বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সফল হবে।
আজ শনিবার অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বর্তমান রাজনীতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার ড. ইউনূসের নেতৃত্বে সফল হবে। মানুষ তাদের পেছনে আছে। কিন্তু, ওনাকে যারা বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে, এখনো সময় আছে লাগাম টেনে ধরুন। রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ বানানোর চেষ্টা করবেন না।
উপদেষ্টাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যা ইচ্ছে তা করছেন। মনে হচ্ছে, এটা আপনাদের পৈতৃক সম্পত্তি। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে কে যাবে আসবে, আপনারা সিদ্ধান্ত নিবেন, মনে হচ্ছে জনগণের কোনো দায় নেই। যেমনটা পতিত স্বৈরাচার করতো। কিন্তু, আপনারা এ সমস্ত দায় ড. ইউনূস স্যারের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন। ড. ইউনূসকে বিতর্কিত করার জন্য উপদেষ্টা কাউন্সিলের অনেক সদস্য জড়িত।
তিনি আরো বলেন, অতীতকে আপনি ভুলে যাবেন না। প্রথমে বয়ান দেয়ার চেষ্টা করলেন যে ৩৬ জুলাই বা ৫ আগস্ট না কি দ্বিতীয় জন্ম। এসব কথা বলার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ‘৪৭ যদি না হতো ‘৭১ পেতেন না, ‘৭১ না হলে ‘২৪ হতো কি না বিরাট বড় প্রশ্ন। কাজেই মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা করবেন না। যার যতটুকু অবদান, সেটাকে স্বীকার করার মধ্যেই সত্যিকার অর্থে বীরত্ব আছে। আপনি যে দেশের ভালো চান, সেটি প্রমাণ করেন। আর যদি এককভাবে কিছু করেন, তাহলে পতিত স্বৈরাচার সরকারের মতো অবস্থা আপনাদেরও হতে পারে।
‘কেউ কেউ বলেন, আমরা কি নির্বাচন দেয়ার জন্য উপদেষ্টা হয়েছি! ৩৫ জুলাইয়ের আগে তো আপনাদের রাস্তায় দেখা যায়নি। গত ১৮ বছর বাংলাদেশের মানুষের ওপর যে নির্যাতন, গুম-খুন করা হয়েছে, আপনাদের দুয়েকজন বাদে কাউকে তো কোনোদিন একটা কলামও লিখতে দেখিনি। আপনারা বিদেশে ছিলেন আর এখন চেয়ার নিয়েছেন, এসি ঘরে থাকেন, পুলিশ নিয়ে চলেন। আর ভাবতে শুরু করেছেন যে আপনারাই আমাদের হর্তাকর্তা। এরকম চিন্তা করা ঠিক নয়।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ড. ইউনূস সাহেবকে যদি আমরা ধরি, উনি ৯৯.৯ আর আপনারা সবাই মিলে ০০১ পারসেন্ট। কেউ ড. ইউনূস হওয়ার চেষ্টা করবেন না। ড. ইউনূস নিজের মুখ দিয়ে এখনো কিছু বলেননি। ওনার প্রেস সেক্রেটারি বলেন, উপদেষ্টা বলেন, বিশেষ সহকারী বলেন, এরপরে কতক্ষণ পরে সেটি ডিলিট করে দেন। মনে হচ্ছে, আমরা একটা মগের মুল্লুকের মধ্যে আছি। এটা তো হতে পারে না।
এনসিপিকে উদ্দেশ করে জাহিদ হোসেন বলেন, আজকে কেন আন্দোলন হবে এই উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে। কারণ আপনারা আইন আদালতকে বিশ্বাস করেন না। আইন আদালত যখন আপনাদের পক্ষে থাকে, তখন আপনারা খুশি। আর যখন বিপক্ষে যায়, তখন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এটা কী! এগুলো তো শেখ হাসিনার মানসিকতা। সবসময় আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্র-জনতা মাঠে থাকে। পরে দেশের জনগণ সিদ্ধান্ত নেয়, কাদেরকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিবেন। কিন্তু এখানে এটা উল্টো হয়েছে। আপনারা নিজেদের ট্যাগ ধরে ফেলেছেন। আপনারা সকল কৃতিত্ব নিজেদের দাবি করেন। অন্য সবাইকে আপনারা অপমানিত করলেন।
এনসিপিকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। জুলাই-আগস্ট মাসে তারা সেটি প্রমাণ করেছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করতে গেলে আপনারা নিজেরাই বিতর্কিত হয়ে যাবেন।
তিনি বলেন, আপনাদের দাবি থাকতেই পারে। কিন্তু, রাত ১২ টার সময় ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যমুনা ঘেরাও করেন। দাবি করারও তো একটা সিস্টেম আছে। আপনারা মনে করেন, এই সরকার আপনাদের নিজের। অবশ্যই এর জন্য সরকারের কতিপয় ব্যক্তিও দায়ী। কারণ ওনারা কেউ উপদেষ্টা হয়েছেন এবং ক্ষমতা দেখাচ্ছেন। পতিত স্বৈরাচারও ক্ষমতা দেখিয়েছিল, কিন্তু টিকেনি।
অগ্নিসেনা সোশাল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তালুকদার জহিরুল হক তুহিনের সভাপতিত্বে এসময় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ আরো অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।