এগুলো দেখতে চাইলে পাঠকদের আলাদাভাবে ‘অপ্ট-ইন’ করতে হতো। দুই সপ্তাহের জন্য সীমিত সংখ্যক আর্টিকলের ওপর এই পরীক্ষা চালানোর কথা ছিল।
তবে ডব্লিউএমএফ-এর ঘোষণায় সম্পাদকদের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। কেউ মন্তব্য করেছেন, “ঘৃণ্য”, আবার কেউ বলেছেন, “ভয়ের সঙ্গে হাসছি।”
একজন সম্পাদক লেখেন, “গুগল এআই সারাংশ চালু করেছে বলে আমাদের তার সঙ্গে পাল্লা দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে এটি মোবাইল বা অন্য কোথাও চালু করবেন না। এতে আমাদের পাঠক এবং বিশ্বাসযোগ্য উৎস হিসেবে উইকিপিডিয়ার সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
“উইকিপিডিয়া বরাবরই এক ধরনের ‘সোবার ও বোরিং’ সূত্র হিসেবে পরিচিত, যা আসলে ভালো,” যোগ করেন ওই সম্পাদক। “চকচকে কিছু চালু করে আমাদের পাঠকদের বুদ্ধিকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়।”
সম্পাদকরা শুধু আইডিয়া নয়, এই প্রকল্পের পরিকল্পনার সময়ও বিষয়টি তাদের কাছ থেকে আড়ালে রাখার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
একজন লেখেন, “আপনারা বলছেন যে এটি ‘আলোচিত’ হয়েছে, অথচ সেই ‘আলোচনার’ লিংকে গিয়ে দেখা যাচ্ছে সেখানে কেবল একজন অংশগ্রহণকারী, যিনি আবার ডব্লিউএমএফ এর কর্মী।
এনগেজেটে পাঠানো এক বিবৃতিতে উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা বিশ্বব্যাপী পাঠকদের জন্য উইকিপিডিয়াকে আরও সহজলভ্য করে তোলার উপায় খুঁজছিলাম। এই পরীক্ষামূলক ফিচারটির লক্ষ্য ছিল পাঠকদের জন্য জটিল আর্টিকলগুলোর সারমর্ম তুলে ধরা।”
এই সারাংশ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছিল কোহিয়ার কোম্পানির ওপেন-ওয়েট ‘আয়া’ মডেল।
ডব্লিউএমএফ বলছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের এআই ফিচার আনার আগে সম্পাদকদের পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে।
“উইকিপিডিয়ায় জেনারেটিভ এআই যুক্ত করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সম্পাদকদের বাইরে রাখা হবে না,” বলেন একজন মুখপাত্র।
ডব্লিউএমএফ-এর দাবি, তাদের আগের গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পাঠক পূর্ণ আর্টিকল পড়ার আগে একটি সহজ সারাংশ চান। তবে বর্তমানে এই পরিকল্পনার কোনো বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
