• বিদেশী দায় মেটাতে চাপের মুখে সরকার
  • অর্থছাড় ২০.১২ শতাংশ কমলেও পরিশোধে ২৩.৩৫ শতাংশ চাপ
  • নতুন করে প্রতিশ্রুতিতে ৩০.৭৬ শতাংশ খরা

উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া প্রতিশ্রুতির ৯১৫ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ পাইপলাইনে পড়ে আছে। এতে অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে খরার চিত্র দিন দিন বাড়ছে। এমনকি নুতন করে প্রতিশ্রুতিও আগের তুলনায় কমে আসছে। ওদিকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে নেয়া বিদেশী ঋণের দায় মেটাতে সরকার বেশ চাপের মুখে। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) গত ১১ মাসে জুলাই থেকে মে পর্যন্ত উন্নয়ন সহযোগীরা আগের অর্থবছরের তুলনায় নতুন প্রতিশ্রুতি ৩০.৭৬ শতাংশ, অর্থবছর ছাড় ২০.১২ শতাংশ কম দিয়েছে। ফলে সরকারের দায় মেটাতে ২৩.৩৫ শতাংশ চাপ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য থেকে এসব বেরিয়ে এসেছে।

ইআরডির হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা পাবার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এখানে চলতি অর্থবছরের এগারো মাসে বাজেটে সহায়তা প্রাপ্তির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৯৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যেখানে আমেরিকা ও জাপান ১৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) ২২৫ কোটি ডলার, অ্যাডমিন ও মধ্যপ্রাচ্য ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার, জাতিসঙ্ঘ ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৯৫ কোটি ২০ লাখ ডলার, সমন্বয় এবং নর্ডিক ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, ইউরোপ থেকে ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, এশিয়া, জেইসি এবং এফঅ্যান্ডএফ থেকে ১৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার ধরা হয়েছে। গত অর্থবছর এটি ছিল ৭০২ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

প্রতিশ্রুতি ২৪৪ কোটি ডলার কমেছে

ক’দিন বাদেই বিদায় নেবে পুরাতন অর্থবছর। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা এসেছে ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৭৯২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। ফলে প্রতিশ্রুতি কমেছে ২৪৩ কোটি ৮৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা আগের তুলনায় ৩০.৭৬ শতাংশ। প্রতিশ্রুতিতে অনুদানের পরিমাণ ৩৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার এবং ঋণ ছিল ৫১০ কোটি ৭৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার। আগের সময়ে অনুদান ছিল ৫০ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ঋণ ছিল ৭৪১ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার ডলার।

অর্থছাড়ে ২০.১২ শতাংশ ভাটা

উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ে ভাটা পড়েছে। পাইপলাইনে ৯১৫ কোটি ডলারের বেশি পড়ে থাকলেও ছাড়ে তাদের আগ্রহ কম। অর্থবছরের এগারো মাসে ছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যার মধ্যে অনুদান হলো খাদ্যে সাড়ে তিন কোটি ডলার, প্রকল্প সহায়তা ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫২ হাজার ডলার। আর ঋণ ৫২২ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের অর্থবছর একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৭০২ কোটি ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সেখানে অনুদান ছিল ৪০ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং ঋণ ৬৬১ কোটি ৫৩ লাখ ৯০ হাজার ডলার। অনুদানের মধ্যে খাদ্য সহায়তা ছিল এক কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের তুলনায় অর্থ ছাড় ২০.১২ শতাংশ কম হয়েছে।

দায় পরিশোধে চাপ বেড়েছে

ইআরডির তথ্য বলছে, প্রতিদিন বিদেশী দেনার অর্থ পরিশোধে সরকারের চাপ বাড়ছেই। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর মে পর্যন্ত বাংলাদেশকে সুদ ও আসল বাবদ ৩৭৮ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার উন্নয়ন সহযোগীদেরকে পরিশোধ করতে হয়েছে, যার মধ্যে আসল ২৩৮ কোটি ৩৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ঋণের সুদ ১৪০ কোটি ১২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আগের বছর সুদাসলে পরিশোধ করা হয় মোট ৩০৬ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসল ছিল ১৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং সুদ ১২৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পরিশোধ ৭১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার বা ২৩.৩৫ শতাংশ বেড়েছে।

হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত ১১ মাসে (জুলাই-মে) দাতাদের প্রতিশ্রুতি ছিল ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে ছাড় হয়েছে ৫৬০ কোটি ৮১ লাখ ৭০ হাজার ডলার। এখানে আগের প্রতিশ্রুতির পাইপলাইনে জমা অর্থও রয়েছে। এই ছাড় চলতি সময়ের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাড়লেও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০.১২ শতাংশ কম, যা ১৪১ কোটি ২৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার। বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ১১ মাসে সংস্থাটি ৭০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দিলো ১৪৮ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বিশ^ব্যাংকের আইডিএ প্রতিশ্রুতির ২৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বিপরীতে দিয়েছে ১২৮ কোটি ৭৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার। এ ছাড়া এআইআইবি ১৬ কোটি ডলারের বিপরীতে ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার, জাপান ১২৫ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ডলারের বিপরীতে ৯৭ কোটি ৮১ লাখ ৬০ হাজার ডলার দিয়েছে। তবে ভারত, চায়না ও রাশিয়ার কোনো প্রতিশ্রুতি নাই। ভারত ছাড় করেছে ১৬ কোটি ৩১ লাখ ৯০ হাজার ডলার, চীন ছাড় করেছে ৪১ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, রাশিয়া ৬৭ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার ছাড় করেছে। ভারত, চীন ও রাশিয়া পুরনো প্রতিশ্রুতি থেকে অর্থ ছাড় করছে। অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার দেয়া ১০২ কোটি ৬২ লাখ ২০ হাজার ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছাড় করেছে ৪৭ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার ডলার।

ইআরডি বলছে, গত ১১ মাসে মোট ৭১ টি চুক্তি হয়েছে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা ও দেশের সাথে। যাতে অর্থের পরিমাণ হলো ৫৪৮ কোটি ৮৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এখানে ২১টি হরো ঋণ এবং ৫০টি হলো অনুদান চুক্তি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews