প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা চান সিভিল সার্জনরা

দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সিভিল সার্জন সম্মেলন। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে তিনি সবাইকে নিয়ে ছবি তোলেন সমকাল

অবৈধ ক্লিনিক, দালাল চক্র ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সীমিত আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা চেয়েছেন সিভিল সার্জনরা। একই সঙ্গে হাসপাতাল ও কর্মস্থলের নিরাপত্তায় আনসার বা ‘স্বাস্থ্য পুলিশ’ দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তারা। 

গতকাল সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সিভিল সার্জন সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে এসব দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। 

জেলা প্রশাসক সম্মেলনের আদলে প্রথমবারের মতো দু’দিনের এই আয়োজনে সারাদেশের সিভিল সার্জনরা অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনের পর সম্মেলনের কার্য অধিবেশনগুলো হচ্ছে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে। সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসেন সিভিল সার্জনরা। 

সরকারের কাছে দাবি ও প্রস্তাব তুলে ধরে ঢাকার সিভিল সার্জন মো. জিল্লুর রহমান বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ও ল্যাব, ভুয়া চিকিৎসক, দালাল চক্র ও ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে সিভিল সার্জনদের সীমিত আকারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া জরুরি। এ ছাড়া দেশের প্রতিটি হাসপাতালে নিরাপত্তার অভাবে স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রায়ই হুমকির মুখে পড়েন। এ জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাসপাতালে আনসার বা ‘স্বাস্থ্য পুলিশ’ মোতায়েন করা যেতে পারে। তিনি বলেন, দক্ষ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর পক্ষেও মত দেন তিনি। 

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, স্বাস্থ্য খাতে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে। এ অভাব দূর না হলে চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল যতই নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না। দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সাত হাজার সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি ও নতুন তিন হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাত হাজার সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টির মাধ্যমে বঞ্চিত চিকিৎসকদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, সিভিল সার্জনদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন, আগামী সম্মেলনে তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এখনও চিকিৎসার পেছনে ৭০ শতাংশ টাকা রোগীর পকেট থেকে যায়। আবার সেই খরচের দুই-তৃতীয়াংশ ওষুধের পেছনে খরচ করে। এ কারণে ন্যায়সংগত মুনাফার সুযোগ রেখে মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকার যৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করলে তা দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য কল্যাণকর হবে। শুধু চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে বছরে ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান বলেন, এই প্রথম সিভিল সার্জন সম্মেলন হলো। সম্মেলনের লক্ষ্য মাঠ পর্যায়ে চিকিৎসাসেবার মান বাড়ানো। প্রধান উপদেষ্টার সার্বিক দিকনির্দেশনা স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজাতে সহযোগিতা করবে বলে মনে করি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. আবু জাফর বলেন, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার মান বজায় রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে সিভিল সার্জনদের। হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিশেষ নজর দিতে হবে।

একাধিক সিভিল সার্জন জানান, দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মানুষের অসন্তোষ ও নানা দিক নিয়ে সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানোর নানা কৌশল নিয়ে কথা হয়েছে। সম্মেলনে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। 

অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বসেন সিভিল সার্জনরা। ৫টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সিভিল সার্জনের ভূমিকা শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। আজ মঙ্গলবারও দিনভর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews