তিনবারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন ইন্টার মিলানের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে অনেকেই এগিয়ে রাখছিল পিএসজিকে। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ব্যবধান যে এতটা বড় হয়ে উঠবে, তা নিশ্চয় কেউ ভাবেনি। লুইস এনরিকের কোচিংয়ে বদলে যাওয়া তারুণ্যনির্ভর প্যারিসের দলটি ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ওপর দাপট ধরে রেখে লিখেছে নতুন ইতিহাস, উঁচিয়ে ধরেছে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি।

মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শনিবার রাতের ফাইনালে দুটি গোল ও একটি অ্যাসিস্টের অসামান্য কীর্তি গড়ে দলকে পথ দেখান দিজিরে দুয়ে। শেষ দিকে বদলি নামার দুই মিনিটের মধ্যে গোল করেন আরেক টিনএজার সেনি। সঙ্গে আশরাফ হাকিমি ও খাভিচা কাভারাৎস্খেলিয়ার লক্ষ্যভেদে ৫-০ গোলের জয়ে ক্লাবের ৫৪ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের কীর্তি গড়ে এনরিকের দল।

ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতার সুদীর্ঘ ইতিহাসে ফাইনালে এত বড় জয় আগে কোনো দল পায়নি। এর আগে সর্বোচ্চ ৪ গোলের ব্যবধানে জয় দেখা গিয়েছিল চারবার, পেয়েছিল রেয়াল মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখ ও এসি মিলান (দুইবার)।

এই একপেশে লড়াইয়ে লেখা হয়েছে আরও কিছু রেকর্ড ও কীর্তি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো:

১১

পুরুষ ফুটবলে একাদশ ভিন্ন ক্লাব হিসেবে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ মৌসুমে ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়ল পিএসজি।

ট্রেবল জয়ের পথে চলতি মৌসুমে ক্লাবটি এর আগে জিতেছে লিগ আঁ ও ফরাসি কাপ। গত জানুয়ারিতে তারা আরেকটি শিরোপা জিতেছিল, ফরাসি সুপার কাপ।

ফ্রান্সের প্রথম পুরুষ দল হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ ট্রেবল জয়ের অনন্য রেকর্ড গড়েছে পিএসজি। অবশ্য লিওঁর নারী দল পূর্বে এই কীর্তি গড়েছে পাঁচবার!

২৪

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা ইউরোপিয়ান কাপ, প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে ২৪তম দল ক্লাব হিসেবে শিরোপা জিতল পিএসজি।

২৯

পুরুষ ক্লাব ফুটবলে ইউরোপীয় কোনো মেজর প্রতিযোগিতার শিরোপা জয়ের প্রশ্নে ফ্রান্সের ২৯ বছরের অপেক্ষা ঘোচাল পিএসজির এই দল। এর আগে দেশটির সবশেষ এই সাফল্যও পেয়েছিল পিএসজি, ১৯৯৬ সালে তারা জিতেছিল উয়েফা কাপ উইনার্স কাপ।

১৯৯৩ সালে অলিম্পিক মার্সেইয়ের প্রথমবার ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, দ্বিতীয় ফরাসি ক্লাব হিসেবে এই ট্রফি জিতল পিএসজি। কাকতালীয়ভাবে, দুটি ফাইনালই হলো মিউনিখে।

দ্বিতীয় কোচ হিসেবে ভিন্ন দুটি ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লেন লুইস এনরিকে। এর আগে ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে প্রথম ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।

আর আরেক স্প্যানিশ কোচ গুয়ার্দিওলা অসামান্য এই কীর্তি গড়েছেন বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে।

১৯ বছর ৩৬২ দিন

সর্বোচ্চ মঞ্চেই চমৎকার পারফরম্যান্সে নিজের আগমনী বার্তা দিয়েছেন দিজিরে দুয়ে।

প্রথম টিনএজার হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে দুটি গোল করলেন দুয়ে, ১৯ বছর ৩৬২ দিন বয়সে। ১৯৬৪ সালের পর ইউরোপিয়ান কাপ বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দুটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করা প্রথম খেলোয়াড়ও তিনি।

তার চেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করতে পেরেছেন কেবল দুজন- ১৯৯৫ সালে আয়াক্সের হয়ে এসি মিলানের বিপক্ষে পাট্রিক ক্লাইভার্ট (১৮ বছর ৩২৭ দিন) ও ২০০৪ সালে পোর্তোর হয়ে মোনাকোর বিপক্ষে কার্লোস আলবের্তো (১৯ বছর ১৬৭ দিন)।

এছাড়া, দুয়েই প্রথম ফরাসি খেলোয়াড় যিনি কোনো ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে জোড়া গোল করলেন।

আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের ইতিহাসে গ্যারেথ বেলের পর একাধিক গোল করার প্রথম খেলোয়াড় দুয়ে, ২০১৮ সালের ফাইনালে রেয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে দুটি গোল করেছিলেন ওয়েলস তারকা বেল, লিভারপুলের বিপক্ষে।

১৯ বছর ১৪ দিন

দুয়ের স্বদেশি মিডফিল্ডার সেনি মায়ুলু ১৯ বছর ১৪ দিন বয়সে ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালের তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করলেন।

ফাইনালে মায়ুলু ও দুয়ের গোল করার মধ্য দিয়ে আরেক রেকর্ডের পাতায় নাম উঠেছে পিএসজির। ইউরোপিয়ান কাপের কোনো এক ফাইনালে প্রথম ক্লাব হিসেবে পিএসজির দুজন টিএনএজার জালের দেখা পেলেন।

এছাড়া, আশরাফ হাকিমি প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে নিজের সাবেক দলের বিপক্ষে গোল করলেন।

ষষ্ঠ কোচ হিসেবে দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেন লুইস এনরিকে, পূর্বে তিনি জিতেছিলেন বার্সেলোনার হয়ে ২০১৫।

২৫

২৫ বছরের মধ্যে এটাই ইন্টার মিলানের সবচেয়ে বড় পরাজয়, ২০০১ সালে এসি মিলানের বিপক্ষে তারা হেরেছিল ৬-০ গোলে।

আর ইউরোপিয়ান কাপের ইতিহাসে এটাই ইন্টারের সবচেয়ে বড় হার।

মিউনিখে এ পর্যন্ত পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনাল হলো, এবং এখানে প্রতিবারই নতুন কোনো চ্যাম্পিয়ন দেখল প্রতিযোগিতাটি। সবশেষ পিএসজি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে, ২০১২ সালে চেলসি, ১৯৯৭ সালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ১৯৯৩ সালে মার্সেই ও ১৯৭৯ সালে নটিংহ্যাম ফরেস্ট প্রথমবারের মতো ইউরোপ সেরার ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews