দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। কিছু সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও মাসখানেকের অভিযান মাদক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। যেসব স্থানে আগে মাদকের হাট বসত, প্রকাশ্যেই চলত মাদক বেচাকেনা ও মাদক সেবন, সেসব স্থানে এখন আর সেভাবে মাদকের রমরমা নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও সাহস ফিরে এসেছে। মাদক কারবারিদের দেখতে পেলে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে কিংবা গোপনে পুলিশকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আইনি দুর্বলতার কারণে এখনো অনেক মাদক কারবারিকে ধরা যাচ্ছে না। বর্তমান আইনে সঙ্গে মাদক না পেলে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় না। পেছন থেকে যারা এই কারবার নিয়ন্ত্রণ করে তারা সরাসরি মাদকের সংস্পর্শে আসে না। তাই অনেক দিন ধরেই আইন সংস্কারের দাবি উঠছে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেই সেই ঘোষণা দিলেন। গত বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেছেন, বর্তমান আইনের দুর্বলতা কাটাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ প্রণয়ন করা হচ্ছে। এতে পৃষ্ঠপোষক, গডফাদারসহ মাদক সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। আমরা আশা করি, সেই আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদের অনুমোদন নিয়ে কার্যকর করা হবে।
মাদকে একবার যারা আসক্ত হয়ে পড়ে, তাদের পক্ষে তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। আবার যারা মাদক কারবারের কাঁচা অর্থের লোভে পড়েছে, তাদের পক্ষেও এ থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, কড়াকড়ি অভিযানের মধ্যেও মাদকের বেচাকেনা ঠিকই চলছে। বিক্রেতারা কৌশল পাল্টে নতুন নতুন কৌশল নিচ্ছে। মোবাইল ফোনে বেচাকেনাকারীরা নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিয়েছে। চাহিদামাফিক নির্দিষ্ট স্থানে মাদক পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কাজেই মাদকবিরোধী অভিযানেও যথাযথ প্রস্তুতি রাখতে হবে। পাশাপাশি মাদক মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা ও অপরাধীদের সহজে জামিন পেয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। জানা যায়, গত ২৭ মে গণকটুলি সুইপার কলোনি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় এবং ৩১ জনকে ডিএমপি অধ্যাদেশে আদালতে চালান দেওয়া হয়। সেই ৩১ জন পরদিনই ছাড়া পেয়ে যায় এবং বাকি ২৪ জনের মধ্যে আটজন এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। কোনো কোনো মাদক মামলার বিচারে এক দশকও লেগে যায়। তখন উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অনেকেই খালাস পেয়ে যায়। এসব কারণে আইন বিশেষজ্ঞরা মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংস্কার দাবি করে আসছিলেন।
আমরা আশা করি, নতুন আইনে বিদ্যমান সব দুর্বলতা দূর করা হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক নানা রকম উদ্যোগও নিতে হবে। কিশোর-তরুণদের জন্য সুস্থ বিনোদনের সুযোগ বাড়াতে হবে। পারিবারিক-সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। মাদকের ক্ষতির দিকগুলো বেশি করে জনসমক্ষে তুলে ধরতে হবে। বাংলাদেশ দ্রুত মাদকমুক্ত হবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।