ফিলিস্তিনের গাজায় নাসের হাসপাতালে ছোট্ট মায়ার আর্তনাদে যেন কেঁপে উঠছে পুরো গাজা। মাত্র দুই বছর বয়সী ছোট্ট এই শিশুটি দুটি হাত নিজের কাঁধে জড়িয়ে ধরে যেন নিজেকেই সান্ত্বনা দিচ্ছে এই শিশু। তার পাঁজর বেরিয়ে এসেছে, পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে আছে—এটাই এখন গাজার বাস্তবতা।

এই হাসপাতালেই ১৭ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে লড়ছে মায়া আল-আরজা। সেলিয়াক রোগে আক্রান্ত সে—যা তাকে গ্লুটেন গ্রহণে অক্ষম করে তোলে। কিন্তু দীর্ঘ ১৯ মাসের যুদ্ধ আর সীমান্ত অবরোধে গাজায় বিশেষ খাবার তো দূরের কথা, সাধারণ খাদ্যও এখন সোনার হরিণ।

মায়ার মা আসমা বলেন, ‘ওর ডায়াপার, সয়া দুধ, বিশেষ খাবার লাগে। কিন্তু এগুলো সীমান্ত বন্ধ থাকার কারণে পাওয়া যায় না। আর যদি পাওয়া যায়, দামের জন্য আমি কিনতে পারি না।’

দুই বছরের মায়া আল-আরজা (ডানে) ও পাঁচ মাস বয়সী ইউসুফ আল-নাজ্জার, অপুষ্টির সঙ্গে লড়ছে। তাদের মায়েরা নাসের হাসপাতালের একটি ক্লিনিকে দেখাশোনা করছেন। স্থান: খান ইউনুস, গাজা; তারিখ: বুধবার, ২১ মে ২০২৫। (ছবি: আবদেল কারিম হানা, এপি)

জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বলছে, ২০২৫ সালের এ পর্যন্ত ৯ হাজারের বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগে চিকিৎসা নিচ্ছে। সামনের মাসগুলোতে এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে খাদ্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।

‘সব দিকেই ক্ষুধার্ত মানুষ, শিশুরা শুধু কাঁদছে’: সাহায্য আসলেও পৌঁছাচ্ছে না গন্তব্যে

ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপে কিছু সাহায্য ট্রাক ঢুকতে দিলেও ইউএন বলছে, এটি প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। একসময়ে যেখানে দিনে ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করত, সেখানে এখন হাতে গোনা কয়েক ডজন।

৩০ বছর বয়সী নুফ আল-আরজা, যিনি নিজেই অপুষ্টিতে আক্রান্ত, নিজের পরিবারকে রান্না করে খাওয়াচ্ছেন। অবস্থান: গাজার মুওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাবু ক্যাম্প, ২১ মে ২০২৫। (ছবি: আবদেল কারিম হানা, এপি)

জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা জানান, কেন্দ্রীয় গাজায় কয়েকটি ট্রাক গুদামে পৌঁছালেও, আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে সেগুলো বিতরণ করা যাচ্ছে না। এদিকে ইসরায়েল হামাসকে সাহায্য আত্মসাতের অভিযোগ করলেও, তার কোনও প্রমাণ দেয়নি।

‘আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি’: গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য বিপর্যয়কর অবস্থা

নাসের হাসপাতালের শিশু অপুষ্টি ইউনিটে জায়গা নেই। ডাক্তার আহমেদ আল-ফারাহ বলেন, ‘আমাদের কাছে কিছুই নেই। শিশুরা কাঁদছে, আমরা তাদের জন্য কিছুই করতে পারছি না।’

নাজিয়া আল-নাজ্জার তার পাঁচ মাস বয়সী অপুষ্ট শিশু ইউসুফকে খাওয়াচ্ছেন, নাসের হাসপাতালের একটি ক্লিনিকে। তারিখ: বুধবার, ২১ মে ২০২৫; স্থান: খান ইউনুস, গাজা। (ছবি: আবদেল কারিম হানা, এপি)

একজন মা মাই নামলেহ জানান, তিনি তার ১৮ মাসের শিশুকে দুধ ছাড়াতে চেয়েছিলেন, কিন্তু নিজেই অপুষ্টিতে ভুগছেন বলে স্তন্যদুধও পাচ্ছেন না। ‘ওর ক্ষুধার কান্না থামাতে স্টার্চ গরম পানি দিয়ে মিশিয়ে দিই, বলি এটা দুধ’—চোখে অশ্রু নিয়ে বলেন তিনি।

অন্যদিকে, নুফ আল-আরজা, চার সন্তানের মা, জানিয়েছেন, এক কেজি লাল মসুরের ডালের জন্য তাকে পরিবারের অবশিষ্ট বেশ কিছু ‘সম্পদ’ বিক্রি করতে হয়েছে। সেই ডাল অনেক পানি দিয়ে রান্না করে টিকিয়ে রেখেছেন। তিনি নিজেই ২৩ কেজি ওজন হারিয়েছেন।

চোখে-মুখে হাহাকার, হৃদয়বিদারক ছবিতে বিশ্ব স্তব্ধ

নাসের হাসপাতালের বিছানায় কাতর মায়া, পাঁচ মাসের ইউসুফকে দুধ খাওয়াচ্ছেন মা, মুওয়াসির ক্যাম্পে চুলায় পানি দিয়ে পাতলা ডাল রান্না করছেন নুফ—এইসব দৃশ্য এখন গাজার প্রতিদিনের চিত্র।

আল-আরজা পরিবার তাবুর ভেতরে লাল ডালের পাতলা স্যুপ খাচ্ছেন, যা তারা অনেক পানি মিশিয়ে রান্না করেছেন যেন বেশি দিন চলে। স্থান: মুওয়াসি, খান ইউনুস, গাজা; তারিখ: ২১ মে ২০২৫। (ছবি: আবদেল কারিম হানা, এপি)

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে, ‘গাজায় এখনই অনাহারে মৃত্যু শুরু হয়েছে। যদি অবরোধ না তোলা হয়, এই দুর্যোগ ধ্বংসাত্মক পর্যায়ে পৌঁছাবে।’

সূত্র: এপি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews