পায়ের চোট এবার বেশ ভোগাচ্ছিল। মাঠের বাইরে থাকতে হলো ছয় মাস। মনে হচ্ছিল, এবার বুঝি থামবেন কাজুয়োশি মিউরা। কিন্তু চোট আর বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ঠিকই আবার মাঠে ফিরলেন তিনি। নতুন মৌসুমে প্রথমবার মাঠে নেমে জাপানিদের প্রিয় ‘কিং কাজু’ জানিয়ে দিলেন, এখনই থামার কোনো ইচ্ছে তার নেই।

গত ফেব্রুয়ারিতে বয়স ৫৮ পূর্ণ হয়েছে মিউরার। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী পেশাদার ফুটবলারের তকমা তার সঙ্গে লেগে আছে অনেক দিন ধরেই। সেটিই আরও পোক্ত হয়েছে নতুন মৌসুমে পথচলা শুরুর পর। তার পেশাদার ক্যারিয়ারের ৪০তম মৌসুম এটি!

গত জুনে জাপানের চতুর্থ স্তরের ক্লাব সুজুকায় ধারে দেড় বছরের চুক্তি করেন মিউরা। তবে জানুয়ারিতে পায়ে চোট পাওয়ার পর থেকেই মাঠের বাইরে ছিলেন। জাপানি ফুটবল লিগ সিস্টেমের চতুর্থ ধাপ ‘জাপান ফুটবল লিগ’ শুরু হয়েছে গত মার্চে। কিন্তু চোটের কারণে বাইরেই ছিলেন মিউরা। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান হলো রোববার।

ইয়োকোহামার বিপক্ষে সুজুকার ২-১ গোলের জয়ে শেষ দিকে মাঠে নামানো হয় মিউরাকে।

অনেক দিন ধরেই তিনি স্রেফ বদলি হিসেবেই মাঠে নামে। মাঠে তার উপস্থিতি থাকে স্রেফ কয়েক মিনিটের। তবে এই বয়সে পেশাদার ফুটবল চালিয়ে যাচ্ছেন, এটাই ফুটবলবিশ্বের মহাবিস্ময়।

ম্যাচের পর জাপানি সংবাদ সংস্থা কিয়েদোকে এই ফরোয়ার্ড বলেছেন, এখান থেকে নতুন করে আরও এগিয়ে যেতে চান তিনি।

“আরও ম্যাচ খেলতে চাই আমি, নিজের মানসিকতা মেলে ধরতে চাই। সবার সমর্থন ও সহায়তায় ফিট হয়ে উঠে এই ম্যাচটি খেলতে পেরেছি। এখান থেকে আবার নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে চাই।”

মিউরার পেশাদার ক্যারিয়ারের শুরু সেই ১৯৮৬ সালে। ফুটবলের আঙিনা রাঙানোর আশা নিয়ে ১৫ বছর বয়সে জাপান থেকে ব্রাজিলে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। স্বপ্নের পথে ছুটে সান্তোসের হয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু।

সান্তোসের পর পালমেইরাস ও ব্রাজিলের বিভিন্ন ক্লাবে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত খেলে তিনি ফিরে আসেন নিজ দেশে। প্রথমবার ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে খেলার সুযোগ পান ১৯৯৪ সালে ইতালিয়ান ক্লাব জেনোয়ায়। পরে খেলেছেন ক্রোয়েশিয়ার দিনামো জাগরেবে। এছাড়া খেলেছেন অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালেও।

জাপানের জাতীয় দলে তার অভিষেক ১৯৯০ সালে। ১৯৯৪ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ১৩ ম্যাচ খেলে ১৩ গোল করেন তিনি। কিন্তু জাপান উতরাতে পারেনি বাছাইপর্ব। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আবার জ্বলে উঠে ১৪ গোল করেন তিনি। প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় জাপান। কিন্তু তাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে রাখা হয়নি। তাকে নিয়ে তখন বিতর্কের তোলপাড় পড়ে যায় জাপানে।

নব্বইয়ের দশকে জাপানের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফুটবলার ছিলেন তিনি। সেব সময়টাতেই ‘কিং কাজু’ নাম পেয়ে যান ভক্তদের কাছে।

দেশের হয়ে ৮৯ ম্যাচে ৫৫ গোল করেছেন তিনি, এখনও যা জাপানের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জাতীয় দলের জার্সিতে সবশেষ খেলেন তিনি ২০০০ সালে। ২৫ বছর পরও এখনও খেলে যাচ্ছেন পেশাদার ফুটবলে।

সবচেয়ে বেশি বয়সে পেশাদার ফুটবলে খেলার বিশ্বরেকর্ড গড়তে অবশ্য আরও অনেক বছর খেলতে হবে তাকে। ২০২০ সালের অক্টোবরে ৭৪ বছর ৩৪৮ দিন বয়সে মাঠে নেমে রেকর্ডটি গড়েছেন মিশরের এজেলদিন মোহামেদ আলি বাহাদের।

মিউরার জন্য সেটি এখনও অনেক দূরের পথ। তবে তাকে নিয়ে শেষ কথা কিছু বলা কঠিন। গত এপ্রিলে ফিফা ডটকম-এ সাক্ষাৎকারে তেমন কিছুই বলেছিলেন তিনি।

“আমার বয়স যখন ৩৫ থেকে ৪০ ছিল, তখন নিজেকে বলতে শুরু করেছি, ‘এভাবে খেলা চালিয়ে যেতে পারব না।’ তবে খেলা ছেড়ে দেওয়ার ভাবনার চেয়ে ব্যাপারটি ছিল মূলত আরও বেশি কিছু করতে নিজেকে উজ্জীবিত করা। আমার শব্দভাণ্ডারে ‘অবসর’ শব্দটি নেই, এমন নয়। তবে এর চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, কখনও সেই তাড়না অনুভব করিনি।”



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews