ট্রাম্পের দায়মুক্তির আবেদন প্রত্যাখ্যানের সম্ভাবনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে করা অপরাধের দায়মুক্তির বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হতে পারে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে। তবে বিচার থেকে তিনি দায়মুক্তি পাবেন কিনা– এই নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার তিন ঘণ্টা ধরে শুনানি শেষে এখন রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে করা এ-সংক্রান্ত মামলাটি। খবর সিএনএন ও বিবিসির।

দীর্ঘ শুনানিতে বিচারকদের প্রশ্নোত্তরে উঠে এসেছে, দায়মুক্তির পক্ষে ও বিপক্ষে নানা যুক্তি। রক্ষণশীল ও উদারপন্থি হিসেবে পরিচিত বিচারপতিরা নিজ নিজ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন। মামলার রায়ের ক্ষেত্রে এর সূক্ষ্মতা ও জটিলতার বিষয়গুলো সামনে রাখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ঐতিহাসিক নানা প্রেক্ষাপটের দিকেও খেয়াল রাখছেন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসসহ অন্য বিচারপতিরা। 

শুনানির ভিত্তি ছিল মূলত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে থাকার সময় তিনি যে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার যোগ্য, এই বিষয়টি। ট্রাম্পের মতে, দায়মুক্তিই হবে স্পেশাল কাউন্সেল জ্যাক স্মিথের আনা অভিযোগ থেকে রেহাই পাওয়ার একমাত্র উপায়। দায়মুক্তি বিষয়টি আগামী জুনে নিষ্পত্তি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শুনানিতে বিচারকরা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, এর ভিত্তিতে বোঝা যায়, একটি বিভক্ত রায় আসবে। তাদের প্রশ্নে দৃশ্যমান হয়েছে, রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং উদারপন্থি সংখ্যালঘু উভয়েই ইতিহাসের দিকে চোখ রেখেই রায় দিতে চান।

পুরোপুরি দায়মুক্তির অর্থ কী হবে, এটি নিয়ে ভাবছেন বিচারকরা। তারা বলছেন, ভবিষ্যতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে মেরে ফেলতে পারেন? কিংবা এই দায়মুক্তি না থাকলে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিচারের মুখোমুখি হবেন বা জেলে যাবেন? এসব বিষয় মাথায় রাখছেন বিচারকরা। 

ষাটের দশকে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ওয়াটেরগেট ঘটনা এবং জন এফ কেনেডির অপারেশন মনগুজের (ফিদেল কাস্ত্রোর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অভিযান) ঘটনাও তুলে আনছেন তারা।  তবে রক্ষণশীলরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টদের কিছুটা দায়মুক্তি থাকা উচিত। 

এর পরও ট্রাম্পের আইনজীবী ডিন জন সাউয়ের যুক্তিতর্ক নিয়ে সতর্ক বিচারকরা। তাঁর দাবি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচার প্রক্রিয়া থেকে অনেকাংশেই সুরক্ষিত। সাউয়েরকে এই সুরক্ষার বিষয়টি ধরে ৯ জন বিচারপতি জেরা করেছেন।

তিন উদারপন্থি বিচারপতির একজন এলেনা কাগান প্রশ্ন করেন, প্রেসিডেন্ট যদি সামরিক বাহিনীকে অভ্যুত্থান ঘটাতে বলেন তাহলে কী হবে? তখন সাউয়ের বলেন, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে। আরেক উদারপন্থি বিচারপতি কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসনও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্টরা পুরো ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে থাকলে তারা তো আইন নাও মানতে পারেন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি মাইকেল দ্রিবেনও একই রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। কারণ, বিচারকরা এটিও চিন্তা করেছেন, কিছুটা সুরক্ষা না থাকলে মেয়াদ শেষ করা প্রেসিডেন্টের কী অবস্থা হবে?

বেঞ্চে থাকা বিচারপতি এমি কোনে ব্যারেটকে নিয়োগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট পুরোপুরি দায়মুক্তি পাওয়ার অধিকারী কিনা– এই প্রশ্নে কিছুটা সন্দেহগ্রস্ত মনে হয়েছে ব্যারেটকে। এ পর্যায়ে দ্রিবেন বলেন, প্রেসিডেন্টের দোষত্রুটি মোকাবিলায় ‘যুক্তরাষ্ট্রে সম্পূর্ণ প্রশ্নমুক্ত কোনো পদ্ধতি নেই।’  বিচারপতি ব্যারেট বলেছেন, এ বিষয়ে তিনিও একমত।

২০২০ সালের নির্বাচন পাল্টে দেওয়ার চেষ্টার জন্য ট্রাম্পের বিচার করা হতে পারে কিনা, সে বিষয়ে আদালত স্পষ্ট উত্তর দেবেন বলে মনে হচ্ছে না। এর মানে হলো, সুপ্রিম কোর্ট সম্ভবত সিদ্ধান্তের বেশির ভাগই নিম্ন আদালতে ছেড়ে দিতে পারেন। এটি যদি হয়, তাহলে নিষ্পত্তির জন্য কয়েক মাস সময় লেগে যাবে। এটি বিচার প্রক্রিয়াকে আরও বিলম্বিত করবে। কারণ, দায়মুক্তির বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ট্রাম্পের বিচার স্থগিত থাকবে, যা তাঁর বিলম্বের কৌশলকে ফলপ্রসূ করবে। কারণ, তিনি আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ফের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়বেন।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews