প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বৃহস্পতিবার অন্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে এক অনির্ধারিত বৈঠকে তার পদত্যাগের ভাবনার কথা জানান। এমনই একটি তথ্য গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
এর পরপরই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে দেশের রাজনৈতিক মহলে। তৎপর হয়ে উঠে দেশি-বিদেশি নানা মহল। বিশেষ করে রাজনৈতিক শক্তিগুলো। তবে শেষ পর্যন্ত এই আশঙ্কা দূরীভূত এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় দ্রুতই।
জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টার এমন সিদ্ধান্ত পাল্টাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। বিশেষ করে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দলটির নেতারা নিজেদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক করেন। জামায়াত নেতারা মনে করেন, এভাবে ড. ইউনূস চলে গেলে দেশ গভীর সঙ্কটে পড়ে যাবে। অনিশ্চিত হয়ে পড়বে নির্বাচন।
দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সংকট উত্তরণে সকল পক্ষের সঙ্গে জামায়াত যেভাবে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেছে, সে-সব বিষয়ে কথা বলেছেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কিছুটা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা তো ছিলই- কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ সবকিছু এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। চলমান এ সংকট যতটা বাস্তব ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল সন্দেহ, একের ওপর অন্যের আস্থার অভাব। এ ঘটনায় চারটি গ্রুপ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী, অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি এবং এনসিপি।
ডা. তাদের বলেন, এমন পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম,।কিন্তু আমরা ভীত হইনি। আমরা মনে করেছি, এটার সুন্দর সমাধান হবে। যার জন্য আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিএনপি, এনসিপি এবং ইসলামিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রক্ষা করেছি। যে ভুলগুলো পরস্পরের মধ্যে তৈরি হয়েছিল সেগুলো যেন দূর হয়ে যায় আমরা সে বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এই সংকটের মূলে দুটি বিষয় বেশি ছিল- এক. নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা নিয়ে। এই বিষয়টা নিয়ে একটা জেদাজেদি ছিল। এক পক্ষ মনে করেছে ডিসেম্বরে দিতেই হবে। আবার কেউ মনে করেছে, আমাকে কেউ নির্দেশ দিলেই তো আমি সে নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবো না। বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, তবে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলার চেষ্টা করেছি যে, নির্বাচন দেওয়াই আপনার অন্যতম দায়িত্ব। এবং নির্বাচনের জন্য সংস্কারও প্রয়োজন আমরা এটা সবসময় বলে আসছি। আপনি এ বিষয়ে উদ্যোগও নিয়েছেন।কিন্তু কখন কতটুকু সংস্কার হবে, কখন নির্বাচনের জন্য একটি উত্তম সময়। এ বিষয় তো একটি ঐকমত্য দরকার। আর এ বিষয়ে আপনার দিক থেকে এগুলো তো স্পষ্ট করা দরকার। কেননা, স্পষ্ট না করার ফলে কেউ কেউ হয়ত মনে করছে যে, নির্বাচন হয়ত সঠিক সময় হবে না। আবার কেউ কেউ উসকানিমূলক কথাও বলে যে, পাঁচ বছর থাকতে হবে, দুই বছর থাকতে হবে। যার ফলে সব মিলিয়ে একটা সংশয় তৈরি হয়েছে।
জামায়াতের এ নেতা বলেন, সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে নির্বাচনের একটা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ হওয়া দরকার। এটা যদি এক মাস বেশি বা কম হয়, এ ব্যাপারে মানুষ খুব একটা অসহিষ্ণু হবে না। একইভাবে সংস্কার প্রশ্নেও আপনার একটা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দেওয়া দরকার।
ডা. তাহের বলেন, অন্যদিকে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর মধ্যেও এক ধরনের চিন্তা ছিল। সেটা হলো- নির্বাচন কখন হবে বা আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। এছাড়া এ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে তাদেরও একটা সংশয় তৈরি হয়েছিল। তাদেরকে আমরা বলেছি, নির্বাচনের ব্যাপারে স্পষ্ট হওয়া উচিত, আর আপনাদেরও ধৈর্য ধরে সহযোগিতা করা উচিত। প্রত্যেকেই মনে করে একটা যথাযথ নির্বাচন হওয়া উচিত। আর সেনাবাহিনীও তো এদেশেরই মানুষ।নির্বাচনে তারাও একটা পার্টনার।কারণ সেনাবাহিনী ছাড়াও তো নির্বাচন হবে। সুতরাং তাদের এ বিষয়ে একটা ভাবনা আছে।
তিনি বলেন, কিন্তু চাপ দিয়ে এতো তারিখেই হতে হবে, এটা আবার একটু হার্ড মনে হয়। রাজনীতিতে এ হার্ড বা আনকম্প্রোমাইজিং হয়ে যাওয়াটা ভালো লক্ষণ না। এটা জামায়াত সবসময়েই মনে করে।
সবশেষ ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা সকল পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করি, আর কোনো সমস্যা হবে না। সকলেই গ্রহণ করতে পারে এমন একটা অবস্থার তৈরি হবে ইনশাল্লাহ। এবং আমরা সবাই নির্বাচনমুখি হবো।