প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার বলছে, কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করতে গিয়ে তাদের এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে।

এই অবস্থায় এখন পর্যন্ত ‘অফিসিয়ালি’ জমি বুঝে না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রকল্প পরিচালক।

রাজধানীর যানজট কমাতে সাতরাস্তা, কোহিনূর কেমিকেল মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শ্যাওড়া, কাওলা, উত্তরার র‌্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন সড়কের সামনে ১১টি ‘ইউ টার্ন’ নির্মাণ করার এই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা সরকার দিচ্ছে; বাকি ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগানো হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ২৯ অক্টোবর এসএম কনস্ট্রাকশনস নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তেজগাঁওয়ের কোহিনূর কেমিকেল, মহাখালী বাস টার্মিনাল, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, বনানী কবরস্থান, বনানী রেলওভারপাস এবং উত্তরা র‌্যাব-১ অফিসের সামনে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ফুটপাত ভাঙা, স্থাপনা অপসারণসহ প্রকল্প এলাকা উন্নয়নের কাজ চলছে।

এসএম কনস্ট্রাকশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুর রহমান শাহীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক কাজ শুরু হলেও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও ভূমি জরিপ অধিদপ্তর জমি না ছাড়ায় তারা নির্মাণ কাজে হাত দিতে পারছেন না।

“সেখানে রোডসের জমি আছে। তারা একটু সমস্যা তৈরি করছে। এছাড়া বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত বিউটিফিকেশনের কারণে জমি ছাড়তে চাচ্ছে না রোডস। তারা অপ্রয়োজনে আমাদের ডিস্টার্ব করছে। যেসব জায়গায় জমি পেয়েছি সেখানে ইউ টার্নের কাজ শেষ হবে নির্ধারিত সময়েই। কিন্তু জমি না পেলে আমরা কাজ করব কীভাবে।”

বনানীতে কবরস্থানের কাছে সড়কের পশ্চিম পাশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের লোকজনের কাছ থেকেও বাধা পাচ্ছেন অভিযোগ করেন শাহীন।

এসব ইউ টার্ন নির্মাণের জন্য ২০১৫ সালের শেষে দিকে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় উত্তর সিটি করপোরেশন। সেখানে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের জুনে শেষ করার কথা বলা ছিল। কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষ করে প্রকল্পের সরকারি অনুমোদন পেতেই এ বছরের ২৭ মার্চ পেরিয়ে যায়।

প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়াতে এ বছরের ১৬ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠায় উত্তর সিটি করপোরেশন। সেখানে বলা হয়, প্রকল্প এলাকায় থাকা বিভিন্ন সেবাসংস্থার স্থাপনা সরাতে হবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণ করতে সময় প্রয়োজন। তবে এতে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে না।

সিটি করপোরেশনের ওই আবেদনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ায়।

‘ইউ টার্ন’ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মাহবুব আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, প্রকল্পের জন্য সড়ক ও জনপথ (সওজ), সিভিল এভিয়েশন এবং রেলওয়ের কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে ১ দশমিক ৩৬ একর জমির জন্য ক্ষতিপূরণ চাইছে সওজ। 

তার অভিযোগ, শুরুতে জমি ব্যবহারের জন্য টাকার কথা না বললেও কাজ শুরু করতে গেলে সওজ এখন ক্ষতিপূরণ চাইছে।

“২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে আমরা এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছি। চিঠি চালাচালি হয়েছে। সবশেষ যোগযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে এক  সভায় এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেই সভায় ইউ টার্ন করতে কোথায় কতটুকু জমি লাগবে তার মৌজা, দাগ নম্বর, নকশাসহ জমির চাহিদাপত্র দিতে বলা হয়। সেভাবেই আমরা চাহিদাপত্র দিয়েছি।

“সভার সিদ্ধান্তের পর আমরা প্রকল্পের কাজও শুরু করে দিয়েছি। আমাদের ঠিকাদার অলরেডি ফিল্ডে চলে গেছে। এখন বলা হচ্ছে ওই জমি কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে।”

 

প্রকল্প পরিচালক বলেন, “সরকারি সংস্থার জমি ব্যবহারের অনুমতি এখনও আমরা অফিসিয়ালি পাইনি। এটা নির্ধারিত সময়ে না পেলে প্রকল্পও নির্ধারিত সময়ে শেষ করা কঠিন হবে।”

ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল বলেন, উত্তর সিটি করপোরেশনকে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে শর্ত দেওয়া হয়েছিল, যেসব স্থাপনা সরাতে হবে, সেজন্য তাদের টাকা দিতে হবে।

“আমাদের যেসব স্থাপনা ভাঙতে হবে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আমরা একটা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। এটা আগামী সপ্তাহে তাদের (সিটি করপোরেশন) কাছে উপস্থাপন করব।”

মেহেদী ইকবাল বলেন, বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের জন্য জমি দেওয়া হয়েছে। সেখানে এমনিতেই ইউ টার্ন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না।

“আমরা যেখানে স্থায়ী চিন্তা করছি, সেখানে উনারা দুই-তিন বছরের জন্য একটা প্রকল্প করছেন। এটা প্রয়োজনে সরিয়ে ফেলা হবে। তো যেখানে আমরা অলরেডি হ্যান্ডওভার করে দিয়েছি একটা প্রজেক্টকে, সেখানে তো আমরা আবার অনুমতি দেব না।”

প্রকল্পের ১১টি ‘ইউ টার্নের’ মধ্যে বিমানবন্দর থেকে আবদুল্লাহপুরের মধ্যে পড়েছে দুটি। সেগুলো নির্মাণ করতে হলে বিআরটি প্রকল্পের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে জানিয়ে বিআরটি প্রকল্পের পরিচালক সানাউল হক বলেন, পরে একটি ইউ টার্ন বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

“বিআরটি চালু হলে র‌্যাব ওয়ান অফিসের সামনে ইউ টার্নে আর গাড়ি ঘোরানো যাবে না। আর জসিমউদ্দিন এলাকায় বিআরটি ফ্লাইওভার দিয়ে যাবে। সেখানে কোনো সমস্যা হবে না।”

আনিসুল হক ঢাকা উত্তরের মেয়র হওয়ার পর তেজগাঁও থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ২২টি ইউ টার্ন নির্মাণের উদ্যোগ নেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এর মধ্যে ১১টি নির্মাণের দায়িত্ব উত্তর সিটি করপোরেশনকে দেয়।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews