পঞ্চম ওভারে আক্রমণে আনা হলো মুস্তাফিজুর রহমানকে। প্রথম ডেলিভারি অফ স্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া লেংথ বল। একটু জায়গা বানিয়ে দারুণ শটে চার মারলেন লোকেশ রাহুল। মুস্তাফিজ ভুল শুধরে নিলেন তাৎক্ষনিক। ওভার দ্য উইকেট থেকে চলে গেলেন রাউন্ড দ্য উইকেটে। অ্যাঙ্গেলটা আটকে দিলেন রাহুলের জন্য। ফলও মিলল হাতেনাতে। টানা দুই বলে রান হলো না, ওভারের চতুর্থ বলে আউট হয়ে গেলেন রাহুল।
প্রথম বলে বাউন্ডারির পর ওই ওভারে আর রানই হলো না। ধারাভাষ্যে ইয়ান বিপশ, সাইমন ক্যাটিচরা তখন মুস্তাফিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কে ভাবতে পেরেছিল, পরের ওভারগুলোয় বেদম মার খাবেন বাংলাদেশের এই বাঁহাতি পেসার এবং শেষ ওভারে তাকে বিধ্বস্ত করেই লাক্ষেèৗ সুপার জায়ান্টসকে স্মরণীয় জয় এনে দেবেন মার্কাস স্টয়নিস!
প্রথম ওভারে ¯্রফে চার রান দেওয়া মুস্তাফিজের বোলিং বিশ্লেষণ শেষ পর্যন্ত ৩.৩-০-৫১-১। শেষের ওভারগুলোয় চেন্নাই সুপার কিংসের মূল ভরসা ছিলেন তিনিই। কিন্তু তিন ওভারে যখন লক্ষেèৗর প্রয়োজন ৪৭ রান, তখন ১৮তম ওভারে তার ওভার থেকে রান আসে ১৫। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ১৭ রানের। স্টয়নিস খেলা শেষ করে দেন তিন বল বাকি রেখেই। একটি নো বলসহ তিন বলেই ১৯ রান দেন মুস্তাফিজ। গতপরশু রাতে চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে চলতি মৌসুমে চার ম্যাচ খেলে এই প্রথম ৩০ রানের বেশি দিলেন মুস্তাফিজ। তার এই ম্যাচের পারফরম্যান্সের সবচেয়ে হতাশার দিক এটিই। এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত এবারের আইপিএলে মুস্তাফিজের দুটি রূপ দেখা যাচ্ছিল। চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে তিনি ছিলেন ক্ষুরধার, চেন্নাইয়ের বাইরে অতি সাধারণ।
চেন্নাইয়ের মাঠে ২৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনি শুরু করেন এবারের মৌসুম। একই মাঠে পরের ম্যাচে তার প্রাপ্তি ৩০ রানে ২ উইকেট। এই মাঠে আরেকটি ম্যাচ খেলেন তিনি গত ৮ এপ্রিল। সেদিনও দারুণ বোলিংয়ে ২ উইকেট নেন ২২ রানে। ঠিক উল্টো চিত্র ছিল চেন্নাইয়ের বাইরে। বিশাখাপাতœামে তার পারফরম্যান্স ছিল ৪৭ রানে ১ উইকেট, মুম্বাইয়ে ৫৫ রানে ১ উইকেট ও লক্ষেèৗতে ৪৩ রানে ১ উইকেট।
মৌসুমের শুরুর আগে চেন্নাই সুপার কিংসের প্রধান নির্বাহী বলেছিলেন, মূলত চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামের উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতেই মুস্তাফিজকে দলে নিয়েছেন তারা। এখানকার উইকেটে সাধারণত বল একটু থমকে আসে, কিছুটা গ্রিপ করে। এই ধরনের উইকেটে মুস্তাফিজের কার্যকারিতা তো গোটা ক্রিকেট বিশ্বই জানে। সেটিই দেখা যাচ্ছিল ম্যাচের পর ম্যাচে। কিন্তু এবার সেই একই মাঠে তিনি হজম করলেন বেজায় পিটুনি। শেষ দিকের বোলিংয়ে চেন্নাইয়ের আরেক ভরসা মাথিশা পাথিরানাও এদিন খুব সুবিধা করতে পারেননি। ১৯তম ওভারে লঙ্কান এই সিøঙ্গিং বোলার রান দেন ১৫।
ম্যাচ শেষে চেন্নাই অধিনায়ক রুতুরাজ গায়কোয়াড় অবশ্য মুস্তাফিজ-পাথিরানার দিকে আঙুল তোলেননি। তিনি বরং দায় দিয়েছেন মাঝের ওভারগুলোকে, রাতের শিশিরের জন্য যখন অকার্যকর ছিলেন দুই স্পিনার মইন আলি ও রবীন্দ্র জাদেজা, ‘শিশির এখানে একটি ভূমিকা রেখেছে। আমার মনে হয়েছে, একটু বেশিই শিশির পড়েছে এবং তাতে আমাদের স্পিনাররা ম্যাচের বাইরে চলে গেছে। শিশির না পড়লে মাঝের ওভারগুলো আমরা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতাম ও খেলা আরও গভীরে নিতে পারতাম। তবে এসবও ক্রিকেটের অংশ। যেসব ব্যাপার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তা তো বদলানো যায় না। টুর্নামেন্টের অনেক পথ এখনও বাকি।’
এবারের রান জোয়ারের আইপিএলে বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় বোলাররাও নিয়মিত রান বিলিয়ে দিচ্ছেন দেদার। সেখানে মুস্তাফিজের সামগ্রিক পারফরম্যান্স এই টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত খারাপ নয়, মূলত চেন্নাইয়ের মাঠের পারফরম্যান্সের কারণেই। এখনও টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ উইকেট তার, রান দিয়েছেন যদিও ওভারপ্রতি দশের বেশি। চেন্নাইয়ের চার ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৯টি। কিন্তু সেই মাঠেই এবার যে বোলিং তিনি করলেন এবং চাপের মধ্যে যেভাবে ভেঙে পড়লেন শেষ সময়ে, বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলের জন্যও তা খুব একটা সুখবর নয়!



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews