নানা উত্থান-পতন সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ যে আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব সূচকই তার সাক্ষ্য বহন করছে। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের কাছে বাংলাদেশের এই সাফল্য বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। চার দশক আগে যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল, সে বাংলাদেশ এখন আর নেই। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার প্রতিবেশীদের চেয়ে এগিয়ে আছে। খাদ্যে স্বনির্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের সাফল্য উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিসরে। যারা একদিন এই দেশকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করেছিল, তারাই আজ প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিস্ময়কর এই সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৃতীয় মেয়াদের সরকার চলছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় দেশের অর্জন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক সাফল্যের পথেও অনেকখানি এগিয়ে আমরা। সচল অর্থনীতির চাকা। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়েছে অর্থনীতির আকার। মোট জাতীয় আয় (জিএনআই) বাড়ায় এ বছর বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের খাতায় নিম্ন-মধ্যম আয়ের কাতারে উঠে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এক হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যে পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে আমাদের ভবিষ্যৎ খুবই সম্ভাবনার। আর এর সবই সম্ভব হয়েছে পিতার মতোই দৃঢ় মনোবলসমৃদ্ধ রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্য।

বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. কৌশিক বসু নিজেই বাংলাদেশ সফরে এসে এ দেশের অর্থনৈতিক এই অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। কৃষিতেও বড় ধরনের সাফল্য এসেছে আমাদের। কৃষি খাতে ২০১৫ সালে বেশ কয়েকটি ভালো খবর এসেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএওর কাছ থেকে। ফল উত্পাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে শীর্ষে। আম ও পেয়ারা উত্পাদনে বাংলাদেশের অবস্থান যথাক্রমে সপ্তম ও অষ্টম। ২০২২ সালে মাছ উত্পাদনে যে চারটি দেশ ভালো করবে সেই সম্ভাবনার তালিকায়ও আছে বাংলাদেশের নাম। এফএওর সহযোগিতায় সবচেয়ে বড় চেইন ওয়ালমার্টে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে এ বছরই। বহুমুখী প্রতিকূল পরিবেশ সহ্য করতে পারে এমন একটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা জানিয়েছে ধান গবেষণার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইরি। ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জিংকসমৃদ্ধ ধানের নতুন জাত ব্রি-৭২-এর বীজ ছেড়েছেন বাজারে। চাল আমদানি নিরুৎসাহ করতে দুই দফায় ২০ শতাংশ শুল্ক বসানোও একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। দুঃখ হয়, এর পরও অনেকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যখন খুঁজে না পাওয়ার কথা বলেন।

শেখ হাসিনার জন্যই পূর্ণতা পেয়েছে ৪২ বছর আগে স্বাক্ষরিত স্থলসীমান্ত চুক্তি (এলবিএ) বা মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি। যা এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক বিরাট ঐতিহাসিক প্রাপ্তি। দীর্ঘ ৬৮ বছর পরিচিতি সংকটে জর্জরিত থাকার পর পরিচিতি পাওয়ার আনন্দে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠতে পেরেছে ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫২ হাজার মানুষ। যা শুধু রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্যই সম্ভব হয়েছে।

অন্যদিকে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর উদ্যোগ নিয়ে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেখিয়ে দিলেন ‘আমরাও পারি’। যা দেশের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত। এর আগে এই প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়ন করার কথা থাকলেও দেশের বিপথগামীদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে অর্থায়ন বাতিল করে দেয় তারা।

শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, সৃষ্টিশীল চেতনা, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা, পাশাপাশি বিশ্ব নিয়ে, বিশ্বের শান্তি নিয়ে উদ্যোগ বক্তব্য আমরা এড়িয়ে গেলেও বিশ্ব অবাক তাকিয়ে দেখেছে এই মহান নেত্রীকে। তারা যতই দেখেছে ততই বিস্ময়ে অভিভূত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে পুরস্কৃতও করেছে। পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতিসংঘ ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসি প্রকাশিত বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ১০০ চিন্তাবিদের এক তালিকায় স্থান পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে সচেতনতা তৈরিতে ভূমিকার জন্য এই তালিকায় ‘ডিসিশন মেকার্স’ ক্যাটাগরিতে বিশ্বের শীর্ষ ১৩ বুদ্ধিজীবীর মধ্যে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই ক্যাটাগরিতে এ বছর শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মর্কেল, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মৌরিতানিয়ার প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব।

শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তালিকা অনেক দীর্ঘ। সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ব, অহিংসা, সামাজিক বোঝাপড়া ও তৃণমূল পর‌্যায়ে গণতন্ত্রের উত্থানের স্বীকৃতিস্বরূপ অসলো ভিত্তিক M K Gandhi Foundation, ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনাকে M K Gandhi পুরস্কারে ভূষিত করে।

ক্ষুধার বিরুদ্ধে নিরলস সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) ২ আগস্ট, ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক CERES মেডেলে ভূষিত করে।

৯ এপ্রিল ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের Randolph Macon Women’s College শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্ষেত্রে তাঁর লক্ষ্য, সাহস ও অর্জনের জন্য Pearl S. Buck পুরস্কার প্রদান করে।

১২ এপ্রিল ১৯৯৮ সালে All-India Peace Council প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাদার তেরেসা শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ বছরব্যাপী পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেসকো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে Felix Houphouet-Boigny শান্তি পুরস্কার প্রদান করে।

১২ জানুয়ারি ২০১০ সালে শেখ হাসিনাকে শান্তি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নের জন্য তাঁর নিরন্তর সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। ভারতের তত্কালীন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।

শিশুমৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘ পুরস্কার-২০১০ প্রদান করে। জাতির পক্ষ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

৬ ডিসেম্বর ২০১২ সালে তানজানিয়ায় অনুষ্ঠিত GAVI alliance Partners Forum-এ বাংলাদেশকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। টিকাদান কর্মসূচিতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য অন্য ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

৮ জুন ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের তরফ থেকে রোটারি শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। দেশ-বিদেশে শান্তির জন্য তাঁর প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দক্ষ, কর্মঠ দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর‌্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। দেশকে খাদ্য উত্পাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলে তিনি দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে ভাগ্যোন্নয়নের পথে দাঁড় করিয়েছেন। নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি ও সন্তানের অভিভাবক হিসেবে সর্বক্ষেত্রে বাবার পাশাপাশি মায়ের নামের স্বীকৃতিও ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষকদের ঋণ প্রদান, কৃষিসামগ্রীর মূল্যহ্রাস ও সহজ প্রাপ্যতাও ছিল বিরাট অবদান।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানের ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে আজ মডেল হিসেবে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ করে তোলেন। জাতীয় অর্থনীতি আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। অনেক রকম সমস্যা আছে দেশে, সমস্যার মাত্রাও নানা ধরনের। তার পরও দেশের মানুষ আজ ন্যূনতম শান্তি ও স্বস্তিতে জীবনযাপন করছে।

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর যে দক্ষতা, পরিশ্রম, সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন—এটাই হচ্ছে তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ও আমাদের পাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর মধ্যে বাংলাদেশকে যেখানে এনে দাঁড় করিয়েছেন, তা এক অসম্ভব সাফল্য। যা অনেক শাসকের কাছেই অকল্পনীয় ব্যাপার। তাঁর কর্মকাণ্ডই চিনিয়ে দেয় তিনি জাতির জনকের কন্যা। আমরা জাতির জনককে হারিয়ে যেখানে হাবুডুবু খাচ্ছিলাম, রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের সেখান থেকে তুলে এনেছেন। বাংলাদেশের নতুন পরিচয় হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ এখন চমক। তিনি শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বকে এগিয়ে নেওয়া যায় কিভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে, তাঁর পরামর্শও এখন গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে তাঁর সামনে রয়েছে এখন ভিশন ২০২১। এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে ‘রূপকল্প-২০৪১’। এর মধ্যেই নিহিত আছে বাংলাদেশকে চূড়ান্ত ধাপে এগিয়ে নেওয়ার দর্শন। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের পর‌্যায় পেরিয়ে শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ, সুখী ও উন্নত জনপদ। সুশাসন ও জনগণের ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র।

লেখক : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews